কাশমির রেজা:
সুনামগঞ্জের মানুষ যে কারণে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলামকে ভূলতে পারবেনা
হাওরের ইতিহাসে এক ভয়াবহ ফসলহানীর পরপরই সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন জনাব সাবিরুল ইসলাম। তখন জেলাজুড়ে মানুষের মাঝে ছিল হাহাকার। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা, বিশৃঙ্খলা, অভিযোগ অনুযোগকে সাথী করেই তাঁর যাত্রা শুরু হয়। সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। সফলতার সাথে তিনি সামাল দিয়েছেন।
আমার মতে তাঁর সবচেয়ে বড় সফলতা হাওরের বাঁধ নির্মাণে কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ প্রণয়ন। এই নীতিমালার খসড়া তিনিই করেছেন।
হাওরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালভাবে বাঁধ নির্মাণ হয়েছে তাঁর সময়েই। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এসব বাঁধ নির্মাণের জন্য তিনি প্রতিটি উপজেলায় ছুটে বেড়িয়েছেন। যদিও কিছু সমস্যা ছিল, তবে তা অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।
সুনামগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। লাউড় রাজ্যের প্রাচীন কীর্তি সংরক্ষণে তিনি সীমানা নির্ধারণ করেছেন।
সুনামগঞ্জ কে দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণার দাবি তুলেছেন এবং লোক সংস্কৃতি চর্চার অংশ হিসাবে বেশ কয়েকটি সফল আয়োজন করেছেন। নির্মাণ করেছেন মহাকবি সঞ্জয় স্তম্ভ।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাবিরুল ইসলাম সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায়ও কাজ করেছেন। শহীদ সিরাজের স্মৃতি সংরক্ষণে ভূমিকা রেখেছেন।
হাওরকন্যা সুনামগঞ্জের পর্যটন শিল্প বিকাশেও তিনি স্বল্পতম সময়ে চেষ্টা করেছেন। শহীদ সিরাজ লেকের শ্রী বর্ধন ও পর্যটকদের বসার কিছু ব্যবস্থা করেছেন।
প্রতিভাবান এই আলোকচিত্রীকে মুগ্ধ করেছে সুনামগঞ্জের প্রকৃতি। তিনি ক্যামেরা হাতে ঘুরে বেড়িয়েছেন সুনামগঞ্জের হাওরে, পাহাড়ে। তুলেছেন দারুণ কিছু ছবি। যা দিয়ে একটি প্রদর্শনী হয়ে গেছে।
কাজের মানুষ সাবিরুল ইসলাম গালগল্প কমই করতেন। খুব সহজ গম্য বা মিষ্টভাষী না হলেও কাজের মধ্য দিয়ে তিনি সুনামগঞ্জবাসীর সাথে সুন্দর একটা সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এসব কারণে মাত্র দেড় বছর স্থায়ী এ জেলা প্রশাসককে সুনামগঞ্জবাসী হয়ত মনে রাখবেন দীর্ঘদিন। জনাব সাবিরুল ইসলামের জন্য শুভ কামনা।
পুনশ্চ : তিনি হয়ত আরও অনেক কিছু করেছেন যা আমার জ্ঞাত নয়। এসব কাজে SP Sunamgonj সহ অন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তারাও কৃতিত্বের ভাগীদার।