রাজনীতি নিয়ে আমার ভাবতে ভালো লাগে। যে কোনো দেশের উন্নতি অগ্রতির মূলেই হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতির মানে আমি সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চাকেই বুঝাতে চাইছি। আমরা, আমরা মানে সমস্ত বাংলাদেশিরা এখনো সুষ্ঠু রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি সেটা চোখবুজে বলতে না পারলেও আমরা যে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি সেটা বলতে আমার কোনো দ্বিধাবোধ নেই। বাঙালি অনেক পুরোনো জাতি হলেও আমরা বাংলাদেশি হয়েছি মাত্র ৪৭ বছর। আমাদের আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আজকে আমার লেখার উদ্দেশ্য কিন্তু জাতীয় রাজনীতি নয়, স্থানীয় রাজনীতি। স্থানীয় তো বটেই বলতে পারেন একেবারে প্রান্তিক স্থানীয়। যখন একাদ্বশ দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলাম তখন আমাদের অর্থনীতি বইয়ে প্রান্তিন শব্দটার উপর বেশ আলোচনা হয়েছে। প্রান্তিক বিষয় নিয়ে তখন একটু ধারণা নেই। আমি অর্থনীতির বইয়ের ভাষায় প্রান্তিক নিয়ে লিখতে এখানে খাতা খোলিনি। আমার ভাষায় বলি: প্রান্তিক হচ্ছে একেবার গোড়ারস্তর। ‘ভেইজ লেবেল’। এখানটা যত বেশি শক্ত হবে পুরো অংশটা তত বেশি মজবুত হবে। আজকে স্থানীয় রাজনীতির প্রান্তিক স্তর নিয়ে দু’একটি কথা বলবার চেষ্টা করবো। তার আগে বলে নেই এই লেখাটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মতামত। একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আমাদের স্থানীয় এলাকা ঘুরে যা আমার কাছে যা মনে হয়েছে তারই একটি লিখিতরূপ।
সামনের ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে আমরা আরেকটি সংসদ নির্বাচন দেখার অপেক্ষায় এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন সরকার দল আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, জমিয়ত, জামাত ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ আরো নিবন্ধিত দলগুলো। যদিও বিএনপির মাথায় এখন নির্বাচন খেলা করে না, তাদের মাথায় এখন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবার নেশা। তবে, কে নির্বাচনে আসলো আর কে নির্বাচনে আসলো না তা দেখবে না সরকার। সরকারের ক্ষমতা থাকাকালীন সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এটা প্রায় সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের এখানে সরকারের দলের প্রস্তুতির অর্ধেক প্রস্তুতিতেও নয় বিএনপি। তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। সম্ভবত, সারা দেশে বিএনপির এমনই দশা। যদি দশা এমন হয়, তাহলে খুব সম্ভবত আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে লাভের লাভ কিছুই হবেনা বিএনপির। বেশ কিছুদিন আগে আমাদের পাগলা বাজারে বাতির আলীর চায়ের দোকানে বসে চা গিলছিলাম। একজন প্রবীণ মানুষ এসে বসলেন আমার কাছে। প্রবীণ মানে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময়ের কাহিনী তার ঠোঁটস্থ। নিজ চোখে দেখেছেন সবকিছু। আমাকে ‘ছেখারেখা’ চিনেন বোধহয়, আমিও। বললেন- ‘ভাতিজা কিতা বেটা, দ্যাশো ইলেকশন-বিলেকশন অইবোনি বুঝফাউ?’ আমি বললাম, ‘হবে চাচা, হবে তো। ইলেকশন কমিশন তো নির্বাচন দেওয়ার সকল প্রস্তুতি নিচ্ছেনই। ’ আবার প্রশ্ন করলেন, ‘বিএনপি ইবার আইবোনি? আমি কোনো সদুত্তর দিতে পারিনি। কারণ তাদের এখন কোনো প্রস্তুতি নেই। তবে- নির্বাচন যে তারা করবে তা এখনো অবদি দেশবাসী নিশ্চিত। আর বিএনপির এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা জরুরিও। না করলে বৃহৎ এ সংগঠনটি জনবিচ্ছিন্ন তো হবেনই তার উপর নিবন্ধন বাতিলের আশংকা থেকে যায়।¬ আর আওয়ামীলীগ তো সোনায় সোহাগা। আমাদের নির্বাচনি আসন সংখ্যা সুনামগঞ্জ-৩ আর সংসদীয় আসন-২২৬। আমাদের রাজনীতি মানে অনেক মানুষের পেশা। রাজনীতি মানে অনেকের টগবগে রক্ত। রাজনীতি মানে এখানে কারো কারো কমিটমেন্ট। কারো আবার ‘ধান্ধাও’। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ এ আসনে কেমন হবে কার অবস্থান তা নিয়ে উঠতি বয়সী তরুণ থেকে শুরু করে রাজনীতিক, অরাজনীতিক, বৃদ্ধসহ সকলেই মাতামাতি করেন। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো লক্ষণ। রাজনীতিকে অনেকে ঘৃণা করে, তা উচিৎ নয়। রাজনীতির চর্চা করা উচিৎ। অবশ্যই সুষ্ঠু চর্চা। চর্চা যত বেশি হবে স্থানীয় রাজনীতির ভিত্তিটা আরো শক্তিশালী হবে। সেটিই কাম্য।
