আশা সানোয়ারা:
রংপুরে তিস্তা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর ওপর দুটি সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতু’ এবং ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’র উদ্বোধন করেছেন তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত হবে, ততই জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে মাথায় রেখেই সরকার দেশের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে’।
এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি বাংলাদেশে প্রথম ‘ওয়াই’ আকৃতির সেতু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের স্বপ্নের সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতু’।
বাঞ্ছারামপুর থেকে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর এবং হোমনা যাওয়ার জন্যে এতদিন খেয়া এবং নৌকায় করে তিতাস নদী পাড়ি দিতে হতো। এতে কয়েক ঘণ্টা সময় পথেই নষ্ট হতো। বিকল্প কোনও পথ না থাকায় খেয়াঘাটে সময় নষ্ট হতো। রোগী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ছিল সীমাহীন। তবে এখন সেতুটি নির্মাণের ফলে অল্প সময়ে সড়ক পথে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
ওয়াই সেতুটি নির্মাণের ফলে বদলে যাবে কুমিল্লার মুরাদনগর, হোমনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের জীবন ও জীবিকা। নদীর ত্রি-মোহনার দুই অংশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সলিমাবাদ ও ফরদাবাদ এবং কুমিল্লার হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে এই সেতু। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৭৭১ দশমিক ২০ মিটার এবং প্রস্থ ৮ দশমিক ১০ মিটার।
বাংলাদেশ সরকারের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ৯৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। যান-চলাচলের উপযোগী অংশ ৬.১ মিটার। এর উভয় পাশে ফুটপাত রয়েছে। এছাড়াও রাতে নিরাপদে চলাচল করার জন্য সেতুটিতে স্থাপনা করা হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। সেতুটির নিচ দিয়ে নিরাপদে নৌযান চলাচলের জন্য নূন্যতম উচ্চতা রাখা হয়েছে ৭.৬২ মিটার।
এদিকে ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ চালুর ফলে লালমনিরহাট জেলার চার উপজেলাসহ বৃহত্তর রংপুরের কোটি মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হলো। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা এবং বিভাগীয় শহর রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাটের কয়েকটি উপজেলার দূরত্ব কমিয়ে আনতে কাকিনা-মহিপুর এলাকায় দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।
৮৫০ মিটার দীর্ঘ ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সেতুর সংযোগ সড়কটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে যুক্ত হয়েছে।
মূল সেতুর সংযোগ সড়কের কাকিনা অংশে তিনটি কালভার্ট ও দুটি ছোট সেতু রয়েছে। এছাড়া মূল সেতু ও সড়ক জুড়ে রয়েছে আলোর ব্যবস্থা।
এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার তিন উপজেলার সীমান্তের তিতাস নদীর ওপর নির্মিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘ওয়াই সেতু’ এবং লালমনিরহাট জেলার চার উপজেলাসহ বৃহত্তর রংপুরের কোটি মানুষের প্রাণের দাবি ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’।