সাইফ উল্লাহ::
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় ভাটিবাংলার বৃহৎ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন হাওরপারের ধামাইল (হাপাধার)এর উদ্যোগে হাওর ভাবনা বিষয়ক এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার মধ্যনগর থানায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্বে করেন হাপাধার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সজল কান্তি সরকার। অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক বিমান তালুকদার, যুগ্ম সম্পাদক গোপেশ সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক অসিম সরকার, জাহাঙ্গীর আহমেদ, সুমন সরকার, মঈন, মাহবুব আলম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, চলতি বৈশাখী ফসল ঘরে উঠানোর পর আবহমান হাওর বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি ধামাইল গান নিয়ে হাওর পারের যে কোন স্থানে বৃহৎ পরিসরে উৎসবের আয়োজন করা হবে। এতে প্রস্তুতি মূলক ব্যবস্থা এখন থেকেই নেয়া হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। এছাড়াও সভায় হাওর সমস্যা নিরসনে আরো কয়েকটি দাবি সরকারের কাছে আবেদন হিসেবে উপস্থাপন করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এসব হাওর দাবীর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য দুটি দাবি হল হাওর জনপদের জেলা ও উপজেলা সদর থেকে দূরবর্তী দূর্গম অঞ্চলে হাওর পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা ও লোক সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত হাওর এলাকায় সাধারণ জন মানুষের বিনোদনের জন্য সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা ঘর হিসেবে হাওর কমপ্লেক্স স্থাপন করা। এব্যাপারে হাপাধার কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক বিমান তালুকদার জানান, এগুলো হল হাওর অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত সাধারন জন মানুষের প্রাণের দাবি। আমরা আশা করছি হাওর বান্ধব সরকার এই দাবি গুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। উল্লেখ্য যে, হাপাধা নামক সংগঠনটি দীর্ঘদিন যাবৎ হাওর সংস্কৃতি ও এর সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করে আসছে। গেল বছর অকাল বন্যায় একমাত্র বোরো ফসল বিনষ্ট হলে এই সংগঠনের কর্মীরা ছুটে গেছেন হাওর বাসীদের কাছে। সমবেদনা জানিয়ে সমস্যা সমাধানে গ্রামে গ্রামে গিয়ে হতাশায় বিধ্বস্ত কৃষকদের নিয়ে করনীয় বিষয়ক উঠান বৈঠক করেছেন। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানার চার ইউনিয়নে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের মাঝে নানা প্রকার সবব্জিবীজ বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। চার ইউনিয়নে সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে খাতা কলমসহ শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। হাপাধার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সজল কান্তি সরকার জানান, আমরা দীর্ঘ দিন থেকে হাওরবাসীর জীবন মান উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন হিসেবে হাওর বিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় করার দাবি জানিয়ে আসছি। হাওরের জন্য আলাদা বাজেট ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছি। হাওর অঞ্চলের দূর্গম এলাকার লোকজন চরম নিরাপত্তা হীনতায় থাকেন। সে জন্য হাওর এলাকার জন্য প্রযোজ্য হাওর পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন অত্যাবশ্যক। এক সময় হাওরাঞ্চল লোকসংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। কিন্তু অভাব অনটনের তাড়নায় ও চর্চা না থাকায় ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে চলেছে। হাজার বছরের লালিত এই জীবন সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে হলে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা থেকে একে মুক্ত রাখা দরকার। সেজন্য মূলধারার এই সংস্কৃতির চর্চা ও বিশুদ্ধ বিনোদনের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাওর কমপ্লেক্স স্থাপন করা উচিৎ। আমরা হাওরবাসীর এসব দাবি দাওয়া সরকারের কাছে তুলে ধরার জন্য গঠনমূলক আবেদন জানানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।##