অনলাইন::
পানিশূন্যতায় খোঁড়াতে থাকা মুস্তাফিজুর রহমান দাঁড়ালেনই না শুধু, বোলিংও করলেন।
শেষ ওভারে যখন জেতার জন্য ৮ রান দরকার আফগানিস্তানের, তখন তাঁর হাতেই বল তুলে দেওয়া অধিনায়ককে আস্থার প্রতিদানও দিলেন ‘কাটার মাস্টার’। উইকেটও তুললেন, শেষ বলে ৪ রানের প্রয়োজনের মুখে দাঁড়ানো আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যান সামিউল্লাহ শেনওয়ারিকে রানও তুলতে দিলেন না। তাঁর হাত থেকে বরং ব্যাট ছুটে গেল। এবং সেই সঙ্গে ম্যাচও হাত ফসকে গেল তাঁদের। আর হারের সম্ভাবনার মুখে দাঁড়ানো বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতল ৩ রানে।
যে জয়ে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ টিকেই থাকল না শুধু, ফাইনালে ওঠার পথও খুলে রাখল। দুবাইতে পাকিস্তানকে অনায়াসে হারিয়ে ভারত ইতিমধ্যেই ফাইনালের টিকিট কেটে ফেলেছে। আর বাংলাদেশের কাছে হারে বিদায় নিয়েছে আফগানিস্তানও। টিকে থাকা বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যকার ২৬ সেপ্টেম্বরের ম্যাচটি তাই হয়ে উঠেছে এই এশিয়া কাপের অঘোষিত সেমিফাইনালও।
ফাইনাল ভাগ্য নির্ধারণী ওই ম্যাচও হবে এই আবুধাবিতেই। এর আগে এখানেই আফগানদের হারিয়ে টানা দুই ম্যাচ হারার পর আত্মবিশ্বাসের পালেও জোর হাওয়া লাগিয়ে রাখল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
অধিনায়ক নিজেও কাল সেরা ছন্দে ছিলেন না। অন্যদের তুলনায় একটু খরুচেও ছিলেন। তবু ডেথ ওভারে বোলিংয়ের ঝুঁকি ঠিক নিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রচুর গরমে টানা খেলার ধকল তাঁর ওপর প্রভাব ফেলছে। তবু হাল ছাড়লেন না। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক আসগর আফগান (৩৯) এবং উইকেটে ভালোভাবেই থিতু হওয়া হাসমতউল্লাহ শহিদির (৭১) পার্টনারশিপ ৭৮ রানে থামালেন। আগে গেলেন আসগর, তিন ওভারের মধ্যে শহিদিকেও বোল্ড করে ছুটে যেতে থাকা ম্যাচের লাগামও ধরলেন মাশরাফি।
কিন্তু সেই লাগামও ছুটে আবার আফগানদের হাতে চলে গেল। সেখান থেকে দুর্দান্ত শেষ ওভারে মুস্তাফিজ অঙ্ক ঘুরিয়ে দিলেন। হারতে থাকা ম্যাচে জেতালেন। তাঁর ওই শেষ ওভার থেকে এসেছে ৪ রান (এর মধ্যে দুটো লেগ বাই)। সুবাদে শেষ বলে ভাগ্য নির্ধারণ হওয়া ম্যাচ জিতে এখনো টিকে থাকা বাংলাদেশের ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্নও ঝলমলিয়ে উঠতে বাধ্য। অথচ টপ অর্ডারের পর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কারো কারো আত্মহননের মিছিলের মধ্যেও কিছু ইতিবাচক ব্যাপার ছিল। ছিল বলেই অল্প পুঁজি জমা হওয়ার কথা থাকলেও জমল আরো অনেক বেশি। কারণ এর পরও ইতিবাচক অনেক কিছু থাকল। তবু ফলটা নেতিবাচক হতে বসেছিল।
শেষ পর্যন্ত যে তা হলো না, তাতে অবদান অনেকের। যেমন সাকিব আল হাসান কাটাকুটি খেলাই খেললেন। নিজের দোষে রানআউট হলেন, আবার কাভার পয়েন্ট থেকে তাঁর সরাসরি থ্রোতে রহমত শাহও একইভাবে ফিরলেন। তাই ব্যাটিংয়ে ক্ষতিকারক হলেও ফিল্ডিং কার্যকারিতায় পরে তা পুষিয়েও দিলেন।
দুর্বোধ্য রশিদ খানও এবার মাহমুদউল্লাহর বোধগম্য হয়ে গেলেন। গেলেন বলেই আফগান লেগস্পিনারের গুগলিতে এই এশিয়া কাপেও ধুঁকে আসা মাহমুদ স্লগ সুইপে মিড উইকেট দিয়ে মারলেন বিশাল দুটো ছক্কা। এর সঙ্গে আরো তিন বাউন্ডারিতে ৮১ বলে ৭৪ রানের ইনিংসে দলের মহাবিপদে ত্রাতা মাহমুদউল্লাহ দেখিয়েছেন বোলিং চাতুরীও। রান তাড়ায় ফিফটি করে ফেলা আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শেহজাদকে (৫৩) লেগের দিকে সরে গিয়ে ব্যাট চালাতে দেখে নিজের প্রথম ওভারেই বল একটু টেনেও দিলেন। তাতেই বোল্ড আফগান ওপেনার।
তবে সাকিব আর মাহমুদ তো এশিয়া কাপের শুরু থেকেই আছেন। যিনি ছিলেন না, সেই ইমরুল কায়েসই করলেন সবচেয়ে চমক জাগানিয়া কাজ। খুলনা থেকে ঢাকা হয়ে আগের রাতেই দুবাই পৌঁছানো এই ব্যাটসম্যান গতকাল দুপুরের মধ্যেই আবুধাবি। যাত্রার ধকলের সঙ্গে এখানকার উত্তাপের মধ্যেও যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন, তখন পরিস্থিতি হয়ে আছে উত্তপ্ত কড়াই। ক্যারিয়ারে এর আগে কখনো তিন নম্বরের পরে না নামা ইমরুল এবার নামলেন ছয়ে।
নামতে না নামতেই দলের ৮৭ রানে ৫ উইকেট নেই। সেখান থেকে মাহমুদের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সেরা ১২৮ রানের পার্টনারশিপ। সেটি ভাঙলেও অবিচল ইমরুল থেকে গেলেন। ৮৯ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৭২ রানের হার না মানা ইনিংসে দলকে পৌঁছে দিলেন ২৪৯ রানেও।
এই পুঁজিও ঠিক নিরাপদ থাকবে বলে মনে হচ্ছিল না। কিন্তু ডেথ ওভারে নিজের সেরা ছন্দে না থাকা মাশরাফি এবং শেষ ওভারের মুস্তাফিজ সেই নিরাপত্তাহীনতা থেকে দলকে উদ্ধার করলেন। তাতে একটি ব্যাপার অটুটও থাকল। মুশফিকুর রহিম রানআউট হলে যে বাংলাদেশ ম্যাচ হারে না। এর আগে গত আট বছরে এ রকম পাঁচটি ম্যাচ গিয়েছে। এবার আফগানিস্তানকে হারিয়ে এর সঙ্গে যুক্ত হলো আরেকটি।