মাহবুবুর রহমান পীর::
সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের অন্যতম সিনিয়র সদস্য, সাবেক সহ-সভাপতি, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলাম চৌধুরী আর আমাদের মাঝে নাই এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে খুব। প্রায় দেড় যুগের সাংবাদিকতা জীবনে বিভিন্ন সময়ে একসাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল এই ব্যক্তিত্বের সাথে। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
আপাদমস্তক একজন ভালো মানসিকতা সম্পন্ন এই ব্যক্তির জীবনে চলার পথকে সততা ও নিষ্টার সাথে বেঁধে রেখেছিলেন তেমনি আইন পেশায়ও ছিলেন দক্ষ একজন অাইন পেশাজীবী। পেশাগত,পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে তিনি স্বচ্ছতাকে অাঁকড়ে ধরেই পথ চলেছেন। যাকে যা বলার তা যত কঠোরই হোক তা অকপটে বলে ফেলার মতো সাহসিকতা তাঁর ছিলো। তাই কোন কোন ক্ষেত্রে কারো কারো বিরাগভাজন হলেও তিনি তার নীতি বিসর্জন দেননি। অটল-অবিচল থাকতেন তাঁর সিদ্ধান্তে।
বয়সে আমাদের অনেক সিনিয়র হলেও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নিজের দায়িত্ব পালনে তিনি খুবই সচেতন ছিলেন। নিউজ প্রসেস ও প্রেরণের ক্ষেত্রে তিনি খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতেন। নিউজ ড্রাফটের পর পুরো নিউজটা বেশ কয়েকবার পড়ে তার মধ্যে কোন ছোট-খাটো ঘাটতিগুলো খুবই সতর্কতার সাথে সমাধান করতেন। কোন সভা-সমাবেশে গেলে নিজের মত করে খুবই নিখুঁতভাবে নোট নিতেন এবং নিজের মত করে নিউজ তৈরি করতেন। এক্ষেত্রে তিনি কারো উপর নির্ভর করতেন না। এভাবে সবকছিুতেই তার একটা নিজস্ব স্বকীয়তা ছিল। আচার-আচরণে,কথা-বার্তায় তিনি যেমন পরিচ্ছন্ন ছিলেন, তেমনি পোশাক -পরিচ্ছদেও পরিপাটি থাকতেন সব সময় তিনি।
বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েছে। এর পরিসর প্রসারিত হয়েছে। চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে রিপোর্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। রিপোর্টারের সংখ্যা বাড়লেও বিশেষ করে জেলা-উপজেলায় তথা মফস্বলে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছেনা রিপোর্টারদের মান। রিপোর্টারদের সততা ও স্বচ্চতা নিয়েও সময় সময় প্রশ্ন উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্টারদের বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে । মোট কথা কিছু অসাধু, অযোগ্য ও স্বার্থান্বেষী লোকদের অনৈতিক কর্মকান্ডে মহান এ পেশার সাথে সম্পৃক্তদের প্রতি মানুষের ধারনা পাল্টাচ্ছে। সৃষ্টি করছে এক ধরনের আস্থার সংকট।
এমনি এক সংকটময় মূহুর্তে আজিজুল ইসলাম চৌধুরীর মত একজন পরীক্ষিত পরিচ্ছন্ন সাংবাদিকের অসময়ে প্রস্থান আমাদের জন্যে এক অপূরনীয় ক্ষতি। এ ক্ষতি কোন ভাবেই পোষাবার নয়। তার মৃত্যুতে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হল -এ শূণ্যতা সহসা পূরণ হবার মত নয়।
দুনিয়ার বাস্তবতা বড় কঠিন । বিধির বিধান খন্ডানোর সুযোগ নেই। তাই সকল কষ্ট বুকে পাথর চাঁপা দিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের পথচলার এই সাথীকে পরম মমতায় আমরা চিরবিদায় জানিয়েছি। তিনি এখন আর আমাদের মাঝে নেই! চলে গেছেন না ফেরার দেশে। অার কোন দিন দেখা হবেনা এই পরিচিত মানুষটির সাথে । অার কথা হবেনা প্রয়োজন কিংবা অপ্রয়োজনে।
পরকালীন জীবনের যাত্রাপথে মহান স্রষ্টা তাকে রহম করবেন- তার প্রতি স্বদয় হবেন, তাকে জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় রাখবেন- এমন প্রার্থনা ও প্রত্যাশা করছি কায়মন চিত্তে।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম চৌধুরী ২৫জুন সোমবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সিলেটের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
মাহবুবুর রহমান পীর: জেলা প্রতিনিধি দৈনিক যুগান্তর, সাধারণ সম্পাদক সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি।