সিলেট প্রতিনিধি::
সিলেটকে দাড়াতেই দেয়নি সুনামগঞ্জ জেলা ফুটবল দল। ম্যাচের পুরোটা সময় রীতিমতো তাদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন সুনামগঞ্জের খেলোয়াড়রা। দাপটের সঙ্গে খেলে ৩-১ গোলে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কাপ ফুটবলে জয় পেয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা ফুটবল দল। তবে ম্যাচে নানা বিপত্তি সৃষ্টি করেও জয় থামানো যায়নি সুনামগঞ্জের।
ম্যাচের তখন মাত্র তিন মিনিট। ডিবক্সের অনেক বাইরে সিলেটের এক ডিফেন্ডারের সাথে পোস্টে বল নিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় সুনামগঞ্জে ফরোয়ার্ড ডুডু। আচমকা গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এলেন সিলেটের গোলরক্ষক সুহেল। ফাউল করে বসলেন ডুডুকে। হলুদ কার্ড দেখাতে কার্পণ্য করলেন না রেফারি। ম্যাচের শুরুর এই চিত্র দেখেই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে ‘অলক্ষ্মুণে’ এক গুঞ্জন- আজ বোধহয় সিলেটের হবে না! গুঞ্জন শেষ পর্যন্ত কল্পলোকে থাকেনি, বাস্তব হয়ে নেমে এসেছে মর্ত্যে।
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমাবারের মতো সিলেট জেলা দলকে হারিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা দল।
এর আগে কোনো ধরনের টুর্নামেন্টেই সিলেটকে হারাতে পারেনি সুনামগঞ্জ। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে সিলেটকে ৩ (৫) – ৩ (৪) গোলে হারিয়েছে সুনামগঞ্জ। এই জয়ে সিলেট দ্বিতীয় বিভাগীয় কমিশনার গোল্ডকাপের ফাইনালের মহারণে জায়গা করে নিয়েছে সুনামগঞ্জ।
এই ম্যাচ নিয়ে কথার ফুলঝুরি ছিল অনেক। একই বিভাগের দুটি জেলা দল- সমর্থকও উভয় দলের পক্ষে বেশ উচ্চকিত। ম্যাচের আগেই তাই উত্তেজনার পারদ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ম্যাচের শেষ শট পর্যন্ত সেই উত্তেজনা ছিল টগবগে।
শুরু থেকে আক্রমণ – পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে সেমিফাইনাল এই ম্যাচটি। তবে প্রথমার্ধে আক্রমণ শাণাতে গিয়ে নিজেদের ডিফেন্সকে অরক্ষিত করে রাখে সিলেট। ফলাফল- প্রথমার্ধেই সিলেট ৩-১ গোলে পিছিয়ে!
ম্যাচের ৬ মিনিটেই সোহেলের গোলে এগিয়ে যায় সুনামগঞ্জ। এই সোহেল পরে করেছেন আরেক গোল। গোল খাওয়ার পরের মিনিটেই কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠে সিলেট। তবে ইকোর জোরালো শট পোস্টে লাগায় গোল শোধ করতে পারেনি সিলেট। ম্যাচের ২২ মিনিটেই কর্নার কিক থেকে জটলায় বল পেয়ে সেই ইকোই গোল করে ম্যাচে ফেরান সিলেটকে।
প্রথমার্ধের ৪৩ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে সিলেটের ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে দারুণ এক গোল করেন বাংগুরা। দ্রুতগতিতে ছোটা বাংগুরার গতির কাছে পরাস্ত হতে হয় সিলেটের গোলরক্ষক সোহেলকে। ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকা হতভম্ব সিলেট ঠিক পরের মিনিটেই খেয়ে বসে আরেক গোল। ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন সুনামগঞ্জের ফরোয়ার্ড সোহেল।