সংসদ নির্বাচন অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। রাজনীতিকদের চেয়ে সাধারণের কাছে স্বপ্নের চেয়ে আরো বেশি বেশি কিছু। যদি সেটা ফলপ্রসু হয়। আমরা এই রাজনীতিকে ফলপ্রসু রাজনীতি হিসেবে দেখতে চাই। কারণ ফলপ্রসু রাজনীতি দেশের উন্নয়ন তরান্বিত করে। আমরা দেশের উন্নতি চাই। বিশেষ করে আমাদের এলাকার উন্নয়ন চাই। কারণ একজন গ্রিক দার্শনিক বলেছিলেন, ‘ব্যক্তির উন্নতি মানে রাষ্ট্রের উন্নতি’। আমরা যদি সে নিয়মে আমাদের এলাকার উন্নতি করতে পারি তাহলে অবশ্যই ধারাবাহিকভাবে দেশের উন্নতি হবেই। আমরা আগামী সংসদ নির্বাচনে কাকে ভোট দিবো তার হিসেব কষতে যদিও শুরু করিনি তবে দল কিন্তু সে হিসেব কষতে শুরু করে দিয়েছে কাকে দিয়ে এ আসনে জয় চিনিয়ে আনা সম্ভব। আওয়ামীলীগ তার প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। আর তিনি হচ্ছেন এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। স্বজ্জন রাজনীতিক হিসেবে তার খ্যাতি আছে। তিনি এ নিয়ে এ আসন থেকে দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী সংসদেও সমূহ সম্ভাবনা তাঁর রয়েছে। এদিকে বিএনপি খ্যাত অখ্যাত কয়েকজন প্রচার চালিয়ে যাচ্চিলেন। কিন্তু তাদের দলীয় চেয়ারপার্সন কারাগারে থাকায় এখন তারা এ প্রচারণাও করছেন না বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিএনপি যদি বিশ দলের প্রার্থী মনোনয়ন দেন তাহলে জমিয়তের মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী থেকে যেতে পারেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারুক আহমদসহ আরো বেশ কয়েক জনের নাম শুনা গিয়েছিলো। প্রান্তিক রাজনীতির মাঠে হিসেব এখন ত্রিমুখী বলতে পারেন। আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও শরিক দল। বিএনপির ও শরিক দলের মাঝে স্থানীয় রাজনীতিতে বিশাল ফারাক। আওয়ামীলীগ একাট্টাভাবে প্রচার করছেন এম এ মান্নানের ও নৌকার বিজয়ের কথা। সাধারণ মানুষ যেহেতু এখন রাজনীতি বুঝে সুতরাং তাদের সময় এখন ভাবার আর আলোচনা করবার। এই আরোচনাই আগামীর পথ সুগম করবে ভোট প্রার্থীদের। আমাদের প্রান্তিক রাজনীতির হিসেব খুবই সহজ। যে ব্যক্তি প্রান্তিক মানুষের কাজ করে, তাঁদের উপকারে কাজ করে, সেতু করে, কার্লভার্ড করে, সড়ক করে, বেরিবাঁধ করে, কৃষক, জেলে ও সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা কয় তাকেই ভোট দিবে। বিদ্যুতের আলো দিয়ে আলোকিত করে, বিদ্যার আলো দিয়ে আলোকিত করে তাকেই এ অঞ্চলের মানুষ ভোট দিবেন এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। পাঠক যদি মনে করেন আমি কিভাবে এতোটা নিশ্চিত হলাম তাহলে বলবো- এপ্রির মাসের শুরুর দিকে সংবাদের কাজে পাথারিয়া ইউনিয়নের জাহানপুর, শ্রীনাথপুর, সখিপুরসহ আশপাশের আরো দু’চারটে গ্রাম ঘুরেছি। সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি। খেটে খাওয়া মানুষগুলো যে কতটা আন্তরিক তা বলে বুজানোর মতো নয়। মনের মানুষের মতো তাদের সাথে কথা বলেছি। সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের সে কি চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ! অবাক হলাম। যুক্ত হলাম। জানতে চাইলাম। দিনব্যাপী এসব এলাকাঘুরে দু’চার জায়গা থেকে যে তথ্য পেলাম তার সারমর্ম এই যে, তারা এলাকার উন্নয়ন চায়। আরো বিদ্যুৎ চায়। রাস্তা চায়। সেতু চায়। ভালো রাজনীতিক চায়। শিক্ষিত মানুষ চায়। কার দ্বারা এমন উন্নয়ন সম্ভব তাও তারা সহজ ভাষায় বলে দিলো। আগেই বলেছিলাম, প্রান্তিক অংশ যদি শক্ত হয় তাহলে পুরো অংশটা অবশ্যই শক্তিশালী হতে বাধ্য। আমাদের এখানে প্রান্তিক মানুষ তাদের অবস্থান একটা জায়গায় নিয়ে গেছে। তাদের সিদ্ধান্তিই কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করাটা বোকামি ছাড়া কিছুই বলবো না। আর যাদের পক্ষে প্রান্তিক মানুষের রায় তারাও নিজেদের অবস্থান আরো পাঁকা করতে হবে। সংসদে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে ভালো যা যা করার তা করে নেওয়াটাই উচিৎ। যাদের কারণে ভালো গুলো দূরে যাচ্ছে তাদের দূরে সরানোটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এরা সমাজ, দেশ, দশ ও দলের জন্য বিষফোঁড়া।
লেখক: সাংবাদিক।