অনলাইন::
ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মন দিয়ে পড়াশোনা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেথ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শিখতে হবে। সব থেকে বড় সম্পদ হচ্ছে শিক্ষা। ধন-সম্পদ চিরদিন থাকে না। কেউ যদি অনেক সম্পদ বানিয়ে গর্ব করে— চিরদিন তা ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু শিক্ষা এমন একটা সম্পদ, যে সম্পদ কেউ ফেলে দিতে পারে না।’
শুক্রবার (৩১ আগস্ট) শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে ছাত্রলীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। গণভবনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সভায় সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্রতিটি ছেলেমেয়েকে সবার আগে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় সম্পদ। আর সেই শিক্ষা ও আদর্শ নিয়েই রাজনীতি করতে হবে।’
ছাত্রলীগের ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত আন্দোলন হয়েছে, সেখানে যদি শহীদদের তালিকা দেখি, ছাত্রলীগের শহীদদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই বার বার অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’
ছাত্রলীগকে আদর্শের সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ছাত্রলীগকে সংগঠন হিসেবে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে, একটা আদর্শের সংগঠন হিসেবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার তো বয়স হয়ে গেছে, কাজেই তোমরাই হবে ভবিষ্যৎ। তোমরা নেতৃত্ব দেবে। কাজেই তোমাদেরকেই আদর্শের পতাকা সমুন্নত রেখে প্রগতির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, তোমাদের আদর্শ— শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। কাজেই শিক্ষার আলো জ্বেলে প্রগতির পথ ধরে শান্তির মশাল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ-শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে লক্ষ্য আমরা নির্ধারণ করেছি, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার যতটুকু করার তা করে যাবো, তারপর তো তোমাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘এদেশের মানুষের অধিকারের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন আমার বাবা-মা। তারা জীবন দিয়ে গেছেন, কিন্ত জাতির পিতার আদর্শের তো মৃত্যু নেই। আর সেই আদর্শ নিয়েই আমরা চলছি। সেই আদর্শ নিয়েই এদেশকে আমরা গড়ে তুলবো, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে আদর্শের পথ জাতির পিতা দেখিয়ে গেছেন, সে আদর্শের পথ ধরেই আজকে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে আমরা উন্নীত হতে পেরেছি। জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলেছি বলেই সেটা করা সম্ভব হয়েছে।’
সাম্প্রতিক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুটি শিশু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলো। এটা দেখে বিভিন্ন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। তাদের এই বিক্ষুব্ধ মনকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য একদল নেমে পড়লো। এর মধ্যে অনেকেই জ্ঞানী-গুণী। অনেকেই আঁতেল। অনেকে একেবারে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন। খ্যাতি সম্পন্নরা কী করেছে?’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমি গড়ে দিয়েছি, আর সে সুযোগ নিয়ে তাদের কাজ হয়ে গেলো— সোশ্যাল মিডিয়াতে অপপ্রচার চালানো, মিথ্যা বানোয়াট বলে বলে মানুষকে উসকানি দেওয়া। এই উসকানিতে কত শিশুর জীবন যেতে পারতো। কত শিশু বিপদে পড়তে পারতো। একবারও তারা ভাবলো না। বরং শিশুদের বিক্ষুব্ধ মনকে কাজে লাগিয়ে তারা ফায়দা লুটতে চেয়েছে। আর তাদের প্রতি যখন ব্যবস্থা নিলাম, তখন চারদিকে হাহাকার। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও বিভিন্ন চাপ।’
নিজের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মাথায় রাখা উচিৎ। আমি স্কুল জীবন থেকে রাজনীতি করি, আইয়ুব খানের আমল থেকে। আমাদের পরীক্ষায় ২০ নাম্বারের পাকিস্তান আমল নিয়ে একটা চাপটার ছিল। আমি পণ করেছি, পাকিস্তান নিয়ে আমি লিখবো না। লিখিনি। এজন্য ফেল করতে পারতাম। থার্ড ডিভিশন পেতে পারতাম। আমি আপস করিনি। কাজেই আমি সেই মানুষ। নীতির প্রশ্নে আপস নাই। এটাই আমার শেষ কথা। ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করছি। কখনও কোনও পদ পদবির জন্য রাজনীতি করিনি। সংগঠনের প্রয়োজনের জন্য যেটা হওয়ার দরকার, সেটা হয়েছে। আমার নিজের প্রয়োজনে কিছু হয়নি। আমি, কামাল আমরা সবাই কাজ করেছি সংগঠনের জন্য, দলের জন্য।’