বিনোদন ডেক্স::
ফজলুল কবির তুহিন। সব্যসাচী এই মিডিয়া ব্যক্তিক্তের জন্ম মেঘপাহাড় হাওর বাওর ও আউল বাউলের দেশ খ্যাত সুনামগঞ্জে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়া তুহিনের পিতা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর। দুইবারের সাংসদ পিতা অ্যাডভোকেট আব্দুর রইছ ছিলেন সুনামগঞ্জ সর্বদলীয় মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের সদস্য।
ফজলুল কবির শৈশব থেকেই মন ও মননে লালন করছেন অসাম্প্রদায়িকতা। মহান মুক্তিযুদ্ধ তার কাছে বাঙ্গালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ট অর্জন। আর মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার কাছে জাতিরাষ্ট্রের জন্মদাতা।
ফজলুল কবির তুহিন প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে মিডিয়ায় প্রবেশ করেন। হুমায়ূনের কালজয়ী চরিত্র হিমু নামে অভিনয় করেছেন। হুমায়ূন আহমেদের অসংখ্য ছবি, নাটকে অভিনয় করেছেন। নিজেও নির্মাণ করেছেন অসংখ্য নাটক। তিনি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ম্যাজিক কিডসের চেয়ারম্যান। সম্প্রতি তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বাড়ি ‘‘ধানমণ্ডি’ ৩২’’ নির্মাণে হাত দিয়েছেন। কাজও অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। নিজস্ব অর্থায়ন, নিজের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় নির্মিতব্য এই ডকুফিল্মটি নির্মাণের শুরুতেই প্রশংসা লাভ করেছে। সম্প্রতি অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কম এই ডকু ফিল্ম নিয়ে তার একটি দীর্ঘ স্বাক্ষাৎকার নিয়েছে। নিভৃতচারী এই সব্যসাচী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সেই স্বাক্ষাৎকারটি প্রিয়ডটকমের সৌজন্যে হাওরটোয়িন্টেফোরডটনেটের পাঠকদের সামনে তোলে ধরা হলো।-সম্পাদক।
‘‘ধানমণ্ডি’ ৩২ নং’ নামটা শুনলেই যেন শিউরে উঠে পুরো বাঙালি জাতি। কারণ এই নামটার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। রাজধানী ঢাকার এই সড়কেই যে অবস্থিত এই জাতির পিতার বাসভবন। এই বাড়ি থেকেই তিনি দিয়েছেন বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বাদ। শুধু তাই নয়, এই বাড়িতেই নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে জাতির পিতাকে। এখন এই বাড়িটি যেন শুধুই স্মৃতি। পুরো বাড়িটিকে করা হয়েছে মিউজিয়াম। যা আজও বাঙালি জাতিকে মনে করিয়ে দেয় জাতির পিতার সংগ্রামের কথা, বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দেয়ার পিছনের কষ্টের কথা।
তবে এই বাড়িটি ঘিরে বঙ্গবন্ধুর রয়েছে অনেক স্মৃতি। আর সেই স্মৃতিগুলো তুলে ধরতে ডকুফিল্ম নির্মাণ করছেন ফজলুল কবীর তুহিন। তার এই ডকুফিল্মের নামও রেখেছেন ‘‘ধানমণ্ডি’ ৩২ নং- অ্যা হোল্ডিং আইডেনটিটি অব অ্যা ন্যাশন স্টেট’। সম্প্রতি তিনি এসেছিলেন প্রিয়.কম-এর অফিসে। সঙ্গে ছিল তার এই ডকুফিল্মের সঙ্গে যুক্ত চিত্রগ্রাহক আযহারুল হক, প্রধান সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান ফারুক এবং মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর উজ্জ্বল দাশ। পরিচালক ফজলুল কবীরের সঙ্গে কথা হল এই ডকুফিল্ম নিয়ে। তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল প্রিয় পাঠকদের কাছে।
প্রিয়.কম: ‘‘ধানমণ্ডি’ ৩২ নং’ নিয়ে চিন্তাটা কিভাবে আসলো?
তুহিন: বাচ্চাদের জন্য আমার একটা চ্যানেল আছে ‘ম্যাজিক কিড’। অনেক দিন ধরেই এইটার সঙ্গে আমি জড়িত। এই কাজের জন্য অনেক বাচ্চারা আসেন অডিশন দিতে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখলাম অনেকের মধ্যেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সঠিক ধারণা নেই। স্বাধীনতা সম্পর্কে অনেকেই অনেক কিছু জানে না। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তার সম্পরকেও যেন ধারণা অনেকটাই অজানা তাদের কাছে। তখনই আসলে আমাকে এটি ভাবিয়ে তুলে। কারণ বঙ্গবন্ধু তো শুধু স্বাধীনতার জন্য বিখ্যাত না তিনি হলে পুরো বাঙালির জাতির পিতা। আমাদের বাঙালি জাতির প্রতি তার যে অবদান সেটা যদি আমরা স্বাধীনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি তাহলে চলবে না। তাই সেখান থেকেই মূলত আমার এই চিন্তা। আমাদের ভবিষ্যৎ জেনারেশনের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতে চাই এই ডকুফিল্মের মাধ্যমে।
প্রিয়.কম: শুরুটা কিভাবে করলেন?
তুহিন: এই ডকুফিল্ম নিয়ে আমার আগ্রহের কথা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে জানাই। মিটিং করি, একটা স্ক্রিপ্ট রেডি করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আমরা বসি। তারপর তিনি সেই লাইনআপ দেখে এটি নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেন। এরপর তো কাজ শুরু করে দেই। এটির চিত্রনাট্য লিখেছি আমি আর এর দৈর্ঘ্য ৩০ মিনিট।
প্রিয়.কম: এই ডকুফিল্মের নাম ‘‘ধানমণ্ডি ৩২’’ কেন?
