শাহরিয়ার বিপ্লব:
যে কোন সংস্কার মানেই আধুনিকায়ন, যুগোপযোগী, প্রগতিশীল চিন্তার বাস্তবায়ন।
সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার জরুরী। কিন্তু তার মানে কোটাবিলুপ্তি তা তো হতে পারে না। রাষ্ট্র শুধু সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর নয়। সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত,পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীরও।
কোটা সংস্কারের পথে সরকার অলরেডি এগুচ্ছেন। গত ৬ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারী করেছেন কোটার পদগুলু সাধারনদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া হবে।
এখন প্রশ্ন হলো মেধাবীর সংজ্ঞা কি? এটা কি আপেক্ষিক নয়? অনেক ছাত্রদের দেখেছি মাধ্যমিক পর্যন্ত ব্যাকবেঞ্চার হয়েও ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। আবার উচ্চ মাধ্যমিকে স্ট্যান্ড করা ছাত্রকেও দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেরাও একটি আরেকটিকে বৈষম্য করে। আমাদের সময় কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদ্রাসা বলা হতো। আবার একই বিশ্ববিদ্যালয়য়ের একই লেভেলের একাডেমিক রেজাল্ট করে কেউ বিসিএস হয় কেউ প্রাইমারীতে যেতে পারে না। আমার এক বন্ধু আমার সাথে সার্জেন্ট পরীক্ষায় ফেইল করে সারারাত কান্নাকাটি করছে। পরের বছর বিসিএস কোয়ালিফাই করে আজ সে ডি আই জি। আমার আরেক বোন আছে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করেও বিসিএস সহ কোন চাকুরী প্রার্থীই হয় নি। এরকম হাজার হাজার উদাহরণ আছে। ৬০ এর দশকে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হওয়া ছাত্রদের একটা বড় অংশই সিএসপি পরীক্ষায় অংশই নেননি। তারা দেশ ও জাতীগঠনের অন্যান্য পেশায় ও গবেষনায় নিয়োজিত হতেন। তারা কি তবে মেধাবী ছিলেন না। এখনো যারা আই এস এস বিতে কোয়ালিফাই করেন, তাদের মেধা তো প্রশ্নাতীত। তারা তো মাল্টিটেলেন্টেড।
যেটা জানা দরকার তা হলো বিসিএস সহ সকল পরীক্ষায় প্রাথমিক যোগ্যতা বা লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত যাচাই করা হয় একটা লেভেল মেধা দিয়েই। তারপর ঐ লেভেল থেকে কোটাগুলি পূরন করা হয়।
যে কথাটা বলতে চাই, আমরা যদি ধরেই নেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মেধাবীদের ফ্যাক্টরি। তাহলে রাষ্ট্র কত টাকা সাবসিডি দেয় এই মেধাউৎপাদনে। রাষ্ট্র সাবসিডি দেয় কি শুধু চাকুরীজীবী তৈরি করার জন্যে? যারা সরকারি অফিসগুলিতে বসে জনগনকে অধীনস্থ মনে করেন। অনৈতিক বা দূর্নিতীর কথা নাই বা বললাম। সরকারি একই অফিসের এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল যেতে এক মাস লাগবে। রাষ্ট্রের বেতনভুক কর্মচারীকে রাষ্ট্রের মালিক যদি স্যার ডাকতে হয়, এমন মেধাবী সন্তান তো রাষ্ট্র চায় না।
সব মেধাবীরা যদি রাষ্ট্রের চাকর হতে চায় তাহলে সুশীল নাগরিক, শিক্ষক, প্রফেসর, বিজ্ঞানী, স্থপতি, শিল্পী, সাহিত্যিক, গবেষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, এমপি, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, নির্মাতা, চলচ্চিত্রকার কে হবেন?
আজকের যুগে মেধাবী(!) রা কেন শুধু বিসিএস হতে চায়? বিসিএস এর মধ্যে আবার এডমিন, পুলিশ, ট্যাক্স, কাস্টমস হতে চায়, এই কারনটি বিশ্লেষণ করতে হবে। কি এমন বৈষম্য আছে অন্যান্য চাকুরীজীবী বা ক্যাডারদের সাথে? কেন অন্যান্য চাকুরী বা ক্যাডার পেয়েও তারা খুশী নয়? আমার জানামতে অনেকেই বিসিএস কোয়ালিফাই করেও পরেরবার পরীক্ষা দিচ্ছে মনমতো ক্যাডার পাচ্ছেন না বলে।
বৈষম্য দূর করার আন্দোলন করতে হলে এই বিষয়গুলি ভাবতে হবে আগে। এক ক্যাডারের সাথে অন্য ক্যাডারের বৈষম্য দূর করতে হবে। কারন যারা আন্দোলন করছেন সবাই কিন্তু বিসিএস হবেন না। কোটা বাতিল করলেও সবাই চাহিদামত ক্যাডার পাবেন না।
হতাশা থাকবেই জীবনভর।