স্টাফ রিপোর্টার::
জেলা প্রশাসনের পর এবার পুলিশ প্রশাসনও জেলার বালু ও পাথর মহালে নিয়োজিত শ্রমিকদের হাওরে ধান কাটার আহ্বান জানিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সদর থানার ওসি (তদন্ত) মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল নৌযোগে সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধোপাজান বালু মহালে এই প্রচারণা চালায়। এর আগে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম গত ১৭ এপ্রিল সুনামগঞ্জের অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত সকল শ্রমিকদের হাওরে এসে ধান কাটার জন্য লিখিত আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে শ্রমিকদের হাওরে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। এদিকে গত সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে দ্রুত ধান কাটার নির্দেশনা দিয়েছে। এ ঘোষণায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষক।
মঙ্গলবার দুপুরে সদর থানার ওসি মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি সীমান্ত নদী চলতি ও ধোপাজান বালু পাথর মহালে নৌযোগে প্রচারণা শুরু করে। তারা বিভিন্ন পয়েন্টে নদীতে বালু-পাথর আহরণে নিয়োজিত শ্রমিকদের জড়ো করে সুনামগঞ্জ জেলার বৃহত্তর স্বার্থে কয়েকদিন বালু পাথর আহরণ বন্ধ রেখে হাওরে ধান কাটার আহ্বান জানান। সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খানের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ শ্রমিকদের এই আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে এ পর্যন্ত হাওরের প্রায় ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। শ্রমিকের অভাবে অনেক কৃষকের পাকা ধান ক্ষেতে পড়ে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় দ্রুত ধান কাটার জন্য তারা মাইকিং নির্দেশনা দিয়েছে। তবে কৃষকরা শ্রমিক না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন।
উল্লেখ্য গত বছর পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সুনামগঞ্জের সবগুলো হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে নিঃস্ব করেছিল এই অঞ্চলের কৃষককে। নিঃস্ব কৃষককে বাচাতে সরকার গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে এক বছরের প্রণোদনা গ্রহণ করে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় দুই লাখ কৃষক পরিবারেেক প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫শ টাকা প্রদান করে আসছে। তাছাড়া মওসুমের শুরুতে বিনামূলে বীজসহ নগদ ১হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছিল দেড় লাখ কৃষক পরিবারকে। এবার ভালো ফলন হলেও ধান পাকার শুরুতে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন হাওরে। তবে এখন আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং নিয়মিত বৃষ্টি হওয়ায় ভাইরাসজনিক এই ব্লাস্ট রোগ কমেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
কৃষকরা জানান, এক সময় দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বৈশাখ মাসে হাওরের ধান কাটতে ভাগে ধান কাটতে ‘ভাগালু’ বা ‘বেপারি’ আসতেন। তারা মাসব্যাপী ধান কেটে লাভবান হতেন। কিন্তু তাদের এলাকার আর্ত সামাজিক উন্নয়ন ঘটায় গত দুই দশক ধরে তারা এখন আর হাওরে ধান কাটতে আসছেন না। ফলে বৈশাখে হাওরের ধান শ্রমিকের অভাবে ঝূকিতে থাকে। প্রতি বছরই এ কারণে হাওরের পাকা ধানের একটা অংশ পাহাড়ি ঢল ও শিলা বৃষ্টিতে শ্রমিকের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
সদর থানার ওসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, গত বছর ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল সুনামগঞ্জের কৃষক। হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় জাতীয়ভাবেই চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। এবার ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে ঝূকিতে আছে হাওরে পাকা ধান। এ কারণে আমাদের এসপি স্যার আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন বালু ও পাথর মহালের শ্রমিকদের কয়েকদিন কাজ বন্ধ রেখে হাওরে এসে ধান কাটার আহ্বান জানাতে। স্যারের নির্দেশে আমরা আজ নদীতে এই প্রচার করেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে হাওরের ফসল দ্রুত কাটতে আমরা কৃষকদের আহ্বান জানিয়েছি।