ঈদ-উল-আযহার দিন, আগে ও পরে দেশজুড়ে ২ সপ্তাহের নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে র্যাব। এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য র্যাব দেশজুড়ে ২৪৫টি পেট্রোল টিম মোতায়েন করেছে এবং ৫৬টি স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স দায়িত্বরত রয়েছে।
শনিবার দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, আব্দুল্লাপুর, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, চন্দ্রাসহ ঢাকার এক্সিটস পয়েন্টগুলোতে ঘরমূখি মানুষদের সহায়তার জন্য ২০টি অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের মেঘনা ও গোমতি ব্রীজে কাঠামোগত সমস্যার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। সে কারণে এই দুটি এলাকাতেও র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প থাকবে। হাইওয়ে ও লোকাল পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে র্যাব কাজ করছে।
এ সময় র্যাব ডিজি গুগল ম্যাপের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সড়কের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, কাঠালবাড়ি-শিমুলিয়া এবং দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ফেরী ঘাটে চাপ থাকলেও এখন পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। নাব্যতা সংকটের কারণে কাঠালবাড়ি-শিমুলিয়া রুটে বৃহস্পতিবার ৯টি ফেরী চলাচল করলেও শুক্রবার ১৩টি ফেরী চলাচল করছে। তারপরেও আমরা দুটি ফেরি ঘাটেই গরুর ট্রাকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ফেরি পারাপারে সহায়তা করছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই রুট দিয়ে প্রায় সাড়ে ৬হাজারের বেশি গরুর ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশ করেছে। এ সময় তিনি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ ঘাটে যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া নৌ এবং রেলপথেও ঈদযাত্রা এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে।
পশুর হাটের বেঁচা-কেনা জমে উঠতে শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বড় বাজারগুলোতে র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প থাকবে। হাটগুলোতে গরু ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হবে। পাশাপাশি যেসব হাটে র্যাবের ক্যাম্প নেই সেগুলোতে র্যাবের পেট্রোল টিম কাজ করছে। হাটগুলোতে অজ্ঞান ও মলম পার্টির দৌরাত্ব রোধে র্যাব তৎপর রয়েছে উল্লেখ করে র্যাবের ডিজি বলেন, ঈদের আগেই এসব পার্টি ও ছিনতাই চক্রের ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঈদ জামাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে শোলাকিয়া ময়দান থাকলেও বর্তমানে দিনাজপুরেও একটি বৃহত্তর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এদুটি ঈদগাহ ময়দানসহ জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও দেশের সকল ঈদগাহ ময়দানে র্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। আমরা আশা করছি যে, সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এখন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি যে, সবাই নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবে।
যাত্রীদের সহায়তার কথার উল্লেখ করে র্যাব ডিজি বলেন, র্যাব হেডকোয়ার্টারের ফেসবুক পেইজসহ র্যাবের ১৪টি ব্যাটালিয়নের নিজস্ব ফেসবুক পেইজ রয়েছে। পেইজগুলোতে ৪ ঘণ্টা পর পর রাস্তাঘাট, রেল, ট্রেন ও নৌপথের সারা দেশের সকল পথের অবস্থার আপডেট দেওয়া হবে। এছাড়া প্রতিটি ব্যাটালিয়নের পেইজগুলোতে তাদের আওতাভুক্ত এলাকার আপডেট দিবে। প্রয়োজন মনে করলে জনসাধারনরা আপডেট দেখে বের হতে পারেন। সব পথের অবস্থা জেনে সবাই সেই সুযোগটা নিবেন।
ঈদ পরবর্তী হাইওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায় উল্লেখ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, এসব দুর্ঘটনার মূল কারন হচ্ছে চালকরা ছুটিতে থাকে। ফলে হেলপাররা গাড়ী চালায়। তিনি গত ঈদে সড়কে ১৩৭ জনের প্রাণহানী ঘটেছে উল্লেখ করে বলেন, অযথা এসব প্রাণহানীর কোনো কারণ হয়না। তাই এবার হাইওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ঈদের পরদিন থেকে তিনদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত র্যাবের বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট থাকবে। যানবাহনের ওভারস্পিডিং নিয়ন্ত্রণ লাইসেন্সবিহীন চালকদের নজরদারি করা হবে। ঈদের সময় হেলপারের হাতে গাড়ি না দিতে মালিকদের আহ্বান জানান এবং খোলা ট্রাকে যাত্রী না তুলতে চালকদের ও যাত্রী না হতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
মাদকের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, অনেকে গডফাদার গডফাদার করছেন। কিন্তু এমন সব ব্যক্তিকে দুই-আড়াইলাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদেরকে কেউ চিনেও না। ঈদের সময় মাদক পাচার বাড়তে পারে, সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি থাকবে। এছাড়া কারো কাছে এ বিষয়ে তথ্য থাকলে আমাদের জানাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা একটি চলমান বিষয়। তালিকার বাইরেও আমরা ব্যবসায়ীদের পাচ্ছি, তবে এ বিষয়ে বিস্ময়ের কিছু নেই। তালিকা প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করা হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ ডিজি বলেন, ঈদ উপলক্ষে ‘থ্রেট’ না থাকলেও সব ধরনের থ্রেটের বিষয় আমাদের মাথায় রয়েছে। আন্ডারগ্রাউন্ড বা সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। র্যাব কখনো জঙ্গিদের থেকে দৃষ্টি সরাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গি সংগঠনের পুনরুত্থান পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। যেন উত্থান না হয় সেজন্য কাজ করতে হবে। আমরা সার্বক্ষণিক এ অপপ্রয়াসরোধে কাজ করছি।
তিনি বলেন, র্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নে অ্যান্টি টেরোরিজমের বিশেষ ইউনিট ছিলো। কিন্তু এখন মাদকের জন্য একটি এবং সাইবার পেট্রোলিংয়ের জন্য আরো দুটি বিশেষ ইউনিট কাজ করছে। এ সময় কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরামুল নিহতের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে নির্বাহী তদন্তের আগ পর্যন্ত মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।