অনলাইন ডেক্স:
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিক জাগ্রত বাংলার সম্পাদক সুবর্ণা নদীকে (৩২) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশ মামলার প্রধান আসামি নদীর সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বাসার সামনে এই নারী সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
পাবনা সদর থানার ওসি উবাইদুল হক জানান, নদী হত্যার ঘটনায় গতকাল দুপুরে তাঁর মা মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ছয়-সাতজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। যে তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা হলেন নদীর সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেন, সাবেক স্বামী রাজীব ও আবুল হোসেনের কর্মচারী মিলন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিজ কার্যালয় থেকে আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
আবুল হোসেন শহরের শিমলা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী। তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) গৌতম কুমার বিশ্বাস।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, হত্যাকাণ্ডের পর নিহত নদীর বোন চম্পা খাতুন পুলিশকে জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার সকালে পাবনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে নদীর দায়ের করা একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে যান তিনি (চম্পা)। নদীর সাবেক স্বামী রাজীবের বিরুদ্ধে মামলাটি নদীই দায়ের করেছিলেন। এই মামলা করার পর থেকে রাজীব ও তাঁর বাবা আবুল হোসেন নদীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।
এর জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে চম্পা মনে করছেন।
গতকাল দুপুরে নদীর মা মর্জিনা বেগম পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, মামলা দায়েরের পর থেকে নদীকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল আসামিপক্ষ। মামলার এজাহারেও তিনি বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ রোডে অবস্থিত নিজ কার্যালয় থেকে রাধানগর মহল্লায় ভাড়া বাসায় ফেরার সময় আক্রান্ত হন সুবর্ণা আক্তার নদী। বাসার সামনে মুখ ঢাকা দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে চলে যায়। পাবনা সদর হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত নদীর সাত বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, বাসার ফটক খোলার সময় ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা নদীর ওপর হামলা চালায়।
পাবনা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর গতকাল দুপুর ২টার দিকে নদীর মরদেহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকেল সাড়ে ৫টায় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে জানাজার পর স্থানীয় বালিয়াহালট কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এদিকে নদী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে পাবনায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। মানববন্ধন থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তাঁরা হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশে প্রেস ক্লাবের সভাপতি শিবজিত নাগ, সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, সম্পাদক আঁখিনূর ইসলাম রেমন, সাবেক সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আমাদের লক্ষ্মীপুর, রাজবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ প্রতিনিধিরা জানান, সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। নদী হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
তথ্যমন্ত্রীর নিন্দা ও ক্ষোভ : নদী হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল তথ্যমন্ত্রী হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন এবং দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক ও পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতির সঙ্গে টেলিফোনে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এদিকে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দেওয়া বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ মর্মান্তিক ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। হত্যাকারীদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ তৎপরতার আহ্বান জানাই। ’