তাদের মতে, বিএনপি-জামায়াতকে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে হলে ড. কামালের মতো একজন ছায়াকে অন্ধ অনুকরণ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। এদিকে দীর্ঘদিন অনাদরে থাকা ড. কামাল বিএনপি-জামায়াতের সমাদর পেয়ে নিজেকে রাজনীতির পথপ্রদর্শক ভাবছেন। ড. কামাল লাইফ সাপোর্টে থাকা বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচিয়ে রাখতে অক্সিজেনের ভূমিকা পালন করছেন। আওয়ামী লীগের উপর প্রতিশোধ নিতে তিনি আদর্শ ও নৈতিকতার জলাঞ্জলি দিয়েছেন বলেও তাদের অভিমত। মূলত, বিএনপি-জামায়াতের ফাঁদে পা দিয়ে ড. কামাল দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ড. কামাল হোসেনকে সম্মুখে নিয়ে আসার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বহির্বিশ্বে একটি ধারণা তৈরি করা, বিএনপি-জামায়াতের গাঁটছড়া অবস্থা সম্পর্কে এতদিনকার দেয়া বার্তাকে ভুল প্রমাণিত করা। এবার যেন পশ্চিমা বিশ্ব এটিকে ২০ দলীয় জোট হিসেবে নয়, বরং অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের একটি চেহারাও তারা দেখাতে চায়। ড. কামাল জীবনভর যে রাজনীতির সংস্কৃতিতে যুক্ত ছিলেন তার সম্পূর্ণ বিপরীতেই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি। তারেক রহমানের নির্দেশে কিক আউট করা হয়েছে বি. চৌধুরীকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বি. চৌধুরী যতটা বিএনপি-জামায়াতকে চেনেন, ড. কামাল তার এক সিকিও জানেন না। ড. কামালকে ব্যবহার করে দেশী ও আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে উপকৃত হবে, বি. চৌধুরী ততটা তাদের উপকৃত করতে পারবেন না। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত জামায়াত, যারা এখন নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়াবে- যা বি. চৌধুরী যত সহজেই ধরতে পারবেন, ড. কামাল হোসেন তা পারার কথা নয়। তাই ড. কামালকে অন্ধকারে রেখেই ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে রাজনীতিতে নতুন চমক সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। ড. কামাল রাজনীতিতে একজন প্রায় নিঃস্ব মানুষ বলা চলে। অথচ আগে দেশে-বিদেশে যেভাবে তাকে জানতো এখন সেই যুগ তার জন্য নেই। তিনি এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ এবং রাজনীতির মাঠে পড়ন্ত পর্যায়ে চলে এসেছেন। তাই শেষ সময়ে এসে বিএনপি এবং জামায়াতকে পুনরুজ্জীবিত করতে অন্ধভাবেই কাজ করছেন ড. কামাল। বিএনপি তারেক রহমানের রিমোট কন্ট্রোলে চললেও দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন দাঁড় করাতে, নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে কিংবা একটা কিছু ঘটাতে একজন বিকল্প নেতার তীব্রভাবে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। সেই নেতাই হলেন ড. কামাল।
বিএনপির জন্য এ মুহূর্তে তেমন একজন ছায়া নেতার বিশেষ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী বলেন, বিগত ক’বছর একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপি বেশ বিপাকে পড়েছে। বিশেষত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার কৌশল নিয়ে শেষ পর্যন্ত দল এবং ২০ দলীয় জোট যে সংকটে পড়ে তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিএনপির মতো এত বড় দল দেশে গত ৫ বছরে রাজনৈতিকভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। এর কৃতিত্ব যতটা না সরকারি দলের তার চাইতেও বেশি নিজেদের ভুল। বিশেষত জামায়াতের ক্যাডার, ভোটার এবং অর্থবিত্তের ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি কতটা রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছে- তা কেবল নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করে দেখলেই বোঝা সম্ভব।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন সংবিধানের বাইরে গিয়ে এখন নির্দলীয় সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেয়া ইত্যাদি বিষয়কে নিয়ে আসলে কী বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন বানচালের কোনো কৌশল বাস্তবায়নে পা দিচ্ছেন, নাকি দেশে সাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতির বিকাশে দাবার গুটিতে পরিণত হতে যাচ্ছেন- সেটিই দেখার বিষয়। পুরো বিষয়গুলোই বেশ জটিল এবং সন্দেহের নানা ছিদ্র তৈরি করছে। দেশে যাতে কোনভাবেই রাজনৈতিক সংকট দেখা না দেয়, সেই ব্যাপারে অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতি ও সামাজিক শক্তিসমূহ, সরকার এবং প্রতিষ্ঠানসমূহকে সজাগ থাকতেই হবে।