অনলাইন ডেক্স::
রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে জাতিগত নিধনের উদ্দেশ্যে গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে জাতিসংঘ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সরকার। এ গণহত্যা প্রতিরোধে শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী ও দেশটির কার্যত সরকার প্রধান অং সাং সুচি ব্যর্থ হয়েছেন বলে যে দাবি করা হয়েছে সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার।
দেশটির সরকারের এক মুখপাত্র জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বক্তব্য দিয়েছেন। খবর ইরাওয়াদ্দির।
সোমবার জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট অফিসের মুখপাত্র ইউ জ্য হ্যাই এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে বলতে গেলে মিয়ানমার ইউএনএইচসিআর এর গঠন করা মিশনকে গ্রহণ করেনি। তাই আমরা মিশন এর কর্ম প্রত্যাখ্যান করছি’।
সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন মিয়ানমারের ঘটনার এক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে গত বছরের মার্চে এ কমিশন গঠন করে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা।
মুখপাত্র বলেন, ‘মিয়ানমার ইউএনএইচআরসি এর রেজল্যুশন থেকে গত বছর সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের গঠন প্রক্রিয়া প্রত্যাখান করেছে। যখন এই মিশন মিয়ানমারে পরিদর্শনের অনুমতি চেয়েছিল তখন আমরা তাদের অনুমতি দিইনি। আমার বলেছিলাম আমরা তাদের রেজ্যুলেশনের সঙ্গে একমত নই।’
তবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্যরা এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বারবার যোগযোগা করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি প্রতিবেদন প্রকাশের আগেও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করার আহ্বান জানালেও কোনো সাড়া দেয়নি অং সাং সুচির সরকার। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থায় গ্রহণ করেননি দেশটির নেত্রী অং সাং সুচি। তার ব্যর্থতাও প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার।
সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিতে কয়েকশ’ মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জাতিসংঘের দিক থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর ভাষায় নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
রাখাইন অঞ্চলে প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকির তুলনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ অনেক বেশি অসম ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের শীর্ষ ছয় সামরিক কর্মকর্তার বিচার হওয়া প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা থামানোর জন্য হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’র কড়া সমালোচনাও করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।
এছাড়া, ঘটনা বিচারের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সামরিক প্রয়োজনে নির্বিচারে হত্যা, গণধর্ষণ, শিশুদের ওপর হামলা এবং পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেবার বিষয়টি কখনো সমর্থনযোগ্য হতে পারে না’।
এ প্রতিবেদনে রাখাইন অঞ্চল ছাড়াও মিয়ানমারের কাচিন এবং শান অঞ্চলের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ওইসব এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্রও উঠে এসেছে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে।