:: হিরণ্ময় রায় ::
দেশে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কি হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখতে হবে কর্তৃপক্ষকে। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বছরের পাঠদানের যে চিত্র বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি, তাতে অাশাহত এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে আতংকিত হওয়ার কথা আমাদের। বছরের পুরো সময় জুড়ে এস. এস. সি পরীক্ষা, জে.এস.সি পরীক্ষা, বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ ছাড়াও সাধারণ ছুটি, কোন কোন জেলায় এইচ. এস. সি পরীক্ষার সেন্টার পড়ায় পাঠদান করা হয় খুবই কম দিন। এর উপর সরকারি বিভিন্ন দিবসে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া মিছিল বা অনুষ্ঠানে। এর ফলে পাঠ্যক্রম অনুসারে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল থেকে খুব কমই শিক্ষা পায়। ফলে পাঠ্যক্রম শেষ করতে যেয়ে শিক্ষার্থীদের নির্ভর করতে হয় প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং এর উপর। এক শ্রেণীর শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানো হতে মাসে আয় করছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। ফলে তাঁরা টাকা আয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে শ্রেণী কক্ষে পাঠদানের চেয়ে নিজের বাড়িতে কোচিং বা টিউশনের উপর জোর দিচ্ছেন। কারো কারো নৈতিকতার মান এতোটাই নষ্ট হয়েছে যে, পরীক্ষা পত্র মূল্যায়নে তাঁরা তাদের কাছে পড়ুয়াদের এগিয়ে রাখেন মর্মে জনশ্রুতি আছে। আর বিভ্রান্ত ও অসহায় অবিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং ও প্রাইভেট টিউটরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেন বছরের শুরু থেকেই। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান নয়, একজন ভাল শিক্ষকের ব্যাচে নিজের সন্তানকে ঢুকাতে গলদগর্ম হয়ে থাকেন অবিভাবকরা। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত না হওয়ায় যেভাবে ভুক্তভোগী রোগীদের ছুটতে প্রেসস্ক্রাইভ ক্লিনিকে, সেভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও হয়ে পড়েছে ভয়ানক নৈরাজ্যের শিকার। এটি অবশ্যই দেশে চলমান দূর্ণীতির একটি অন্যতম খাত, যেটি কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে না। এই নৈরাজ্যের ফলে একজন শিক্ষার্থী যেমন রাষ্ট্রপ্রদত্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি অনেক মেধাবী প্রজন্ম হারিয়ে যাচ্ছে এই শোষনের যাতাকলে। অনেকের হয়তো মনে হবে কিভাবে? তাহলে ভাবুন নিম্নমধ্যবিত্ত বা গরীব পরিবারের শিক্ষার্থীদের কথা, যাদের স্কুল ব্যতীত অন্য কোন উৎস হতে শিক্ষা নেবার আর্থিক সামর্থ্য নেই। যেখানে স্কুলেই তাদের পাঠ্যক্রম শেষ করার কথা, সেখানে বিভিন্ন ছুটি এবং শিক্ষকদের অনাগ্রহে তাদের পাঠ্যক্রম শেষ হয় না, ফলে মেধা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এক সময় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে বাধ্য হয়ে। এর মাধ্যমে একটি বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠি যেভাবে রাষ্ট্রের সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি রাষ্ট্রও হারাচ্ছে সম্ভাবনাময় মেধাবী প্রজন্মকে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে রাষ্ট্রকে মাধ্যমিক শিক্ষাসূচীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলতে হবে। বছরে পাঠদানের সময় বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষকদের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় এনে তাদের পাঠ্যক্রম নির্ধারণ করে দিয়ে তা শেষ করার বিষয়টি ক্লোজ মনিটিরং করে, এর উপর ভিত্তি করে তাদের বেতন বৃদ্ধি বা হ্রাস এবং প্রমোশন নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থদের চাকুরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। সক্ষম শিক্ষকদের প্রণোদনা দিয়ে পুরষ্কৃত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বিশেষ ইনক্রিমেন্ট দিয়ে উৎসাহিত করা যায়। উপজেলা,জেলা বা জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট শিক্ষক নির্বাচন করে আর্থিক মূল্যে পুরষ্কৃত করলে তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব সৃষ্টি হবে। তাছাড়া শ্রেষ্ট শিক্ষকদের সরকারি বিভিন্ন কমিটি বা ফোরামে সদস্য করে সম্মানিত করা যায়। আর বিভিন্ন পরীক্ষার কারনে যাতে পাঠদান বাধাগ্রস্থ না হয় তার জন্য সরকারের উদ্যোগে পৃথক পরীক্ষা সেন্টার গড়ে তোলতে হবে। যাতে বছর জুড়ে পাঠদান নির্বিঘ্ন হয়।