তুহিন: আসলে এখানে তার বাড়ি ঘিরে রয়েছে হাজারো স্মৃতি। এখানে রয়েছে তার রাজনৈতিক জীবনের গল্প, দেশ নিয়ে তার পরিকল্পনা, স্বাধীনতার পিছনের গল্প, তার সঙ্গে কাজ করা অনেক নেতার কথা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আসলে এর নামকরণ ‘ধানম-ি ৩২নং’।
প্রিয়.কম: এই ডকুফিল্ম পিছনে অনেক গবেষণার বিষয় রয়েছে। এই বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
তুহিন: আমাদের গবেষণার জন্য পাঁচ জনের একটা দল আছে। যারা দিনরাত এটি নিয়ে গবেষণা করছে। আসলে এটি নিয়ে আমাদের গবেষণা শুরু হয়েছে দু বছর আগে। তবে গত ছয় মাস ধরে আমরা প্রতিনিয়ত গবেষণা শুরু করেছি। আর এই জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট মেমোরিয়াল আমাদের অনেক সহযোগিতা করছেন। যেকোনো তথ্য প্রয়োজন হলে আমরা তা পাচ্ছি। জাতির পিতার আপন ঠিকানা আর তাঁর যাপিত জীবনের নানা চড়াই-উৎরাইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে ৩২নং ধানম-ি।
প্রিয়.কম: এমন কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত কেউ নেন নি, কারণ এই বিষয়গুলোর সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক ব্যাপার জড়িত থাকে। আপনি কি এটি নিয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?
তুহিন: এখন পর্যন্ত আমরা কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। আর এই বিষয় নিয়ে আমরা খুবই সচেতন। আমাদের এই উদ্যোগ যেন কোনভাবে কোন শ্রেণী যেন অপব্যবহার করতে না পারে সেদিক দিয়ে আমরা খুবই খেয়াল রাখছি। কারণ এ বিষয়টা নিয়ে সবারই আগ্রহ রয়েছে।
প্রিয়.কম: এখন এই ডকুফিল্ম কি অবস্থায় রয়েছে এবং কবে নাগাদ এটি শেষ হবে?
তুহিন: আমরা প্রথমেই এই ডকুফিল্মের স্ক্রিপ্টের সিনপসিস ভিডিও নির্মাণ করেছি। এখন আমাদের শুটিংয়ের কিছু অংশ শেষ করে ফেলেছি। ধানম-ি ৩২নং এ দুদিন শুটিং হয়েছে আরও দুদিন লাগবে। তাছাড়া আরও কিছু জায়গায় শুটিংয়ের অংশ বাকি আছে। তাছাড়া ১০-১৫ দিনের একটা স্টুডিও শুটও রয়েছে আমাদের। আশা করি সব কিছু মিলিয়ে অক্টোবরের মধ্যেই আমাদের কাজ পুরোপুরি ভাবে শেষ হয়ে যাবে। আর ডিসেম্বরে মুক্তি দিতে পারবো।
প্রিয়.কম: আপনার এই ডকুফিল্মের অর্থ বিনিয়োগ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
তুহিন: আমরা আমাদের নিজেদের অর্থ দিয়েই এটি নির্মাণ করছি। কারণ এই বিষয়টি নিয়ে যেন কেউ ব্যবসা করতে না পারে সেই বিষয়টি মাথায় রাখছি। অর্থ অবশ্যই বড় একটা ব্যাপার। কারণ এটি নির্মাণ করতে আমাদের আরও অনেক অর্থ প্রয়োজন। তবে অনেকেই ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কিন্তু আমরা এখন এই বিষয়টি নিয়ে খুবই সাবধানতার সঙ্গে কাজ করছি।
প্রিয়.কম: এই ডকুফিল্মে ড্রামাটিক্যাল অংশ রয়েছে, এই অংশে বঙ্গবন্ধু চরিত্রের জন্য কে অভিনয় করছেন?
তুহিন: আসলে বঙ্গবন্ধুর আদলে কাউকে পাওয়া খুবই কঠিন কাজ। আর আমরা এই অংশে সেভাবে উপস্থাপন করবো না যাকে আমরা এই চরিত্রের জন্য নির্বাচন করবো। কারণ তার চরিত্র ফুটিয়ে তোলা খুবই কঠিন কাজ। তবে চরিত্রের জন্য একজনকে আমরা খুঁজছি যাকে দিয়ে এই চরিত্রের কিছু অংশ আমরা দেখাতে পারবো।
প্রিয়.কম: ‘ধানম-ি ৩২নং’ দর্শক কিভাবে পাবে?
তুহিন: আমরা এটি নির্মাণের পর একটা প্রিমিয়ার শো করবো। এর জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়ালে একটি থিয়েটার দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। তাছাড়া আমরা একটি ভ্যানে হোম থিয়েটার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবো এবং বাচ্চাদের স্কুলে এটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবো।
প্রিয়.কম: আন্তর্জাতিক কোন পর্যায়ে দেখানো হবে?
তুহিন: ইতিমধ্যে আমরা দেশের বাইরের বিভিন্ন চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা খুব আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখন দেখা যাক কি হয়।
প্রিয়.কম: ‘ধানম-ি ৩২নং’ ডকুফিল্ম নির্মাণ করছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণ করার কোন ইচ্ছে রয়েছে এই বিষয় নিয়ে?
তুহিন: অবশ্যই রয়েছে। আমাদের এই ডকুফিল্ম যদি সফলতা পায় তাহলে আমরা চলচ্চিত্র বানানোর কাজেই মনোযোগ দেবো।