শাহরিয়ার বিপ্লব:
আহা! কি সুখের মরন।
ও জালাল ভাই, এতো সুখের মৃত্যু হয় কি করে? মৃত্যও সুখের হয়। হিংসার হয়। জীবনে ছিলেন সবার হিংসার। বন্ধু-বান্ধব, আত্বীয় সহকর্মী আপনার ভালোমানুষির জন্যে আপনাকে হিংসা করতো কিনা জানিনা।
কিন্তু মরে গিয়ে হিংসা বাড়িয়ে দিলেন। আহা এমন শখের মৃত্যু। এভাবে কেউ মরে নাকি? আপনার এই মৃত্যুকে কি নাম দেবো ভাই? ইচ্ছামৃত্যু না শখের মৃত্যু?
সারাজীবন অপরের সুখের জন্যে নিজেকে কখন যে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে গেলেন। মানুষের সুখ চিন্তা করে করে কিভাবে মরে যেতে হয় কিংবা কিভাবে মরতে হয় আপনিই তা দেখিয়ে দিলেন।
কি লিখবো? কত লিখবো? এতো ভাষা কি আছে আমার?
পরিচিত অপরিচিত। কার অসুখ। কার শরীরের কি সমস্যা। কাকে ডাক্তারে নিতে হবে। কাকে চেকআপে নিতে হবে। চিকিৎসার জন্যে কার টাকার দরকার। কার পাসপোর্ট করে দিতে হবে, ভিসা লাগাতে হবে। এসব নিয়েই তো ব্যস্ত ছিলেন। নিজের কথা চিন্তা করবেন কখন?
কার ছেলের ভর্তি, কার মেয়ের বিয়ে, কার মায়ের চিকিৎসার। কাকে জেল থেকে বের করতে হবে। কাকে থানা থেকে জামিনে আনতে হবে। এসব নিয়েই তো দিনমান। নিজের খেয়াল রাখবেন কখন?
তাইতো প্রিয়জনের চাপে পড়ে অক্সিজেন মেশিন লাগানোর পরেও খেয়াল রাখেননি অক্সিজেন ফুরিয়ে গেছে।
বন্ধুদের, আত্বীয়দের, কর্মীদের, হাজারো পরিচিত অপরিচিতদের অক্সিজেন দিতে গিয়ে নিজেই হয়ে গেছেন অক্সিজেনশুন্য।
চলে গেলেন মেঘের ওপারে। সাদা সাদা মেঘ। কালো কালো বৃষ্টি। চাঁদের শহর ছেড়ে। রুপালী রাতেরও অপর প্রান্তে।
অঝোর ধারায় কাঁদছে শহর। কাঁদছে রাজপথ। ডুকরে উঠছে শহীদমিনার। কলেজের ক্যাম্পাস।
কিছু কি দেখছেন জালাল ভাই? কত ভেজা চোখ তাকিয়ে আছে? কত অশ্রু মিশে যাচ্ছে কুয়াশার চাদরে? কত বুকের আর্তনাদ? কত অসহায়ের বিলাপ? কিছুই শুনবেন না? এটা কি করে হয়? একটু শুনুন।
আপনি যে “না” বলতে পারেন না। এবার একটু বলুন।
হ্যা। হেসে হেসে বলছেন তো। যাও বাসায় যাও। তোমরা সবাই যাও। রেস্ট করো। ঘুমাও। অনেক কষ্ট করেছো আমার জন্যে।
আর আমরাও চলে এলাম। রেস্ট করতে। ঘুমাতে। আপনাকে ফ্রিজিং গাড়ীতে বাক্সবন্দী করে চলে এলাম।
আপনি হাসছেন। মুচকি মুচকি। মনে মনে বলছেন। তোমাদের জন্যে কত রাত ভোর করেছি, কত দিন সন্ধ্যা করেছি। তোমাদের কাউকে হাসপাতালে রেখে আমি ঘুমাইনি, জেলখানায় বন্দী রেখে আমি রেস্টে যাই নি।
আর তোমরা!!
হ্যা জালাল ভাই।
আমরা এমনই। আপনার মতো হতে পারলাম না। এখানেও আপনি জিতে গেলেন।।
ভালো মানুষের প্রতিযোগিতায় আপনাকে কেউ হারাতে পারেনি।
বারী সিদ্দিকী আপনার জন্যেই গেয়েছিলো,,
এতো ভালো হয় কি মানুষ………..