অনলাইন ডেক্স::
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা সহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা। সেনাবাহিনী তাদের প্রাথমিক দায়িত্বের বাইরে গিয়েও অনেক সময় দেশের মানুষের জরুরী কিংবা কোনো সংকটময় মুহূর্তে তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী; ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান; ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। কবির এই কবিতার মতোই যেন আমাদের সেনাবাহিনী দেশের আর্ত-মানবতার সেবা করে যাচ্ছে। সেই ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখা সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সব সময় দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেনাবাহিনী আর্ত-মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছে। নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে দুর্গত মানুষের সেবা করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি টানা বৃষ্টির কারণে মনু, কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর পানি বেড়ে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে মৌলভীবাজার জেলার চার উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে।
পূর্বের ন্যায় এবারো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে মৌলভীবাজারের বন্যা আক্রান্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে মৌলভীবাজার জেলায় কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।
ঈদের আগের দিন অর্থাৎ ১৫ জুন রাত থেকেই মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সহায়তায় মাঠে নেমে পড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
শনিবার (১৬ জুন) সকালে ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে সেনাবাহিনীর তিনটি ইউনিট কুলাউড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সহায়তা করতে মাঠে কাজ করেছে, যা এখনো অব্যাহত আছে।
এছাড়া মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার, শমশেরনগর, পতনউষার ইউনিয়নে আকস্মিক বন্যার দুর্ভোগে আক্রান্ত বানভাসী মানুষের পাশে সহায়তায় মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকষ টিম। শনিবার ঈদের দিন সন্ধ্যায় আতুরের ঘর নামক স্থান দিয়ে ক্যাপ্টেন আরেফিনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি টিম পতনউষার ইউনিয়নের পানিবন্দি অসহায় মানুষদের সহায়তায় কাজ শুরু করে।
শনিবার ঈদের দিন মৌলভীবাজার শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মনু নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে শহরের সেন্ট্রাল রোডে বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়ালের বিভিন্ন ছিদ্র ও দেওয়ালের সংযোগের ফাঁক দিয়ে শহরে পানি প্রবেশের গতি বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর একটি টিম বন্যা প্রতিরক্ষা দেওয়াল পরিদর্শন করে বন্যা প্রতিরক্ষা দেওয়ালের পাশে দ্রুত বালু ভর্তি বস্তা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
মৌলভীবাজারে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং সদস্যরা নিজেদের পরিবারের সাথে ঈদ পালনের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে বন্যা আক্রান্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার জয়গান গেয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সেনাবাহিনী শুধুমাত্র জাতীয় পর্যায়েই নয় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে মানবতার জয়গান গেয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দেশের মুখও আন্তর্জাতিক মঞ্চে উজ্জ্বল করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।