স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার চোরাবস্তি খ্যাত প্রত্যন্ত গ্রাম নারকিলায় মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার কলেজ ছাত্র পাভেল আহমদকে বেধড়ক পিটিয়েছে গ্রামের মাদক কারবারিরা। শনিবার সকালে সুনামগঞ্জ শহরে আসার পথে তাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। তার মাথা, পা ও হাতে ধারালো ছুরির একাধিক আঘাত রয়েছে। গ্রামের এই ছাত্র দীর্ঘদিন ধরে তাদের গ্রামে চোলাই মদ তৈরিসহ দেশিয় নেশাজাত দ্রব্য তৈরির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছেন। এ নিয়ে তিনি নিয়মিত ফেইসবুকে লেখালেখিও করছেন। এতে ক্ষুব্দ হয়ে মাদক কারবারিরা তাকে মারধর করেছে।
জানা গেছে নারকিলা গ্রামের হতদরিদ্র আব্দুর রহমানের ছেলে পাভেল মিয়া নিজ উদ্যেমে কষ্ট করে পড়ালেখা করছে। এবছর দিরাই ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সে। চোরাবস্তির এই কিশোরের লেখাপড়ার সংগ্রামের বিষয়ে স্থানীয় পত্রিকায় তিন বছর আগে একটি মানবিক সংবাদ প্রকাশিত হলে তার উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব নেন সুনামগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. হারন অর রশিদ। তিনি প্রতি বছর তাকে নতুন বই, ভর্তি খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ দিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে গ্রামের সবাই হতদরিদ্র থাকায় বেশিরভাগই চোলাই মদ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। পাভেল আহমদ গ্রামবাসীর নেশাতৈরির ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছেন। এ নিয়ে নিয়মিত ফেইসবুকে লেখালেখি করছেন তিনি। এ ঘটনায় গ্রামের মাদক কারবারিরা তার উপর চরম ক্ষুব্দ ছিল। পুলিশের কাছে মাদক কারবারিদের তথ্য থাকার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে পুলিশেরও সমালোচনা করেন পাভেল। এর জের ধরে শনিবার সকালে পাভেল আহমদ সুনামগঞ্জে আসার পথে একই গ্রামের জিয়া উদ্দিন, কুশেদ আলী, রাজিব, জজ মিয়া, সেলিম, আমজদ আলীসহ কয়েককজন তার পথ আগলে ধরে বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে ধারালো ছোরা দিয়ে তার মাথা, পা ও হাতে আঘাত করে। স্থানীয়রা পাভেলকে উদ্ধার করে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এসময় পাভেলের স্বজনরা শাল্লা থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশ উল্টো তাদের ধমক দেয়। হামলাকারীরা এখন পাভেলের বিরুদ্ধে উল্টো মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পাভেল মিয়া মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছে। তার বিভিন্ন লেখায় পুলিশকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু কিছু অসৎ পুলিশ তাকে উল্টো শাসিয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে।
আহত পাভেল মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের সবাই হতদরিদ্র। কেউ পড়ালেখা করেনা। এটা আমাকে কষ্ট দেয়। এ কারণে আমি গ্রামের সবাইকে মাদক তৈরি বাদ দিয়ে পরিশ্রম করে সন্তানদের পড়ালেখা করানোর কথা বলি। কিন্তু এ কারণে আমার প্রতি অনেকরই ক্ষোভ আছে। এই ক্ষোভ ও প্রতিবা থেকেই শনিবার আমাকে মারধর করেছে তারা।
শাল্লা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি খবর পাওয়ার পর পুলিশ পাঠিয়েছি। পূর্ব বিরোধ নিয়ে পাভেল আক্রান্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাভেলের আতœীয়-স্বজনরাও মাদক তৈরি ও বিক্রি করে। তাদেরকে ধরছেন না কেন প্রশ্ন করলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তার কথা বার্তায় পাভেলের প্রতি ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।