বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জে বিএনপি নেতা রাহেল মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার প্রতিবাদে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নোয়াখালি বাজারে ক্ষুব্দ এলাকাবাসী বাস ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করায় গত শুক্রবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে সুনামগঞ্জ জেলা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গত দুই দিন দিরাই মদনপুর সড়কে ধর্মঘটটের পর আজ রবিবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জ জেলায় ব্যাপী এই ধর্মঘট পালন করছে শ্রমিক মালিকরা। তাদের দুর্ভোগের ধর্মঘটের ফলে হাজার হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। বাস, লেগুনা, সিএনজি, প্রাইভেট কার, মোটর সাইকেলসহ সবধরনের যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা করছে মালিক শ্রমিকরা। দূরপাল্লার বাসসহ বাস মিনিবাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ছোট পরিবহনে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদেরকে যানবাহন থেকে নামিয়ে দিয়ে চালকের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সুনামগঞ্জ বাসস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় বাসগুলো সারি সারি করে রাখা হয়েছে। বিরতিহীন কাউন্টার গুলোও বন্ধ। দূর দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা রাস্তায় দুঃসহ গরমে অপেক্ষা করছেন। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন উপজেলা থেকে জরুরি কাজের জন্য আসা কিছু যাত্রী মোটর সাইকেল, সিএনজি ও লেগুনা দিয়ে আসার চেষ্টা করলে বাসস্টেশনেই তাদের নামিয়ে দিচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। কেড়ে নিচ্ছে চালকদের চাবি। এ নিয়ে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলে তাদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। ভয়ে ছোট যানবাহনের চালকরাও কিছু বলতে চায়নি। এসময় দেখা গেছে ট্রাক, পিকআপ, ভ্যান, মোটর সাইকেল, সিএনজি ও লেগুনাসহ অন্তত ৩০টি যানবাহন আটকে রাখা হয়েছে। চাবি দিতে অস্বীকার করায় কয়েকজন চালকবে মারধরও করা হয়েছে। মোটর সাইকেল চালক শফিকুল একজন রোগির স্বজনকে নিয়ে হাসপাতালে আসার পথে তার মোটর সাইকেলটি আটকে দেয় শ্রমিকরা। এসময় বাধা দিলে এই প্রতিবেদকের সামনেই তাকে চড়থাপ্পর দেয় একজন শ্রমিকরা।
এদিকে নিজেদের স্বার্থে পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার বিভিন্ন সড়কে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রী। বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে আসা ২০-২৫ জন যাত্রীকে সুনামগঞ্জ বাসস্টেশনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেকা গেছে। তারা মোটর সাইকেল করে সিলেটে গিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাস ধরতে চাইলে ট্যুরিস্টদেরও নামিয়ে দেন পরিবহন শ্রমিকরা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে শুধু বাসস্টেশনই নয় পাগলা, নীলপুর, মদনপুর পয়েন্ট, ডাবর পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানেই পরিবহন শ্রমিকরা সবধরনের যান চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। চালকদের চাবি আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। সবধরনের গণপরিবহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে অনেক রোগীকে নিয়ে গন্তব্যে যেতে চাইলেও তাদেরকে ছোট যানবাহন থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রবিবার বেলা পোনে ১১টায় বাসস্টেশনে সিএনজি দিয়ে পাগলাবাজার যাওয়ার জন্য সুভাষ পাল তার অন্তস্বত্বা স্ত্রীকে নিয়ে রওয়না দেন। কিন্তু বাসস্টেশনে তাদের নামিয়ে দেয় শ্রমিকরা। কেড়ে নেয় চালকের চাবি। তিনি তার অন্তস্বত্তা স্ত্রীর দোহাই দিয়েও রেহাই পাননি। সুভাষ পাল বলেন, আমার স্ত্রী অন্তস্বত্তা। তাকে দেখেও নামিয়ে দিয়েছে সিএনজি থেকে। এখন রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। তার কষ্ট হচ্ছে গরমে।
যাত্রী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাস চালক ও বাস মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে একটি দুর্ঘটনার পর এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেছেন। এখন সবগুলো যানবাহন বন্ধ করে ধর্মঘট করা বেআইনি ও অন্যায়। এটা নৈরাজ্য ও অমানবিক। এদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের সংগঠিত হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, নিজেদের স্বার্থে সারা জেলার যাত্রীদের জিম্মি করাটা সন্ত্রাস।
এদিকে অনির্দিষ্টকালের হঠাৎ ধর্মঘটের ফলে সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধসহ জেলার আভ্যন্তরিণ সকল সড়কে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মোড়ে মোড়ে শ্রমিক মালিক পরিষদের কর্মীরা টহল দেওয়ায় কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছেনা। বাস মিনিবাস, দূরপাল্লার বাসসহ সবধরনের যানচলাচল বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কসহ জেলার অভ্যন্তরিণ সকল সড়কে।
সুনামগঞ্জ পরিবহন শ্রমিক-মালিক ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মো. জুয়েল মিয়া বলেন, দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকগুলো ভাংচুর করা হয়েছে। আমরা নিরাপত্তার দাবিতে এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে আজ অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছি। তাছাড়া আমাদের দাবির মধ্যে রাস্তাঘাট সংস্কারের বিষয়টিও আছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা না থাকলে শ্রমিকরা কিভাবে গাড়ি চালাবে।
সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল হক বলেন, পুলিশের সামনে আমাদের গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। আমাদের পরিবহন ও শ্রমিকদের কোন নিরাপত্তা নেই। নিরাপত্তার দাবি ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আমরা স্থানীয়ভাবে দুই দিন ধর্সঘটের পর আজ থেকে জেলা ব্যাপী অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, আমরা আজকেই মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আবেদন জানাবো। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য গত বৃহষ্পতিবার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাহেল মিয়া বাসচাপায় মারা যান। এর প্রতিবাদে এলাকাবাসী যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।