সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের ক্যাপেলা হোটেলে
৮০ বছরের পুরনো সেগুনকাঠের টেবিলে
ট্রাম্প -কিম জং উনের বৈঠকে দেখে ভেবে ব্যাকুল হই। ইনট্রসপেকশনে রাশিয়ার ক্রাসনায়ার্ক শহরে খুঁজি প্রেমাকে। সিন্ধুতে ঢেউ উঠে প্রলয় নৃত্যের;
জড়ায়ে ধরি মিলনের ব্যাকুলতায়। মাথা তোলার শক্তি পাইনি বলে,প্রেমার বুকে লুকাই মৃত্যুর পেয়ালার ভিতর।অপরাহ উইনফ্রে’র সংগ্রাম শেষে নেসফিলের বেতারে, টিভিতেঘোষণা করেন ‘এ জীবন সবার, এবিশ্ব সকলের’। হ্যালিবেরী,নওমী ক্যাম্পবেলের গায়ের গন্ধে সাময়িক দৃষ্টি পালটে সুন্দর পৃথিবীর অন্ধদের ।
তবুও ভোগের জড়ায়ুতে জন্মনেয় পুঁজির। চুক্তি হয়
পশ্চিমে; অস্ত্রের বিনিময়ে শক্তি।
শুধু পৃথিবীর অন্য দেশ পারমাণবিক শক্তিধর হোক সেটা আমেরিকা সহ্য করতে পারেনা ; তাদের এই অপছন্দের খেসারত দিতে গিয়ে কত রাজা রাজ্য হারিয়ে মৃত্যু গ্রহন করতে হয়েছে ; রাষ্ট্রের মধ্যে বোমা- বারুদের দূর্গন্ধ আজ সেদেশের মানুষ ও মানবতাকে ধিক্কার জানায়।তাঁদের অত্যাধুনিক মরণাস্ত্র পরীক্ষার মাঠে পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রগুলি।
উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন শক্তির আস্ফালনে
আমেরিকা শক্তি প্রদর্শন না করে পারস্পরিক সমঝোতা বৈঠকে মিলিত হয়েছে কারণ কিম কে তাঁরা ভয় পেয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিম যদি বাচ্চাদের মতো তাঁদের শয়তানের জালে আটকা না পড়েন তবে এপর্যন্ত সব কিছুতে উত্তর কোরিয়াই কৌশলে এগিয়ে। চীনের স্পর্শ যে কিমকে পোক্ত খেলোয়ার হয়ে বিশ্বরাজনীতিতে মাথা তুলে দাঁড়ানোর
সাহস দিয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠে সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের ক্যাপেলা হোটেলে ট্রাম্প -কিম জং উনের বৈঠকে চীন উনের নিরাপত্তায় গৃহীত ব্যবস্থা দেখে।
উন- ট্রাম্প বৈঠকের রাজনীতি নিয়ে এত সহজে অনুুুকল্প দাঁঁড় করানো কঠিন। চীনের বিখ্যাত প্রাচীন দার্শনিক জুয়ানগজি চ্যালেঞ্জ করে নীচের প্রশ্নটি ছুঁড়েছিলেন আজ থেকে খ্রীস্টপূর্ব চারশ বছর আগে, “তুমি যেহেতু মাছ নও, কিভাবে বলো এই মাছটি সুখী আছে” ?
এখান থেকে বলতে পারি, যে আমেরিকা সারা বিশ্বের জন্য হুমকি,প্রতারক রাষ্ট্র,তাঁদের সত্যিকারের নীতি কৌশল আমেরিকানরাও বুঝতে পারেনা; সেখানে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তির বাতাস বয়ে দেওয়ার দায়িত্ব
তারা নিলে সত্যিই শান্তি আসবে সেটা বলা মুশকিল।
এক্ষেত্রে চীনের ভুমিকা দারুন হয়েছে,’ একদিনের ঠান্ডায় তিন ফুট বরফ হবেনা’ ভেবেই তারা ট্রাম্প- কিম কে বৈঠকে বসিয়ে কোরীয় দ্বীপে যুদ্ধের উত্তেজনা কে টেবিল টকে নিয়েছে। কিম একটি বিষয় পরিষ্কার করেছেন, ‘ সকল একনায়কই অনিরাপদ, কিন্তু চরম
একনায়ক অন্যদের চেয়ে চরম অনিরাপদ ‘।
‘ওয়াশিংটন পোষ্ট’ এ অ্যান্নি অ্যাপলিবাউম তাঁর লেখার শিরোনামে বলেছেন ‘ Trump and kim got what they wanted.The rest of the world, not so much.’ তিনি তাঁর লেখায় উল্লেখ করেন, কিমের জন্য এ বৈঠকের মূহুর্ত ছিল প্রতিশোধ নেয়ার মতো। পারমাণবিক পলিসি তিনি যে প্রজ্ঞায় নিয়েছিলেন সেটি সঠিক তিনি তা প্রমাণ করেছেন। তাঁর ছোট,গরীব,দারিদ্র্য পীড়িত দেশ কে স্ট্যালিনের মতো আমেরিকার সমান করার কৌশল নিয়ে ট্রাম্পের সাথে বসার সামর্থ্য তিনি দেখিয়েছেন। সাথে কিম জং উন নিজের স্বজনদের হত্যার মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে চালানো রাজ ক্ষমতা ও তিনি প্রকাশ্যে জায়েজকরে ফেললেন। ট্রাম্পকে দিয়ে বলালেন,কিম দেশপ্রেমিক।
যুক্তরাষ্ট্র,জাপান,দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধে তিনি পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি ভেবে দেখবেন। এখন শুধু অপেক্ষা সেই শুভ সমকালের….। হায়! শক্তিবানরা এ পৃথিবীর দূর্বল মানুষের ভাগ্যের স্রষ্টা।
লেখকঃ শিক্ষাবিদ,প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ,
শাহজালাল মহাবিদ্যালয়,জগন্নাথপুর,সুনামগঞ্জ ও
সুনামগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ ২০১৭।