1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ডংকা শাহ’র মোকাম ও সেই পাগলী…।। ইশতিয়াক রুপু

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ৩.১৯ পিএম
  • ৩৭৩ বার পড়া হয়েছে

ডংকা শাহ মোকাম। আমাদের বাসা থেকে উত্তর দিকে
তিন টি বাসা পরে কলেজ রোডের পাশে। বর্তমান হুসেন বখত চত্তর পেরিয়ে দক্ষিন দিকে আসতে থাকলে হাতের
ডান দিকে পড়ে। ছোট বেলা দেখেছি মোকামটি বাঁশের বেড়া দিয়ে তিন দিক ঘোরা। শুধু পশ্চিম দিক খোলা।
উপরে চৌচালা টিনের ছাউনি।ভিতরে একটি করব তৈরী করে রাখা। আব্বা সহ শহরের অনেক মুরুব্বী দের অভিমত এখানের কবরটি ভূয়া। কারো জানামতে
এখানে কোন পীর আউলিয়া কাউকে কখনো দাফন বা কবরস্থ করা হয় নি। তবে মুরূব্বীদের কেউ কেউ বলে গেছেন ঐ স্থানে একটি বড়ই গাছের নীচে কয়েক জন পীর নামধারী ভন্ড প্রকৃতির লোক একত্র হয়ে গাঁজা মদ সেবন করতো।পরে এটিকে ভন্ডপীর রা কবর তৈরী করে সুনামগন্জ শহরে পূর্ব দিকে সোনাখালী নদীর পূর্রপাড়ের বসতিতে স্থানীয় এবং বহিরাগত রা বেশ মিলে মিশে থাকতো। হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে পীর ফকিরের ভক্তি একটু বেশি ছিলো। এ ছাড়া শহরের উত্তর পূর্ব কোনে মোহাম্মদ পুর গ্রামে এক পীরের মাজারে প্রতি বছর হাজারো ভক্ত আর আশেকানদের আগমন ঘটে। যা পরে ওরসে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ঢোল ঢফকি দুতারা সহযোগে রাত ব্যাপী ফকিরী গানের আসর বসে। রাতব্যাপী এই মজমাতে স্থানীয় আশেকানদের সাথে কিছু ভোট শিকারী রাজনৈতিক নেতারা ও ভীড় জমান। নেতারা চিন্তা ভাবনা বা পোশাকে আধুনিক হলেও পীর ফকির দের ব্যাপারে ভীষন দুর্বল। পদ হারানোর ভয়ে অনেকে অসামাজিক কাম কাজ দেখেও ভোট ব্যাংন্ক নষ্ট হবার ভয়ে চোখ মুঝে থাকেন। তবে আংশিক ভাবে হলে ও মাজার সংলগ্ন মসজিদে নিয়মমাফিক কিছু নিয়ম আচার মানা হয়। শহরের পূর্বে ও কথিত কিছু মাজারে চলে অনেক আপত্তিজনক কাজ কর্ম। এখানে ও ভোট রসায়ন কাজ করে। কেউ মাজার সেবার পক্ষে কেউবা বিপক্ষে। তবে উনাদের দু দলের বড় সুবিধাটি হলো তাদের নিজের ভোটের সংঙ্গ প্রতি পরিবারে আছে গড়পরতা ৫/৭ টি ভোট। এখানে ও চলে চেয়ার বাঁচাও পলিসির অনুশীলন। তেনারা ভাবেন, এতো বিষয় খেয়াল রাখি কেমনে? তার উপর বিষয় টি পীরে কামেল, হুজুর মুফতি দের নিয়ে।সেনসশন ইস্যু। তাই চোখে লাগাও, কালে কালে চশমা। মুরুব্বীদের বলে যাওয়া তথ্য মোতাবেক কলেজ সংলগ্ন এলাকায় বসত কারী একজন সহকারী আইন পেশাজীবী, যিনি প্রচুর আফিমে আসক্ত ছিলেন তারই একক উদ্দোগে সোনাখালি নদীর পাড়ের আশে পাশে দু টো এবং আমাদের পাড়া হাসন নগরে এই মোকামের গোড়াপত্তন হয়। এসব মোকাম ও ভন্ড পীরদের সৃস্ট আস্থানা বানানোর উদ্দেশ্য থাকে প্রধানত দুটো। একটি হলে আর্থিক অন্যটি জৈবিক। অজ্ঞ, অন্ধ পীর ভক্তরা না জেনে, না বুঝে শুধু অলীক বিশ্বাষে এসব মাজারে সেবার নামে মুসকিল আসান হবে আশায় টাকা পয়সা দেয় আর তথাকথিত পীরের বংশধর বলে দাবীদার গন সেই টাকা পয়সা নিজেদের পকেটে ঢুকায়। আরো একটি প্রধান আকর্ষন আছে যা নিয়ে মেতে থাকে অনেক ভন্ড পীর। তা হলো নারী সংগ। ওরশ বা জমায়েতে প্রচুর নারী ভক্ত সহ অনেক যুবতী নারীরা নানা মানত নিয়ে এসব ভূয়া মাজারে আসে। তাদের নিয়ে চলে মউজ মস্তি, পীরের নামে, জিকিরের নামে। মাজার প্রাঙ্গনে চলে গাঁজা আফিম অধুনা হিরোইন, চরস আর মদ সহ সব ধরনের মাদকের যতেচ্ছ ব্যবহার আর সাথে আড়ালে আবাডালে চলে নারী নিয়ে নানা অসামাজিক কাম কাজ। রকম বলতে হলে, বলতে হবে জানা কিছু অতীত কাহিনী। সুনামগন্জ শহরের কোন কোন বাসার মুরব্বীরা একসময় চোখে সুরমা লাগিয়ে যখন শহর উপকন্ঠের মাজার দর্শনে যেতেন তখন পরনে থাকতো দামী রুহিতপুরী সাদা তহবন আর হাতে পাঁচ ব্যাটারীর টর্চ। আর কোন উদ্দেশ্য থাকতো কিনা উপর আলাই জানেন।