স্টাফ রিপোর্টার::
তাহিরপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হাবিব সরোয়ার আজাদ ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ করে বাড়িতে নিয়ে পিটিয়েছে এলাকার বিতর্কিত যুবলীগ নেতা মাসুক মিয়া ও তার ক্যাডাররা। পরে তাকে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছেন সুনামগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ। নিরপরাধ এক সাংবাদিককে নির্যাতন এবং ইয়াবা দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ায় এলাকাবাসীও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। জানা গেছে এখনো আজাদকে থানায় আটকে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের উর্ধ¦ত কর্তৃপক্ষ সহকারি পুলিশ সুপার হাবিবুল্লাহ মজুমদারকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
সাংবাদিক আজাদের পারিবার, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বাদাঘাট বাজারের মেইন রোডে মানিক মিয়ার ফ্লেক্সিলোডের দোকানের পাশে ছিলেন হাবিব সরোয়ার আজাদ। এসময় বাদাঘাট এলাকার চিহ্নিত অপরাধী, দখল ও সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত উত্তর বড়দল ইউপির যুবলীগের আহ্বায়ক মাসুক তার সহযোগী পৈলনপুর গ্রামের ফারুক মিয়া, হযরত আলী, ইকবাল হোসেনসহ ১০/১২জন ক্যাডার দিয়ে আজাদকে ধরে নিয়ে যায় তার বাড়িতে। সেখানে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এসময় স্থানীয় জনতা ও তাৎক্ষণিক বাদাঘাট পুলিশ ও তাহিরপুর পুলিশকে বিষয়টি অবগত করলে পুলিশ নিরব ভূমিতা পালন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সুযোগে বিতর্কিত মাসুক মিয়া কৌশলে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল চরগাও রহিছ মিয়ার বাড়ীর বাঁশঝারের পিছনের রাস্তাার পার্শে নিয়ে গিয়ে আজাদকে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
জানা গেছে, আজাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর ও বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সাইদুর রহমান, এএসআই পিযোষ দাসকে মাসুক মিয়াসহ তার লোকজন ধরে নিয়ে গেছে বলে সাথে সাথে জানানো হয়। স্থানীয় পুলিশ বিষয়টি আমলে না নিয়ে উল্টো আজাদকে বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পে আটকে রাখে। অপরদিকে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ঘটনার বিষয়ে তাৎক্ষণিক তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর ও বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সাইদুর রহমান, এএসআই পিযুষ দাসের মোবাবাইলে কয়েক দফা ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ও উত্তর বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম জানান, ‘স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী মাসুক জনসম্মুখে সাংবাদিক আজাদকে বাদাঘাট বাজার থেকে ধরে নিয়ে তার বাড়িতে যান। মাসুক মিয়ার সাথে পূর্ব শত্রুতা থাকায় সাংবাদিক আজাদকে পরে পুলিশে দেয়া হয়। তারা বলেন, ঘটনার সাথে সাথেই স্থানীয় মানুষ আমাদেরকে জানিয়েছেন আজাদকে ধরে নিয়ে গেছে মাসুকের লোকজন। তারা আরো জানান, সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই আজাদকে ধরে নির্যাতন পরে ইয়াবা দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দুই জনপ্রতিনিধি এ ঘটনায় নিন্দা জানান।
হাবিব সরোয়ার আজাদ দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক যুগান্তরসহ স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় স্থানীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং তার আশির্বাদপুষ্টদেরসহ তাহিরপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ ও তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে সংবাদ পরিবেশন করে আসছিল বলে তার পরিবার জানিয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা এর আগে উপজেলাবাসী দেখেনি। একজন সাংবদিক কে প্রকাশ্যে বাজার থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনায় এলাকার স্থানীয় সাধারণ মানুষ আতংকিত। তিনি বলেন, ঘটনার সময়ে স্থানীয় পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত দাবি করেন।
তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর বলেন, মাসুক ধরে দেয়নি। এলাকার মানুষ ধরে দিয়েছে। যেহেতু এর আগে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ ছিলনা সেহেতু পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করছে। সাংবাদিক এখনো থানায় আমাদের হেফাজতে আছে।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে বাদাঘাট বাজারের হতদরিদ্র ক্ষুদে ব্যবসায়ী মানিক মিয়াকে শালিসে চোর সাব্যস্ত করে তার মুখে বিষ ঢেলে মাসুক মিয়ার নির্দেশে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ছিল। এ ঘটনায় মামলা হলেও পরে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। মাসুক মিয়া বাদাঘাট বাজারে বণিক সমিতির নামে চাঁদাবাজি, যাদুকাটা নদীতে চাদাবাজিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত।