হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় স্থানীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের হাতে জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক খান লাঞ্চিত হওয়ার প্রতিবাদে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনুষ্টিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে ২০ শিক্ষার্থীকে আহত করেছে তার সমর্থকরা। এসময় তারা জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ্য সহ-সভাপতি আলমগীর কবীরের বাসভবনেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদেরকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুরো উপজেলা সদরের মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়লে বাজারের ব্যাবসায়ীরা প্রায় ২ ঘন্টা তাদের দোকান-পাট বন্ধ রাখেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আকস্মিকভাবে তাদের উপর এ হামলার ঘটনাটি ঘটায়।
জানা গেছে, মহান স্বাধনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকে স্থানীয় জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। অনুষ্টানের ২য় পর্বে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়ার পরপরই অনুষ্টানের প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন হঠাৎ করে মঞ্চ থেকে নেমে বিদ্যালয়ের পাশের সড়কে দাঁড়িয়ে জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক খানকে মঞ্চ থেকে ডেকে এনে তাকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ্য সহ-সভাপতি আলমগীর কবীর বলেন, আমাদের এমপি সাহেব এমন একটি অনুষ্টান থেকে ডেকে এনে উপজেলার সুনামধন্য এ শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধানকে এভাবে লাঞ্চিত করেই তিনি ক্ষøান্ত হননি। আজ তিনি তাঁর লালিত সন্ত্রসীদের দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে তাদেরকে আহত করাসহ তাঁর সন্ত্রাসীরা আমার বাসভবনে হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ ভেতরে থাকা সকল আসবাবপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আমি এ ধরনের নেক্কারজনক ঘটনার নিন্দাসহ এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উপজেলার সুনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধান শিক্ষককে একজন সাংসদ এভাবে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করাসহ তাঁরই ইশারায় আজ সন্ত্রাসীরা ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলা চালানো ও আমাদের সিনিয়র সহ-সভাপতির বাসভবনে ভাংচুর করাটা খুবই দুঃখজনক। এমপি সাহেব ও তাঁর লোকজনের এ ধরনের কর্মকান্ডে এলাকাবাসীর কাছে আমাদেরকে দলীয়ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। এমনকি এলাকায় তাঁর এ ধরনের কর্মকান্ড অব্যাহত থাকলে আগামী নির্বাচনে জনগণ আমাদের প্রতি মুখ পিরিয়ে নেবে।
আওয়ামীলীগ নেতার বাসভবনে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে স্বীকার করে ধর্মপাশা থানার ওসি সুরঞ্জিত তালুকদার বলেন, এটি সম্পূর্ণভাবে একটি রাজনৈতিক বিষয়। তবে আমরা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছি এবং এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন খন্দকার বলেন, এ বিষয়টি দ্রুত মীমাংসা করার জন্য আজ বিকেলেই উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে একটি মিটিংয়ের আহবান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি ওই প্রধান শিক্ষককে ডেকে এন শুধু বিদ্যালয়ের মাঠটি নষ্ট করে কেন্টিনটি নির্মাণ না করার জন্য তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেছি। আমি তাকে কোনো ধরনের লাঞ্চিত করিনি এবং আজকের ঘটনা সম্পর্কেও আমি কিছুই জানিনা।