১৫ আগষ্ট সামনে রেখে একটা চিন্তা শুরু করা যেতে পারে- ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু ও রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সম্পর্ক।
গত কয়েক বছরে একটা বিষয় দৃশ্যমান। আওয়ামী লীগের ঘোর বিরোধী অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে মেনে নিচ্ছেন। অনেকেই জয় বাংলা শ্লোগান দিচ্ছেন, কিন্তু ‘জয় বঙ্গবন্ধু’টুকু বাদ দিয়ে- উদাহরন গন জাগরন মঞ্চ, যদিও ঐতিহাসিক ভাবে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ একটাই শ্লোগান।
এই শ্লোগানটা আওয়ামী লীগের, আওয়ামী লীগেরই শ্লোগান। ৮০’ র দশকে সাংগঠনিক ভাবে খুব লড়াকু হয়ে উঠা বাকশালের ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগ ও এই শ্লোগানে বাংলার আকাশ কাঁপাতো- যখন এই শ্লোগান কার্যতঃ নিষিদ্ধই ছিলো। বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ ছিলেন এই বাংলায়, যে বঙ্গবন্ধু বাংলার অপর নাম!
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যখন এই নাম উচ্চারন নিষিদ্ধ ছিলো তখন সাধারন মানুষের বাইরে আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মীরাই তাকে মনে রেখেছেন, তার স্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন। মস্কোপন্থী সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়ন ও বঙ্গবন্ধুকে স্মরন করতো।
৪৭ বছরের বাংলাদেশে ২৬ বছর কেটেছে সরাসরি সামরিক শাসন ও বিএনপি আলবদর শাসনে যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য দায়ী/ বেনিফিশিয়ারি ছিলো। হত্যাকান্ডের পর যখন আওয়ামী লীগ দিকবিদিক হয়ে পড়ে, শেখ হাসিনা ১৯৮১ তে এসে যদি আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন আজকের বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু যতোটা উচ্চারিত, ততোটা কি হতেন নাকি স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ান এক বেদনা হয়েই রয়ে যেতেন? হয়তো কবিতা, গানে, ছবিতে থাকতেন- হয়তো থাকতেন না। মাঠের লড়াই করে, সামরিক শাসন ও আলবদরদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে মারপিঠ করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে হারিয়ে যেতে দেয়নি প্রধানতঃ আওয়ামী লীগেরই মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
১৯৬৬ এর পর থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলকে ছাপিয়ে ব্যক্তি হিসেবে অনন্য হয়ে উঠেছিলেন তিনি। আবার এও তো সত্য ১৯৪৯ থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগেরই ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছেন, স্বাধীনতার স্থপতি এবং জাতির জনক হিসেবে অলংকৃত হয়েছেন।
আবার এ সত্য ও বিস্মৃত হওয়া যাবেনা, ১৯৭৫ এর জানুয়ারীতে মাল্টি ক্লাশ আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে তিনি আরো রেডিক্যাল এক আওয়ামী লীগ গড়তে চেয়েছিলেন- বাকশাল। বাকশাল ও কিন্তু আওয়ামী লীগই, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ ও বাকশালের বাইরে তিনি আর কই?
বাকশালকে হজম করা, আওয়ামী লীগ বিরোধী তো বটেই আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশের পক্ষে ও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এর বাইরে যারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুভূতিশীল তারা আবার ঘোরতর বাকশাল বিরোধী, ক্ষেত্র বিশেষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ও।
‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বাদ দিয়ে যেমন ‘জয় বাংলা’ প্রতিষ্ঠার একটা চেষ্টা আছে তেমনি বাকশাল ও আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে মেনে নেয়ার ও একটা প্রবণতা তৈরী হচ্ছে। এটা হতে পারে যে, তিনি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তাকে যে অস্বীকার করা যাবেনা সেই পরিনতবোধ তৈরী হয়েছে আওয়ামী লীগ বহির্ভূত দের মধ্যে ও।
র্যাডিক্যাল বাকশাল যদি মেনে নেয়া না যায়, বাকশালের তুলনায় অনেক মডারেট আওয়ামী লীগকে ও যদি মেনে নেয়া না যায় তাহলে বঙ্গবন্ধুকে মেনে নেয়া যায় কী?
আসলেই?
(লেখকের ফেইসবুক থেকে)