অনলাইন::
মাদকের বিরুদ্ধে গত ৪ মে থেকে সারাদেশে র্যাবের বিশেষ অভিযান চলছে জানিয়ে গত ১৪ মে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে মাদক বিরোধী এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, ‘কারো কাছে মাদক থাকলে র্যাব ক্যাম্পের পাশে ফেলে যান। অন্যথায় মাদক প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থায় যত প্রক্রিয়া আছে তার সব ব্যবহার করা হবে।’
র্যাব প্রধানের এই কঠোর হুশিয়ারিকে উপেক্ষা করে যারা দেদারসে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল এবং র্যাবের সাথে সরাসরি বিবাদে জড়িয়ে ছিল। তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থানে গেলে চলতি সপ্তাহে বরিশাল, ফেনী, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, যশোর ও টাঙ্গাইলে ছয়জন মাদক ব্যবসায়ী ও কালোবাজারি র্যাবের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হয়। নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসা এবং পাচারের সাথে জড়িত এবং চিহ্নিত অপরাধী। তাদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া এই অভিযানে সারাদেশে ১ হাজার ৪১৫ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং ৩৮১ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা যায়।
কিন্তু মাদকের করাল গ্রাসে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত যুব সমাজকে রক্ষার জন্য পরিচালিত মাদক বিরোধী এই অভিযানকে যখন সারা দেশব্যাপী সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজ সাধুবাদ জানাতে শুরু করে। ঠিক সেই মূহুর্তে বিএনপির পক্ষ হতে এই অভিযানকেও রাজনৈতিক রঙ মাখিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে।
দেশব্যাপী ধৃত ও নিহত মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে অতি সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযোগ করেন যে “আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কথিত বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে সারা দেশব্যাপী বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে। তারা সাধারণ মানুষকে পিপড়ার মতো গুলি করে মারছে। ”
মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে রিজভীর এই বক্তব্যে সাধারণ মানুষ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় বইতে শুরু করে। অনেকেই বলছেন রিজভী সাহেবরা সব কিছুতেই রাজনীতি খুঁজতে গিয়েই নিজেদের দলকে প্রায় দেউলিয়া করে ফেলেছেন। নিজেদের অপরাধী কর্মীদের পক্ষ নিতে নিতে শেষ পর্যন্ত মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষেও সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানালেন? চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলা বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলের শোভা পায়?”
অনেকেই বলছেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে সারাদেশ মাদকে ছেয়ে গিয়েছিল এবং সেসময় বিএনপির অনেক নেতা কর্মীরাই ইয়াবাসহ নানান রকম মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে মরণ নেশা ইয়াবার প্রচলন শুরু হয়েছিল মূলত ঐ সময়। কথিত আছে যে তারেক রহমানের হাওয়া ভবন এর পৃষ্ঠপোষকতায়ই প্রথম বড় পরিসরে দেশে ইয়াবার ব্যবসা শুরু হয়েছিল।
সূত্রমতে, বিএনপি শাসনামলে যারা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিল তারাই এখনো অনেক এলাকায় মাদক ব্যবসার ক্ষেত্রে রাজত্ব করে যাচ্ছেন। অনেকে বলে থাকেন সারা দেশে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীই এখন রাজনীতির চাইতে এসব অবৈধ ব্যবসার দিকে নজর বেশী। তাই আন্দোলনের সময় তাদের রাজপথে পাওয়া যায় না।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা উচ্চারণ করে বলেন,মাদক এর পক্ষে যারা কাজ করবে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না। এই জাতিও তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবে না। তাই এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত অভিযান পরিচালনার নির্দেশ প্রদানের পর থেকে তথ্য মন্ত্রণালয় ১ মার্চ থেকে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী তথ্য প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। অাইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পাশাপাশি অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। বর্তমানে এ গতি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ জনসাধারণ কর্তৃক প্রশংসিত এই অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিএনপি মূলত নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলেই মনে করছেন সুশীল সমাজ।