বিশদ বিবরনে গিয়ে কাউকে এ বেলা আর বিব্রত করতে চাই না। স্বাধীনতার বছর দুয়েক আগে বেশ ঘটা করে কাঁচা পাকা মোকামটি কে তৈরী করা হলো ছোট্ট পাকা মোকামে। কবর সাদৃশ্য স্থান কে আরো বেশি যত্ন করে বানানো হলো একেবারে আসল কবরখানা। মোকামের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অংশ ছোট্ট দরজার দু পাশে বসানো হলো দুটো দান বাক্স। এগুলি হলো আসল ম্যাজিক বক্স। এখানেই জমা হবে সিকি আধুলি দশ পয়াসা বিশ পয়সার মুদ্রা। যা সরাসরি চলে যাবে বাক্সের চাবি যার নিকট আছে তার কাছে। মোকামের পিছনে থাকতেন কামারখালের জমিদার পরিবারের সন্তান বাবু চক্রপানি চক্রবর্তী। যিনি রায় প্রেসের ম্যানেজার ছিলেন। পান ভর্তি মুখে সারাক্ষন শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন। মোকামের উত্তরের বাসা ছিলো বৃহত্তর সিলেট জেলা তথা আসামের অন্যতম বিপ্লবী রবি দামের। প্রতিদিন সন্ধায় ঘটা করে প্রচুর মোমবাতি জ্বালানো হতো মোকামে। যেটি শুরু করতেন চক্রবর্তী বাবুর বাসার লোকজন সাথে থাকতেন কিছু পথচারী যারা মানতের বাতি জ্বালাতেন আর আমরা পাড়ার কিশোর রা। মোমবাতি জ্বালানোর সময় অনেক কে দেখতাম মাজারে সিকি আধুলি ছুড়ে মারতেন। সেসব কে নিতেন তা আমাদের জানা ছিলো না। তবে আমরা মাঝে মাঝে বড় বড় মোমবাতি নিয়ে আসতাম। কারেন্ট চলে গেলে ব্যবহারের জন্য। প্রায়শ বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের পাশের গ্রাম থেকে বয়স্কা মহিলারা নিয়ে আসতেন মানতের মোরগ দিয়ে রান্না করা সালুন আর সাদা ভাত। মোকামের পাশে খালাদের বাসার সামনের মাঠে চলতো বিকালের খেলা। তখন দেখতাম বড় এলুমিনিয়ামের বাউলে মানতের তরকারী ও ভাত একত্র করে মাখানো হচ্ছে। পাশে স্তুপ করে রাখা কাটা সবুজ কলাপাতা। খেলা শেষে আমরাও লাইনে ধরে বসে পড়তাম শিন্নী খাবার আশায়। ঘন সবুজ বা নীল রঙের শাড়ি পরিহিতা মা চাচীর বয়সিরা বাউল থেকে ডান হাত দিয়ে প্রত্যেকের সামনে রাখা কলাপাতায় দিয়ে যাচ্চেন সালুন মাখানো ভাত। কপাল ভাল হলে কখনো মিলতো তিন চার টুকরো মুরগীর মাংশ কখনো মাত্র একটি। খেলা শেষে ক্ষিধা লাগতো প্রচন্ড। তাই হয়তো দেখা গেলো কলাপাতায় অবশিষ্ট আর কিছুই নেই। দৌড়ে গিয়ে চৌমুহনীতে ভানু মামাদের বাসার সামনের কলতলায় দিয়ে প্রথমে পানি পান, সাথে হাত মুখ ধুয়ে বাসায় ফেরত যেতে দৌড়ে দৌড়ে ছোটা।
ছোটবেলা মাঝে মাঝে দেখতাম ১০/১২ টি গাট্টি বোচকা মাথায় পিঠে নিয়ে মোকামের সামনের চত্তরে সারাক্ষন বসে থাকতো এক পাগলী। পথচারী বলেন আর পাড়ার লোকজনই বলেন কেউ ওকে ভাল কোন কথা বা ওর দিকে তাকালেই প্রচুর গালি দিত। সারাক্ষন নানা জনের সাথে বাজে ভাষায় ঝগড়া করতো। আমরা পাড়ার কিশোর রা ভয়ে ঐ পাগলীর পাশে পারতপক্ষে যেতে সাহস পেতাম না গালি খাবার ভয়ে। ইদানীং সেই ভয়টি মনে হচ্ছে আবার নিজের মাঝে ফিরে এসেছে।
আজকাল নগরীর অনেক গুণী আর সুদর্শনা দের দেখে আর কথা শুনে, ছোট বেলা দেখা পাড়ার ডংকা শাহের মোকামের ঐ বোচকা ওয়ালী পাগলীর কথা বার বার মনে পড়ছে।ব্যবধান খুবই সামান্য। দেশের পাগলী বোচকা নিয়ে ঘুরতো আর অধুনা আমার দেখা বিশেষ পাগলী, গুণীদের আশীর্বাদ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর ঝগড়া করে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!