বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জে ভূইফোঁড় মানবাধিকার সংগঠনের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সহজ-সরল মানুষদের কাছ থেকে পুরস্কার-পদক দেবার কথা বলে অনুদান গ্রহণ, বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বিচার-শালিসের নামে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়, তদন্তের ভয় দেখানোসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক নানা কাজ করছে ভূইফোঁড় এসব সংগঠন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন কথিত মানবাধিকার বিষয়ক এসব সংগঠনের সঙ্গে চিহ্নিত অপরাধী ও সমালোচিত লোকজন, বিতর্কিত ব্যক্তিরা জড়িত। সারাদেশে ভুয়া ও প্রতারণামূলক এসব মানবাধিকার সংগঠনের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো থেকে জনগণকে সাবধান থাকতে অনুরোধ করেছে। এ ঘটনার পর কথিত এসব সংগঠনের ভূইফোঁড় কর্মীরা বিপাকে পড়েছে।
সুনামগঞ্জের সুধী সমাজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন পেশায় জড়িত বিতর্কিত ও অসৎ কিছু ব্যক্তি ঢাকার ‘টাউট প্রকৃতি’র নেতাদের টাকা দিয়ে এসব সংগঠনের জেলার দায়িত্ব নিয়ে আসে। এখানে সাইন বোর্ড টাঙিয়ে বিশাল অফিস নিয়ে তারা গ্রামের সরল মানুষদের প্রতারিত করে। এসব অফিসের ভাড়া বা অন্যান্য খরচ আদায় হয় নিয়োগ দেওয়া ‘মানবাধিকার কর্মী’দের মাধ্যমে। যারা গ্রামের সহজ-সরল মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সুযোগ নিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।
জানা গেছে, জেলায় মানবাধিককার কর্মী হিসেবে বেকার যুবক ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের টাকার বিনিময়ে কার্ড প্রদান করা হয়। সুনামগঞ্জ জেলায় এমন একাধিক কথিত মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে যাদের সংশ্লিষ্টরা সমালোচিত, বিতর্কিত। তারা বিভিন্ন সময়ে সম্মাননা দেওয়ার জন্য সহজ-সরল জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে মনোনীত করে অনুদান সংগ্রহ করে। তাছাড়া গ্রাম এলাকার পারিবারিক বিরোধ, জমি সংক্রান্ত বিরোধসহ নানা বিরোধের সুযোগ নিয়ে ‘তদন্তে’র কথা বলে লিখিত নোটিসও দেয়। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তারা তদন্তের ভয় দেখিয়ে মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে। জেলায় বহুদিন ধরে একাধিক কথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাপিয়ে বেড়ালেও তাদের নিয়ন্ত্রণের কোন সুযোগ নেই। প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে তারা নানাভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে।
তবে সম্প্রতি সরকারের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব প্রতারক সংগঠনের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বিনামূল্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি এসব ভূইফোঁড় মানবতাবাদী সংগঠনের খপ্পরে পড়ে আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মঙ্গলকাটা এলাকার এক স্কুল শিক্ষক বলেন, একটি মানবাধিকার সংগঠনের কথা বলে সুনামগঞ্জ শহরের একজন মানুষ কার্ড বিক্রি করে। এই কার্ডধারীদের দিয়ে মানুষের ভূমি, পারিবারিকসহ নানা মামলার খোঁজ নেয়। মানুষকে ভয় দেখিয়ে তদন্তের কথা বলে লিখিত নোটিসও দেয়। সহজ সরল গ্রামের মানুষকে ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকে। তিনি জানান, জেলা শহরে বিশাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে কথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো অফিস করে মানুষকে প্রতারিত করছে। অফিস ভাড়াসহ কোন ধরনের খরচই দেয়না তাদের সংগঠন। তারপরও কিভাবে বিশাল অফিস নিয়ে তারা কার্যক্রম চালায় সেটা প্রশ্ন।
উন্নয়নকর্মী সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, সুনামগঞ্জসহ সারাদেশে কিছু অসৎ ব্যক্তি কথিত মানবাধিকার সংগঠন করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি তাদেরকে জিম্মি করে টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে। এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অ্যাডভোকেট মো. বুরহান উদ্দিন বলেন, বেসরকারি কোন সংগঠনের লিখিত নোটিস দিয়ে মানুষকে জোর খাটানোর কোন সুযোগ নেই। এটা কেউ করলে আইন লঙ্ঘন হবে। আর কথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো যা করছে তা প্রকাশ্য প্রতারণা বটে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, সরকারের মানবাধিকার কমিশন, লিগ্যাল এইডসহ নানা সংস্থা সহায়তা দিয়ে থাকে নিরীহ মানুষকে। তাছাড়া কয়েকটি বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আছে যেগুলো সর্বজন বিদিত। এই ভূইফোঁড়দের কাছ থেকে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, কেউ কথিত মানবাধিকার সংগঠন দ্বারা প্রতারিত হলে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব। এসব সংগঠনের আইনী নোটিস পাঠানোর কোন ক্ষমতা নেই বলে জানান তিনি।