যুবকহৃদয়
একজন যুবকের পাশাপাশি ক্লান্তির কুসুম ফোটে
সকালে সূর্য ওঠার মতো
নিঃসঙ্গতার সঙ্গী সে
তার কিছু ভাল্লাগে না
গতকাল রাতে একবার আকাশের ঝারি থেকে
খুব খুব জল ঝরেছিল
ঢেউটিনচালে ভীষণ বৃষ্টিনৃত্যের ময়ূরী পেখম
মেলে রিমঝিম
হীরকদ্যুতির মতো স্মৃতির মায়ায় ভেজা
মায়ের কান্নাকাতর মুখ পড়েছিল মনে
দিগম্বর দশদিকভরা আকাশের পার্কে বসে
মেঘ চাঁদবাদাম চিবোয়
এই মাটি
এই জল
এই বেঁচে থাকা
দূরের গাঁগুলি সব একবার রজনীর এলোকেশে
ঢাকা পড়ে গেলে
নিশীথ রাত্রির নির্জনতা এসে যুবকের শিয়রে দাঁড়ায়
সান্ত¡নার সুকোমল হাত ধীরে রাখে অবিন্যস্ত চুলে
বিলি কাটে, কেটে কেটে যায়
নিঃসঙ্গ যুবক মনে মনে জীবনের সূর্যোদয় দেখে
স্বপ্নরথ চড়ে চলে যায় দূর দ্বীপদেশে
নারিকেলবনের ছায়ায় বসে সমুদ্রের সঙ্গে
সুচিত্রা-উত্তম
গল্প করে হাওয়া খায়
স্বৈরশাসনের স্মৃতি যায় ভুলে
মাথা রেখে রজনীর স্তনে কখন ঘুমিয়ে গেছে
অর্ধেক পৃথিবী
প্রাণের কপাট তার খোলা
লাল মোরগের পাখার বাহারী শাড়ি
উড়িয়ে আকাশে আঁচল
পেরিয়ে নক্শি কাঁথার মাঠ
সাজু মেয়েটির মতো নিদ্রা আসে
দুশ্চিন্তার কাঁটাতারে-ঘেরা বাড়ির ওপাশ থেকে
ফিরে ফিরে যায়
উজাগর যুবকের বুকে তোলে দুঃস্বপ্নের ঢেউ তোলপাড়
স্বপ্নের সুবর্ণ কণা দিয়ে ইচ্ছে ছিল বানাবে সে
জীবনের বাড়ি
চন্দনকাঠের বর্ণে লিখে দেবে বাড়ির ফটকে
‘পরাজয় তোমাকে বারণ’
যুবকের মন আজ বেবলা দিনের বিবর্ণ আকাশ
গভীর জঙ্গলে দলছুট একটি হরিণ
তার কিছু ভাল্লাগে না
একজন যুবকের মন ভালো নেই
জুলাই ’৮১
পরাস্ত হার্মাসিস্
হাঁটুর বলিষ্ট চাপে উপচে-ওঠা জ্বলন্ত যুগল
ফিটফাট কামিজের গলা গলে অরুণোদয়ের মতো উঁকি দেয়
ফিক করে হেসে ফেলে
সুন্দরী রাধার মতো ইশারায় বনান্তে নাগর ডাকে
কী করে ফেরাই এমন আহ্বান
যৌবনের পাগলামিকে ঠেকাই
কৈশোরে গাছের মগডালে চড়ে
পাখির বাসা তছনছ করার ঘটনা মনে পড়ে
সত্যি সহজ জীবন তখন বিখ্যাত ছিল
মাঝেমধ্যে ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তুমি বুঝে ফেলো
শ্বেতাভ দু’গ-ে গোলাপের লাল জেগে ওঠে
অতল তলা থেকে সকালে সূর্য ওঠার মতো
বিখ্যাত হয়ে ওঠে তোমার স্বাভাবিক সৌন্দর্য
মনে হয় তখন তুমিই ক্লিওপেট্রা
প্রতিদিন এই দৃশ্য তিনবার দেখি
প্রতিদিন তিনবার তুমি গুহাবাসী রমণীর গন্ধ বাতাসে ছড়াও
তিনবার আদিম মানুষ হই
তুমি হয়ে ওঠো আদিম নারীর মতো
আমাদের চারদিকে নির্জন দিগন্তে নতজানু অসীম আকাশ
পদতলে পরিচিত পথের লিকির নেই
সুবিখ্যাত ঘাসে-ঢাকা মাটি
যৌবনের জোয়ার উদ্দাম হয় অমাবস্যা পূর্ণিমায় উথালপাথাল
রক্তে সঙ্গোপনে উদ্দামতা জাগে
জলবতী জলে জাগে অঙ্গনে বাঁধার স্বপ্নে বালুচর
বাউরি বাতাস সারা চরটাকে স্পর্শ করে আলতো হাতে
লারেলাল একটা শাড়ির আঁচল ধরে টানে
আমার সমস্ত স্মৃতি বাতাসে সেই শাড়ির মতো
কাঁপতে কাঁপতে নিকেতন ছেড়ে যায়
আমি আবেদনময়ী এক রমণীর পাশে নির্বাসিত পড়ে থাকি
খাদ্য
বস্ত্র
টাকা
সুপ্রিয় বাবার অনাহারী মুখ
কিশোর রাজমিস্ত্রী ছমিরের কর্মঠ পেশল পেশী
ঋষির মতো সেই মহান লোকটা দার্শনিক
বস্তু থেকে চিন্তায় লাফাতো
আমার সহজ শিক্ষাগুরু
রাশিয়ায় জন্মেছিল একদা সেই-যে যোদ্ধা
পৃথিবীতে কোনোদিন আর এত বড় যোদ্ধা আসবে না
মৃত্যুর পরেও যে কেবল নিরন্তর যুদ্ধ করে
পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের সেনাপতি
আমি ভুলে যাই সব তাদের যুদ্ধের স্মৃতি ভুলে যাই
আমার গুরুর শিক্ষা মন্ত্রগুণ নষ্ট হয়ে যায়
নির্দেশ ভুলে যাই
সেনাপতির আদেশ মনে থাকে না
ক্ষয়িষ্ণু সামন্তের কম্পিত হাত
বিশ্বব্যাপী পুঁজির উত্থিত থাবা
রাজ্যগ্রাস
আধিপত্য
পুঁজির বিস্তার
কবলিত বাঙলাদেশ
সংগ্রামসমূহ
রাজনীতি
ভুলে যাই
ভুলে যাই হারানো মায়ের দুঃখময় স্মৃতির মর্মরশিল্প
সর্বহারার সব হরণ করতে তুমি ও-রকম বসো কেন
আমি রাজনীতির ভ-ামি ছেড়ে
রাজনীতি একদিন যে বৃক্ষ রোপণ করেছিল
হৃদয় থেকে সমূলে উপড়ে ফেলে দেবো
অর্থহীন নৈতিকতার প্রাচীন সেই মহীরুহ
আমি পিছিয়ে গিয়ে আদিম সাম্যবাদে
ফিরে এসে ঠাঁই নেব তোমার একান্ত কাছে
এমন ষ-া হবো না গু-া বলার সময়ও পাবে না
তখন আমি কি নষ্ট হবো
ভ্রষ্ট হার্মাসিস্ হব
মানুষ হার্মাসিস্?
অগাস্ট ’৮১