বিশেষ প্রতিনিধি:
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বিপুল সম্পদ-সম্ভাবনার জেলা সুনামগঞ্জ দেশব্যাপী বিশেষভাবে পরিচিত। জেলার এই সমূহ বৈশিষ্ট্য ও নান্দনিকতা প্রদর্শনের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম বিপ্লবের পরিকল্পনায় ঐতিহ্য যাদুঘরে নির্মিত হচ্ছে সিনেমা প্লেক্স।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের অধীনে এ ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম। দ্রুতগতিতে সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য যাদুঘরে সিনেমা প্লেক্স নির্মাণের প্রক্রিয়া গত দুই দিন আগ থেকেই শুরু হয়েছে। এটি নির্মিত হলে এখানে সুনামগঞ্জ জেলার ভিজুয়াল ইতিহাস, ঐতিহ্য, পর্যটন, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, উন্নয়ন ও বিনোদনসহ নানা বিষয় নিয়মিত প্রদর্শিত হবে। এতে সুনামগঞ্জের তরুণ-তরুণীরা প্রগতিশীল, মুক্তমনা ও বিজ্ঞানমনষ্ক হিসেবে গড়ে ওঠবে বলে মনে করছেন সুধীজন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিনেমা প্লেক্স নির্মাণের জন্য সম্প্রতি বরগুনা থেকে এসএইচ ডেভিড শিকদার নামের এক ইন্টেরিয়র শিল্পীকে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বর্তমানে সিনেমা প্লেক্সের জন্য লাইট, সাউন্ড, প্রজেক্টর, স্ক্রীন, ওয়াল, সিলিং, ফ্লোর ও গ্যালারিসহ সিনেমা প্লেক্সের নানা কাজ বাস্তবায়ন করছেন। তার তত্ত্বাবধানে ইন্টেরিয়র কাজ এগিয়ে চলছে। সিনেমা প্লেক্স তৈরি শেষে সুনামগঞ্জের স্থানীয় শিল্পীদের মাধ্যমে ডকুমেন্টারি, ডকুফিল্ম ও ফিচার ফিল্ম তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সাংবাদিক ও নির্মাতা মুশফিক আরিফ স্থানীয় শিল্পীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে তার সঙ্গেও কথা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। শিগগিরই সুনামগঞ্জের শিল্পীদের নিয়ে এ বিষয়ে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে জেলা প্রশাসকের আরেকটি সৃজনশীল উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এই এলাকার শিল্পী সাহিত্যিক ও সুধীজনরা। এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে নতুন প্রজন্মের নিজের অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানার পাশাপাশি নিজেরাও সৃজনশীল মনমানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠবে বলে তারা মনে করেন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বিপ্লব সুনামগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও প্রাচীন পুরাকীর্তির ইতিহাস সংরক্ষণ, মুক্তিযোদ্ধা উপত্যকা প্রতিষ্ঠা, বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণসহ নানা ঐতিহাসিক নানা কাজ বাস্তবায়ন করেছে। সম্প্রতি হাওরের ফসলরক্ষা বাধে অক্লান্ত কাজ করে তিনি সাধারণ কৃষকের কাছেও বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছেন।
লেখক-গবেষক ইকবাল কাগজী বলেন, প্রগতিশীল ও প্রকৃত সংস্কৃতিমনা বলতে যাকে বুঝায় তার পুরোটার প্রতিনিধিত্ব করেন আমাদের বর্তমান জেলা প্রশাসক সাবিরুল। একজন প্রকৃতি দেশপ্রেমিক ও সমাজহিতৈষিক জনসেবী প্রশাসক তিনি। অল্প দিনে তিনি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কাজ করছেন তাতে আমাদের প্রজন্ম অনেক উপকৃত হবে। এই সিনেমা প্লেক্সটি নির্মিত হলে আমার তরুণ প্রজন্ম জ্ঞানের আলোর সন্ধান পাবে।
মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক আবু সুফিয়ান বলেন, জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম প্রকৃত জনবান্ধব ও দেশ্রমিক একজন সরকারি কর্মকর্তা। ব্যক্তিগত জীবনে যিনি সম্পূর্ণ সৎ। তার মতো ২০ জন জেলা প্রশাসক থাকলে অর্ধেক বাংলাদেশ বদলে যাবে। তিনি সুনামগঞ্জে এসে মন থেকে যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন তার সুফল আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভোগ করবে বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, একজন সৃজনশীল চিন্তার মানুষ আমাদের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম। উনার পরিকল্পনায় তৈরি হচ্ছে সিনেমা প্লেক্সটি। সারাদেশের মধ্যে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে সুনামগঞ্জ জেলার ভিজুয়াল ইতিহাস, ঐতিহ্য, পর্যটন, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, উন্নয়ন ও বিনোদনসহ নানা বিষয় নিয়মিত প্রদর্শিত হবে। এই মাসেই সিনেমা প্লেক্স নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।