তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ::
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হাওর বেষ্টিত কাশীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে আসছে। এলাকায় বাতিঘর হিসেবে পরিচিত বিদ্যালয়টি পাকনার হাওরের পাড়ে জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। এ বছর জেলার শ্রেষ্ট প্রাথমিক স্কুলের স্বীকৃতি পেয়েছে বিদ্যালয়টি। ক্লাস শেষেও সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে রাত ১০টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এলাকাবাসী প্যারা শিক্ষক রেখে শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলে এভাবেই উদ্বুদ্ধ করছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টানা কয়েক বছর ধরে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্য দিয়েও বিদ্যালয়টি ভালো ফলাফল করছে। গেল বছর উপজেলার মধ্যে পিএসসিতে সর্বোচ্চ ফলাফল করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে। এবছরও ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। বিদ্যালয়টি শুধু পড়াশোনায় নয় খেলাধুলা, জ্ঞানচর্চাসহ নানাক্ষেত্রে উপজেলার মধ্যে অনন্য উদাহরন সৃষ্টি করেছে।
এলাকাবাসী ভালো ফলাফলের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর শতভাগ আন্তরিকতার কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে শিক্ষকরা এ কাজে অভিভাবকদের চেষ্টা ও এলাকাবাসীর সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন। তাছাড়া অভিভাকদের সচেতনতা এবং শিক্ষকদের কড়াকড়ির কারণে শিক্ষার্থীদেরও ক্লাসে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই।
জানা গেছে, কাশীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিনে নিয়মিত ক্লাস করে, সকাল-বিকেল-সন্ধ্যার পর সকলে একসাথে আবার ক্লাস রুমে পড়া আরম্ভ করে রাত দশটা পর্যন্ত পড়ালেখা করে। বিদ্যালয়ে ৮জন শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকসহ এলাকার মানুষের আন্তরিক চেষ্টার ফলে সন্ধ্যার পরে সকলে মিলে সন্ধ্যাকালীন ক্লাসের জন্য আলাদা ১৬ জন প্রাইভেট টিউটর রেখেছেন। সব মিলিয়ে পর পর দুবার উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্টান হয়েছে বিদ্যালয়টি। শুধু তাই নয় বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে শ্রেষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় হওয়ার কৃতিত্বও এই বিদ্যালয়টি অর্জন করেছে। গেল বছর এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেলার মধ্যে শ্রেষ্ট শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। এবছরের শেষ দিকে সরকারিভাবে ৭দিনের সফরে ইন্দোনেশিয়া যাবার কথা রয়েছে প্রধান শিক্ষকের।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে ৫ম শ্রেণীতে ৬৩ জন ভর্তি হয়ে সমাপনী পরিক্ষায় ৬২ জন অংশ নিয়ে ৬২ জনই কৃতকার্য হয়। ২০১২ সালে ৫ম শ্রেণীতে ৭৫ জন ভর্তি হয়ে সমাপনী পরিক্ষায় ৭৫ জন অংশ গ্রহন করে সকলেই পাশ করে। যার মধ্যে ৯ জন এ প্লাস পেয়েছে, টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে ৩ জন। ২০১৩ সালে ৯১ জন ভর্তি হয়ে ৮৫ জন সমাপনীতে অংশ নিয়ে ৮৪ জন কৃতকার্য হয়। এর মধ্যে ১৫ টি এ প্লাস ও ৬টি টেলেন্টপুল বৃত্তি। ২০১৪ সালে ৭৩ জন ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ৬৫ জন সমাপনীতে অংশ নিয়ে শতভাগ পাশ করে যার মধ্যে এ প্লাস পেয়েছে ১৩ জন, আর এক জন টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। ২০১৫ সালে ৫ম শ্রেণীতে ৬৬ জন ভর্তি হয়ে সমাপনীতে ৬৪ জন অংশ করে ৬৪ জনই পাশ করে যার মধ্যে ১৫ টি এ প্লাস, ১০ টি টেলেন্টপুল বৃত্তি।
বর্তমানে কাশীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৪৩ জন শিক্ষার্থী আছে। শিশু শ্রেণীতে ৪৪ জন, প্রথম শ্রেণীতে ১৭৫ জন, ২য় শ্রেণীতে ১৪২ জন, ৩য় শ্রেণীতে ১২৬ জন, ৪র্থ শ্রেণীতে ৮৭ জন, ৫ম শ্রেণীতে ৬৯ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।
তবে এত আনন্দ ও ভালো খবরের মধ্যে নিরানন্দের খবরও রয়েছে। জানা গেছে বিদ্যালয়ে যে শ্রেণি কক্ষ রয়েছে তাতে শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলান হয়না। তাই গাদাগাদি করেই পাঠ নিতে হচ্ছে তাদের।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, আমার বাবাও সারা জীবন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে সুনাম অর্জন করে গেছেন। আমিও চাই বাবার দেখানো পথে তার আদর্শকে কাজে লাগিয়ে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু করতে।
কাশীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক বলেণ, আমি যখন যতীন্দ্রপুরে ছিলাম সেখানেও ক্লাসের পরে সন্ধ্যাকালীন প্যারা শিক্ষক দিয়ে বাচ্চাদের পড়ানো হতো। এতে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমি ও আমার সকল শিক্ষকসহ এলাকাবাসী মিলে কাশীপুর বিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন পাঠদানের ব্যবস্থা করায় আমরা ভালো ফলাফল পাচ্ছি। ক্রমাগত আমাদের শিক্ষার্থীরা সুনাম বয়ে নিয়ে আসছে। তবে শিক্ষার্থী অনুপাতে ক্লাস রুমে জায়গা কম থাকায় আমাদের আরেকটি ভবন নির্মান জরুরি বলে তিনি জানান।
জামালগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নূরুল আলম ভুইয়া বলেন, পরপর দুবার জামালগঞ্জে কাশীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম হয়েছে। এবার জেলার মধ্যেও শ্রেষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় মনোনীত হয়েছে। এ বিদ্যালয়টি দিন দিন সবদিক দিয়ে ভালো করছে শিক্ষক অভিভাবকদের সচেতনতার কারণে।