এইচ রায়:
জাতিসংঘের ইউএনডিপি ২০১৬ খ্রি. সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের মানব উন্নয়ন শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০১২ সাল থেকে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট’ কালে প্রবেশ করেছে। এটি চলবে ২০৩০ খ্রি. পর্যন্ত। এই সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠির (১৫-৬৪ বছর বয়সী) সংখ্যা ৩০% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭০% পৌছুবে। পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রে এধরণের সুযোগ আসে। যে রাষ্ট্র এই সময়টাকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পেরেছে আজকের বিশ্বে তারাই উন্নত রাষ্ট্র। স্বাধীনতা উত্তর বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র আজ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করেছে। উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে চাইলে আমাদের হাতে মোক্ষম বা কার্যকর সময় আছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ আর ১২ টি বছর। এই সময়ের মধ্যে দেশের বিদ্যমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৭০% কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে যথাযথ ভাবে প্রশিক্ষিত করে কাজে লাগাতে হবে। বর্তমানে এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে যেয়ে আমাদের সামনে রয়েছে গার্মেন্টস খাত, আইসিটি, প্রশিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানী খাত, আভ্যন্তরীন শিল্পখাতে প্রশিক্ষিত জনশক্তি যোগানসহ নানামূখী সেবাখাত। গার্মেন্টস ও আইসিটিসহ বিভিন্ন খাতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, চীন, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম। এরমধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায়ও ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাল চলছে। তাই এই সকল দেশগুলো প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকতে নানামূখী তৎপড়তা চালাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু কার্যক্রম আছে আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে “চেকবুক পলিসি” নিয়ে বিশ্বের অন্যমত অর্থনীতির দেশ চীন নব্য সাম্রাজ্যবাদী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার ভূ- সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করে চলছে। ইতিমধ্যে পূর্ব ইউরোপ, শ্রীলংকা, আফ্রিকার কিছু রাষ্ট্র এর কুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশও ভৌগলিক অবস্থানের জন্য চীনের পরিকল্পনায় গুরুত্বের সাথে অবস্থান করছে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হলে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না বিধায় চলছে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মূল হাতিয়ার হল এর কর্মক্ষম যুবশক্তি। এই যুবশক্তিকে নষ্ট করে দিতে পারলে, বাংলাদেশের উন্নয়ন থেমে যাবে। তাই কৌশলে চলছে মাদক নিয়ে ষড়যন্ত্র। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মায়ানমার চীনের অন্যতম বন্ধু। সেই মায়ানমার(বার্মা) থেকে অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হচ্ছে ইয়াবা, হেরোইনসহ ভয়াবহ সব মাদক। একই ভাবে ভারত থেকে আসছে ফেনসিডিল।
বর্তমানে ইয়াবার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে দেশের যুব সমাজ। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জাতির সম্ভাবনাময় যুব সমাজ। ফলে জাতির উন্নয়নের চাকা থমকে যাওয়ার চরম ঝুকির মধ্যে আছে।
দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় সত্তর লক্ষ মানুষ মাদকাসক্ত যা বিশ্বে মাদকারাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সপ্তম।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা স্তব্দ করে দেয়ার এই ষড়যন্ত্র সরকার অনুধাবন করে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করছে। দেশকে বাচাঁতে হলে যুদ্ধকালীন তৎপড়তায় অভিযান চালাতে হবে। কোন মার্সি দেখালে চলবে না। মাদক ব্যবসায়ী এবং দেশ বিরোধী রাষ্ট্রগুলোর টাকা খেয়ে বিভিন্ন এনজিও, দল, বুদ্ধিজীবী ও পত্রিকা মানবাধিকারের কথা তোলে এই অভিযান বন্ধ করতে চাইবে। কিন্তু দেশের ১৬ কোটি মানুষকে বাচাঁতে জাতির শরীরে গ্যাংগ্রিণ পরিণত হওয়া মাদক সন্ত্রাসীদের কেটে ফেলতে হবে নির্মম হাতে। কারণ ১৬ কোটি মানুষের মানবাধিকার প্রথম প্রাধিকার। মাদকের জন্য মানবাধিকার নয়।
বর্ডার সিল করার আর্থিক ও সামরিক সক্ষমতা অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত তাই দেশপ্রেমিক আইন শৃংখলাবাহিনীর অভিযান দেশ বাচাঁনোর জন্য। ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতির উপর চাপ ফেলার জন্য লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের এদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এর উপর মাদক দিয়ে চলছে দেশের বুনিয়াদি শক্তি ধ্বংস করার অপতৎপড়তা। কাজেই মাদকের সাথে আপোষ নয়, ঝযড়ি হড় সবৎপু ঃড় ঃযবস.
##
লেখক: কবি ও সংস্কৃতিকর্মী।