1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ অপরাহ্ন

আর্থিক অন্তর্ভূক্তি দারিদ্র্য হ্রাস সূচকে ৬৪ জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জের অবস্থান ৬১: ক্রম অবনতি

  • আপডেট টাইম :: শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ৬.৩৪ এএম
  • ৬৮৯ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেক্স::
আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে বিবেচনা করা হয় দারিদ্র্য হ্রাসের অন্যতম সূচক হিসেবে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও স্বল্প আয়ের মানুষকে আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার আওতায় আনতে চালু করা হয়েছে ন্যূনতম অর্থে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ক্ষুদ্রঋণ ও বীমা, মোবাইল ব্যাংকিংসহ আরো নানা সেবা। তার পরও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে পিছিয়ে রয়েছে অনেক জেলা।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির তালিকায় সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশের পাঁচটি জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জের অবস্থান ৪তুর্থ স্থানে। এই জেলার স্কোর শূন্য দশমিক ৪৭৮। এ স্কোর নিয়ে জেলাটির অবস্থান তালিকায় ৬১তম। যদিও ২০০৮ সালে শূন্য দশমিক ৩৯৩ স্কোর নিয়ে সুনামগঞ্জের অবস্থান ছিল ৫৬তম। জেলাটিতে দারিদ্র্যের হার ২৬ শতাংশ। গত জরিপের চেয়ে এবার ৬ ধাপ অবনতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সূচকের (আইএফআই) তালিকায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রাম। পিছিয়ে থাকা পাঁচ জেলার মধ্যে কুড়িগ্রামের পরই রয়েছে যথাক্রমে খাগড়াছড়ি, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও গাইবান্ধা। আর এ তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ঢাকা জেলা, তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিলেট। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির তালিকায় সুনামগঞ্জের উপরে রয়েছে গাইবান্ধা। শূন্য দশমিক ৫১৫ স্কোর নিয়ে জেলাটির অবস্থান তালিকায় ৬০তম। যদিও ২০০৮ সালে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে ছিল উত্তরাঞ্চলের জেলাটি। সে সময় গাইবান্ধার অবস্থান ছিল তালিকায় ৫৫তম। সর্বশেষ হিসাবে জেলাটিতে দারিদ্র্যের হার ৪৮ শতাংশ।

সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও স্বল্প আয়ের মানুষকে সহজে আর্থিক সেবা প্রদানের সুযোগ তৈরির কার্যক্রম হচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। চলতি শতকের শুরুর দিকে বিষয়টি গুরুত্ব পায়। দারিদ্র্যের সঙ্গে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সরাসরি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসার পরিপ্রেক্ষিতে এর গুরুত্ব আরো বাড়তে থাকে।
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় পূর্ণবয়স্ক মানুষের ৪৫ শতাংশ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যয়ের জন্য আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং খাতে সঞ্চয় করে থাকে। যদিও বাংলাদেশে এ ধরনের সেবার আওতায় এসেছে মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা কুড়িগ্রামের স্কোর শূন্য দশমিক ৪৩৮। ২০০৮ সালের তালিকায় জেলাটির অবস্থান ছিল ৬৩তম। এ হিসাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির তালিকায় এক ধাপ পিছিয়েছে জেলাটি।
কুড়িগ্রামে দারিদ্র্যের হারও উচ্চ, ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রায় প্রতি বছরই বন্যায় গৃহহীন হয়ে পড়ে জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ। আবার নদীভাঙনে হারিয়ে যায় আবাদি জমি। এসব কারণে সারা বছরই অভাব-অনটনে থাকতে হয় জেলার বাসিন্দাদের। দারিদ্র্যপীড়িত এ অঞ্চলকে একসময় মঙ্গাকবলিত বলেও অভিহিত করা হতো। বর্তমানে মঙ্গার ভয়াবহতা না থাকলেও দূর করা যায়নি দারিদ্র্য। সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলে কাজের সুযোগ না থাকায় অধিবাসীদের বড় একটি অংশ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন চোরাচালানকে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে ঢুকতে আগ্রহী হন না তারা।
আবার যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেও উৎপাদিত পণ্য সঠিকভাবে বিপণন করতে পারেন না জেলার কৃষকরা। আর্থিক সক্ষমতা না থাকার কারণেও ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসতে পারছেন না তারা। এছাড়া পর্যাপ্ত গ্রাহক না থাকায় ব্যাংকগুলোও এ অঞ্চলে শাখা বিস্তারে আগ্রহী নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংও। প্রতিদিনের আয় ও ব্যয়ের পর সঞ্চয়ের সুযোগ না থাকা, ব্যাংকের লেনদেনে দীর্ঘসূত্রতাসহ আরো নানা কারণে এ সেবা গ্রহণে আগ্রহী নন তারা। এমনই একজন কুড়িগ্রাম পৌর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী অতুল চন্দ্র। তিনি বলেন, কুড়িগ্রামে মাছ পাওয়া না গেলে রংপুর থেকে আনতে হয়। এজন্য নগদ টাকা দিতে হয়। ফলে ব্যাংকের সেবা গ্রহণের প্রয়োজন হয় না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই জেলাটি আর্থিক কর্মকা-ের বিবেচনায় পিছিয়ে রয়েছে। পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়, যার ইতিবাচক ফলও পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে এ গতি ধীর হয়ে এসেছে। এজন্য গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা ও পণ্য চালু করতে হবে। পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে ব্যাংকগুলোকে এ-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এজন্য দরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অগ্রগতি পরিমাপে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এগুলো হলোÍ প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য ব্যাংকের শাখার সংখ্যা, প্রতি এক হাজারজনে সঞ্চয় ও ঋণ হিসাবের সংখ্যা এবং জনপ্রতি সঞ্চয় ও ঋণের পরিমাণ। এসব তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সূচক (আইএফআই)। আর এ সূচকের মান অনুযায়ী তালিকা করা হয়েছে।
তালিকায় উচ্চক্রমে কুড়িগ্রামের আগের অবস্থানে থাকা খাগড়াছড়ির স্কোর শূন্য দশমিক ৪৫২। ২০০৮ সালে পার্বত্য জেলাটির অবস্থান ছিল ৬৪তম। এ হিসাবে আগের অবস্থান থেকে একধাপ এগিয়েছে জেলাটি। পাঁচ লাখের বেশি জনসংখ্যার খাগড়াছড়িতে দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে পিছিয়ে থাকা আরেক জেলা নেত্রকোনার স্কোর শূন্য দশমিক ৪৬৮। সর্বশেষ তালিকায় ৬২তম স্থানে থাকা জেলাটির অবস্থান ২০০৮ সালে ছিল ৫৯তম। এ হিসাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির তালিকায় নেত্রকোনার অবস্থান আরো খারাপ হয়েছে। জেলাটিতে দারিদ্র্যের হার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
চীনামাটি, সিলিকন বালি, পাথর ও কয়লার মতো প্রাকৃতিক সম্পদ থাকলেও এর যথাযথ ব্যবহারে নেত্রকোনায় কোনো কল-কারখানা গড়ে ওঠেনি। কল-কারখানা ও বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ব্যাংকিং লেনদেনও হয় সীমিত। নগদ অর্থের প্রবাহ কম থাকায় এ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের আগ্রহ সেভাবে নেই। একসময় সরকারি কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য ব্যাংকের শাখা এ অঞ্চলে ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা খোলা হলেও সে হারে গ্রাহক বাড়েনি।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইএফডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে প্রয়োজন চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য আনা। পিছিয়ে থাকা জেলাগুলো অর্থনৈতিক কর্মকা-ের বিবেচনায়ও দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। দরিদ্রপ্রধান এসব জেলায় অনেক মানুষই আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং সেবায় যুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। মানুষকে আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্ত করতে হলে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবার জোগান দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ঢাকা জেলা। জেলাটির সর্বশেষ আইএফআই স্কোর ১। ২০০৮ সালে এ স্কোর ছিল শূন্য দশমিক ৯৮৪। তালিকার শীর্ষ পাঁচের অন্য জেলাগুলো হলোÍ ফেনী, সিলেট, খুলনা ও নারায়ণগঞ্জ। আইএফআইয়ে ফেনীর স্কোর শূন্য দশমিক ৯৬৫, সিলেটের শূন্য দশমিক ৮৯৮, খুলনার শূন্য দশমিক ৮৯৩ ও নারায়ণগঞ্জের শূন্য দশমিক ৮৮৭। ২০০৮ সালে ফেনীর অবস্থান ছিল তালিকায় চতুর্থ ও খুলনার ষষ্ঠ। অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে ঢাকা, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা এ প্রসঙ্গে বলেন, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর জনগণের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সচেষ্ট রয়েছে। এসব জেলায় ব্যাংকের নতুন নতুন শাখা খোলা হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এসব অঞ্চলে বিশেষ কৃষিঋণ বরাদ্দ দেয়া হয়। পার্বত্যাঞ্চলের জন্য বিশেষ স্কিম চালু করা হয়েছে। সে এলাকার জুমচাষ ও হর্টিকালচারকে উত্সাহিত করা হচ্ছে। কৃষিঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকগুলোয় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতে আনতে ব্যাংকগুলোর প্রতি বিশেষ দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, প্রতি এক লাখ পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা রয়েছে ৮ দশমিক ২টি। ১৫ বছরের বেশি বয়সী এমন মানুষের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট রয়েছে মোট জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ১ শতাংশ। আর মোবাইল অ্যাকাউন্ট রয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশের। জনসংখ্যার ৬ দশমিক ১ শতাংশ ক্ষুদ্র বীমা সেবার আওতায় এসেছে। ৯ দশমিক ৯ শতাংশ ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয় করছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ।
সূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!