বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সদ্যপ্রয়াত পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুলকে সহসভাপতি করা হয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সরব। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত কমিটিতে দেখা গেছে গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল ৭ নং সহ সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছে। তার নামের পাশে লেখা মরহুম শব্দ!
২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার দুই বছর পর ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি অনুমোদনের পরপরই সরব তৃণমূল ও ভাচুর্য়াল মানুষজন। দাািয়ত্বশীল নেতাদের লুকোচুরির কারণে এবং গত ২২ ডিসেম্বরে অনুমোদিত কমিটির তালিকায় ব্রাকেটযুক্ত একজন মরহুম থাকায় বিষ্ময় সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জসহ চার জেলার কমিটি অনুমোদন লাভ করেছে বলা হলেও অনুমোদিত কপি প্রদর্শণ করেননি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একই সময়ে মৌলভীবাজারসহ অন্য জেলার কমিটিগুলো দলীয় প্যাডে প্রকাশ করেন নেতৃবৃন্দ। গত শনিবার ঘোষণা দিয়েও কমিটির অনুমোদিত কপি প্রকাশ করেননি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর রহমান। তাছাড়া এই কমিটিতে একাধিক পরিবারের ভাই, বাবা-ছেলে-মেয়েসহ স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। সাবেক তারকা ছাত্রনেতাদের বদলে অখ্যাতসহ প্রবাসীদেরও পদ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। সৃষ্টি হয়েছে হাস্যরসের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আওয়ামী লীগের দলীয় প্যাডে শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত কমিটিতে দেখা যায় অনুমোদন লাভ করেছে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর। ওই কমিটির ৭ নং সহ সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুলের নামের পাশে বন্দনীযুক্ত ‘মরহুম’ লেখা রয়েছে। তিনি মারা গেছেন ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তৃণমুল নেতাকর্মীদের অভিযোগ ‘মরহুম’ লেখা নামের কমিটিতে শেখ হাসিনা কখনো স্বাক্ষর করার কথা নয়। অনুমোদিত কমিটি স্থানীয় দায়িত্বশীলরা প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে প্রতারণা করছেন বলে তাদের অভিযোগ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই কমিটি শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দেয়। ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ, বাসদ ও বাকশালের সাবেক ছাত্রনেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করে ছাত্রলীগের তারকা নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে স্থান পাননি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দুঃসময়ের জালাল জাহাঙ্গীর পরিষদের তারকা ছাত্রনেতারা। তাদেরকে ইচ্ছেকৃতভাবে মাইনাস করে জাসদ বাসদ ও ছাত্র ইউনিয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ।
জেলা ছাত্র লীগের সাবেক তারকা নেতা মতিউর রহমান পীর, মানিক লাল দে, আমির হোসেন রেজা, নবনী কান্ত দাস, আজহারুল ইসলাম শিপার, জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু, আক্তারুজ্জামান আহমদ সেলিম, তনুজ কান্তি দে, সরকারি কলেজের ভিপি ও নির্যাতিত ছাত্রলীগ নেতা মনীষ কান্তি দে মিন্টু। এই কমিটিতে স্থান হয়নি শেখ হাসিনার দুঃসময়ে জালাল-জাহাঙ্গীর পরিষদের কোন ছাত্র লীগ নেতার।
তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুর রহমান কুবাদ বলেন, এই কমিটি একটি পারিবারিক কমিটি। বাপ-বেটা ভাই-ভাইয়ের কমিটি। আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের বাদ দেওঢা হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনার বিশ্বস্থ নেতাকমর্ীিদের। তিনি বলেন, তবে এই কমিটিতে প্রয়াত মেয়র আয়ূব বখত জগলুলকে মরহুম লিখে সভাপতি রাখায় নানা সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এটা শেখ হাসিনা অনুমোদিত আসল কমিটি কি না তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি জীতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু বলেন, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার দুঃসময়ে ছিলাম। সুবিধাভোগী নেতারা যখন শেখ হাসিনার সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছিলেন আমরা তখন তার পক্ষে জালাল-জাহাঙ্গীর পরিষদের হয়ে নেত্রীর পাশে দাড়িয়েছিলাম। জেলা আওয়ামী লীগের এই কমিটিতে আমাদের কারও স্থান হয়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা ফোন ধরেননি।
নবগঠিত কমিটির দফতর সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী উজ্জ্বল বলেন, আমি এখনো অনুমোদিত কমিটি হাতে পাইনি। শুনেছি আমাকে দফতর সম্পাদক রাখা হেেছ।