অনলাইন::
মতো অবস্থা উইলি কাবাইয়েরোর। মাঠের বাইরে তখন মাথায় হাত আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলিরও।
আর গোলরক্ষকের ভুলে পিছিয়ে পড়ার পর ভিআইপি গ্যালারিতে বসা ফুটবল ঈশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনার মধ্যেও তখন নখ কামড়ানো অস্থিরতা। তখন কে জানতো যে ম্যাচের ৫৩ মিনিটে কাবাইয়েরোর ভুলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গ্রুপ পর্বের বাধা ডিঙানোর দৌড়ে থাকা আর্জেন্টিনা প্রায় বসেই পড়বে!
‘প্রায়’ বলার কারণ কাগজ-কলমে শেষ ষোলোতে যাওয়ার সম্ভাবনা এখনো টিকে আছে আলবিসেলেস্তেদের। তবে সেই সম্ভাবনাও অনেক ‘যদি’ এবং ‘কিন্তু’ নির্ভর। আর সেটি নিজেদের হাতেও পুরোটা নেই, অন্য দলের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই নিঝনি নভোগোরোদে কাল রাতে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ক্রোয়েশিয়া যেমন দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে রাখল, তেমনি প্রথম পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কায় ফেলে দিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকেও। যারা গত ৬০ বছরের মধ্যে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে দেখল সবচেয়ে বড় হারের মুখও। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে চেকোস্লোভাকিয়ার কাছে ১-৬ গোলে হারার পর কখনোই তিন গোলের ব্যবধানে হারতে হয়নি তাদের।
ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারতে হলো অথচ আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করার পর মরনপণ লড়াইয়ে পরিণত হওয়া ম্যাচে তাদের সেভাবে খুঁজেই পাওয়া গেল না। যদিও ফর্মেশন এবং শুরুর একাদশে অনেক রদবদল এনেই দল নামিয়েছিলেন সাম্পাওলি।
বদলেছিলেন কৌশলও। আগের ম্যাচে যেমন কৌশলটা ছিল যে মেসি খেলাবেন; কিন্তু আইসল্যান্ডের খেলোয়াড়রা তাঁকে প্রাণপণে আটকে রাখায় অন্যদের জন্য কিছু করার সুযোগও উন্মুক্ত হয়েছিল। তবে অন্যরা খুব একটা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেননি। কাল কৌশল বদলে সাম্পাওলি অন্যদের দায়িত্ব দিলেন মেসি এবং আগুয়েরোর কাছে বল পাঠানোর। সেখানেও ব্যর্থতা এবং সেই সঙ্গে পাহাড়সম চাপ যে আর্জেন্টাইনদের কুরে কুরে খাচ্ছিল, তাদের খেলায়ই সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
প্রথমার্ধে তবু বিক্ষিপ্ত কিছু আক্রমণে দুই দলই প্রতিপক্ষের গোলমুখ খোলার চেষ্টা করেছিল। সাফল্য না আসায় প্রথমার্ধ থেকে গেল গোলশূন্য। তবুও ফুটবলপ্রেমীরা এই অপেক্ষায় থাকলেন যে দ্বিতীয়ার্ধে হয়তো দুই দলই গোলের জন্য খেলার উত্তেজনা তুঙ্গে তুলে দেবে।
ক্রোয়েশিয়াকে অবশ্য গোলের জন্য তেমন কিছুই করতে হলো না। যা করার করে দিলেন কাবাইয়েরোই। গত মাসে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে লিভারপুল গোলরক্ষক লরিস কারিয়াসের হাস্যকর দু-দুটি ভুলের রেশ কাটতে না কাটতেই দৃশ্যপটে চলে এলেন কাবাইয়েরো। ডিফেন্ডার গ্যাব্রিয়েল মেরকাদোর ব্যাকপাস থেকে বল সামনে পাঠাতে গিয়ে এমন দুর্বল এক কিক নিলেন যে বল তাঁর কাছেই দাঁড়ানো ক্রোয়াট উইঙ্গার আন্তে রেবিচের দিকেই চলে গেল। এমন উপহার কেউ ছাড়ে নাকি! ডান পায়ের ভলিতে তিনি বল জালে জড়াতেই আর্জেন্টিনা শিবিরের মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ার উপক্রম। তবু দাঁড়ানোর একটি চেষ্টা দেখা গেল। ক্রিস্টিয়ান পাভন ও পাওলো দিবালা নামার পরে। আক্রমণে কিছুটা গতিরও সঞ্চার হলো। যার সুবাদে ৬৪ মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে ঢোকা গনসালো হিগুইয়েনের কাট ব্যাকে ম্যাক্সিমিলিয়ানো মেজার শট প্রথমে প্রতিহত করেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক ডানিয়েল সুবাসিচ। তবু বিপদমুক্ত না হওয়া বল ব্যাকহিলে মেসির দিকে ঠেলেন মেজা। কিন্তু মেসি শট নেওয়ার আগেই তা ক্লিয়ার করেন ইভান রাকিটিচ। সেবারই গোলের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া আর্জেন্টিনাকে এরপর ৮০ মিনিটে স্তব্ধ করে দেন ক্রোয়েশিয়া অধিনায়ক লুকা মডরিচ। বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শটে ক্রসবার ঘেঁষে বল জালে পাঠিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ব্যবধানই শুধু দ্বিগুণ করেননি, গ্রুপ পর্ব থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পথও যেন খুলে দেন। তাতেই যেন হতাশ ও বিমর্ষ আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা হাল ছেড়ে দেন একরকম। সেই সূত্রে গোল আরেকটি না হয়ে হতে পারত একাধিকও। ৮৬ মিনিটে যেমন মেসির বার্সেলোনা সতীর্থ ইভান রাকটিচের ফ্রিকিকে বল ক্রসবারে লেগে ফিরে। যদিও রাকটিচকে শেষপর্যন্ত খালি হাতেও ফিরতে হয়নি। ইনজুরি সময়ে এক আক্রমণ কাবাইয়েরো প্রতিহত করলেও বল যায় মাতেও কোভাচিচের পায়ে। তাঁর কাছ থেকে রাকিটিচের পায়ে যখন বল, তখন গোলবার ছেড়ে কাবাইয়েরো কিছুটা দূরে এবং সামনে কেবল মার্কোস আকুইনা। গোল করার এমন সুযোগ কি লুফে না নিয়ে পারেন এই ক্রোয়াট মিডফিল্ডার!
তিনি লুফেই শুধু নেননি, ৬০ বছরের মধ্যে গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনাকে সবচেয়ে বড় হারের তিক্ত স্বাদ দিয়ে শেষ ষোলোতে যাওয়ার দৌড় থেকে প্রতিপক্ষকে প্রায় পথেও বসিয়ে দিয়েছেন!