৩-১ এ পিছিয়ে থাকা সিলেট দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে গোল শোধে একের পর এক আক্রমণ শাণাতে থাকে সুনামগঞ্জের ডিবক্সে। এ অর্ধের ১৭ মিনিটে কর্নার কিক থেকে বক্সে জটলায় বল পেয়ে ব্যাক হিলে অনেক দিন মনে রাখার মতো গোল করে ব্যবধান ৩ – ২ এ নামিয়ে আনেন সিলেটের বিদেশী ফরোয়ার্ড কিংসলে। এরপর আরো শাণিত হয় সিলেটের আক্রমণ। কিন্তু গোলের জন্য তাদের অপেক্ষা বাড়তেই থাকে।
ম্যাচ ৩ – ২ গোলে সুনামগঞ্জ জিতে যাচ্ছে এমনটা যখন জোর গুঞ্জন, ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে তখন সেই কিংসলেই সমতা ফেরান ম্যাচে। প্রতিপক্ষের ডিবক্সে ফাঁকায় পাওয়া বলে শট নিয়ে জাল কাঁপাতে ভুল করেননি এই ফরোয়ার্ড।
ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। উত্তেজনার পারদ চরমে। ডাগআউটে উভয় দলের টেনশন। গ্যালারিতে পিনপতন নীরবতা। সেই নিরবতা ছুঁয়ে গেল প্রেসবক্সে থাকা সাংবাদিকদেরও।
সিলেটের রিপনের শট গোলপোস্টে ঢুকতেই খান খান হয়ে গেল স্টেডিয়ামের নীরবতা। পরের শটে সুনামগঞ্জের বাংগুরার শট ঠেকিয়ে দেন সিলেটের বদলি গোলরক্ষক শামসুল। সিলেটের দর্শকদের উন্মাদনা তখন বাঁধনহারা। তবে তাদের সেই উৎফুল্লতা শেষ পর্যন্ত আর থাকেনি। সিলেটের হয়ে ঈশা, ভিক্টরি ও কিংসলে গোল করলেও সাদ্দাম মারেন পোস্টের বাইরে। সুনামগঞ্জের হয়ে বাংগুরা মিস করলেও ডুডু, মাকালাকি ও লাকি গোল করতে ব্যর্থ হননি। ম্যাচে ৩ (৪) – ৩ (৪) গোলে সমতা। এরপর শট মিস করে বসেন সিলেটের আব্বাস। গোল করলেই ফাইনাল, এমন সমীকরণের মুখে সুনামগঞ্জের বিদেশি ফরোয়ার্ড ম্যাজি শট নিলেন ঠান্ডা মাথায়। গোল! সিলেটকে হারিয়ে সুনামগঞ্জের ইতিহাস। সেমিফাইনাল থেকে সিলেটের বিদায়।
সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় দ্বিতীয় সিলেট বিভাগীয় কমিশনার গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের শনিবারের খেলায় পরবর্তী ম্যান অব দ্যা ম্যাচ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আজম খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম। এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ স¤পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কোষাধ্যক্ষ সাহিদ আহমদ চৌধুরী জুয়েল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ স¤পাদক ও সিলেট জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি হেলাল আহমদ, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য বিজিত চৌধুরী ও এডভোকেট নিজাম উদ্দিন এবং সংস্থার কোষাধ্যক্ষ মো. সিরাজ উদ্দিন, সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ স¤পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী, অতিরিক্ত সাধারণ স¤পাদক রেজওয়ানুল হক রাজা, যুগ্ম স¤পাদক উজ্জ্বল বখত, সিলেট জেলা ফুটবল দলের ম্যানেজার এনামুল হক মুক্তা, সিলেট জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মঈনউদ্দিন আহমদ ও আব্দুল মালিক রাজা প্রমুখ।
ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ মনোনীত হয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় সোহেল।
উক্ত ম্যাচ পরিচালনা করেন মো. ইমাম হোসেন, শেখ কামাল, ফেরদৌস আহমদ ও মিল্লাত আহমদ চৌধুরী।