ড. কামাল মুক্তিযুদ্ধে না যেতে স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হয়েছিলেন
বিশেষ প্রতিনিধি::
সাবেক বিচারপতি ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা শামসুুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল নায়ক ছিল জিয়া। আমি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে যেসব তথ্য পেয়েছিলাম তাতে স্পষ্ট জিয়ার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি। মোশতাকসহ অন্যরা ছিল জিয়ার সহযোগী। রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষক জিয়াউর রহমানের মতো তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও মুুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে তিনি বলেন, ড. কামাল মুুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিতে পাকিস্তানী মেজরকে ফোন করে স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হয়ে পাকিস্তানে তার শশুর বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। দেশের কোন সংকটে ড. কামালকে পাওয়া যায়না। তিনিও সুবিধাবাদী ও রাজাকারদের বড় বন্ধু।
শুক্রবার রাতে মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচন: মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা’ শীর্ষক একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট রুহুল তুহিন ও সদস্য সচিব সহকারি অধ্যাপক এনামুল কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল। মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম, লেখক গবেষক ইকবাল কাগজী, এডভোকেট কল্লোল তালুকদার চপল, সংস্কৃতিকর্মী হিরন্ময় রায়, মাহিন হোসেন, সাংবাদিক এমরানুল হক চৌধুরী, শামস শামীম, সালেহীন চৌধুরী শুভ, রইসুজ্জামান, রিংকু চৌধুরী, মেহেদী হাসান চৌধুরী রাসেল প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কণের্ল তাহের হত্যার বিচার পর্যালোচনা করতে গিয়ে আমরা দেখেছি জিয়া মুক্তিযুদ্ধে একটি গুলিও ছুড়েনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল আতাউল গণি জিয়ার বিরুদ্ধে মার্শাল ল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে এ কারণে করেননি। এ কারণেই জিয়াকে সেক্টর কমান্ডার করা হয়নি। জিয়ার শাসনামলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াকে তখন সহযোগিতা করেছে আমেরিকা, চিন ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জিয়া দেশকে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। কুখ্যাত রাজাকারদের মন্ত্রী বানানোর জন্য উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল। তার সমেয় রাজাকাররাই দেশ শাসন করেছে। ব্যারিস্টার মওদুদ ও ক্যাপ্টেন নূরুল হকের বইয়ে জিয়ার রাজাকারপ্রীতি ও রাজাকারদের পুনর্বাসনের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী তার স্ত্রীও ২০০১ সালে রাজাকারদের মন্ত্রী করেছিল।
বিএনপিকে সাম্প্রায়িক দল উল্লেখ করে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিএনপি জামায়াতের মতই সাম্প্রদায়িক দল। গয়েশ্বরসহ কয়েক ভিন্ন ধর্মের লোক সুবিধার জন্য এই দল করে। তাদের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে পাকিস্তানের আইএসআই ও সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করে। তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসলে দেশ মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সনে যেভাবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন আগামীতেও সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদীদের রূখতে হবে। তিনি কমিউনিস্ট পার্টিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে তিনি বলেন, ড. কামাল রাজাকার বান্ধব। দেশের কোন সংকটে কখনো তাকে দেখা যায়নি। পালিয়ে বেড়িয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাকে তার শিক্ষা ও ডিগ্রির জন্য ¯েœহ করতেন। নাহলে ১৯৭১ সালে সোহরাওয়াদী উদ্যানে স্বাধীনতাবিরোধীদের যে বিচার হয়েছিল কামাল হোসেনেরও সেই বিচার হতো। ড. কামাল হোসেন ১৯৭১ সনের ২৭ মার্চ পাকিস্তানের মেজর মিঠাখানকে ফোন করে তাকে গ্রেফতার করার অনুরোধ জানান। ২০০৪ সনে প্রকাশিত এক বইয়ে এই কথা জানিয়েছেন মিঠা খান। গ্রেফতার না হলে তাকে মুক্তিযুদ্ধে যেতে হবে এই অনুরোধ জানিয়ে মিঠা খানকে ফোন করে স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হন ড. কামাল হোসেন। গ্রেফতারের পরে তিনি পাকিস্তানে শশুর বাড়ি চলে যান। ৭৫ সনে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান। এসময় এতিম শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরলেও তাদের খবর নেননি কখনো। এখন তিনি তার পুরনো বন্ধু রাজাকারদের সঙ্গে জোট বেধেছেন বলে মন্তব্য করেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।
বিচারপতি সিনহা পসঙ্গে তিনি বলেন, মীর কাশেমের ভাইয়ের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পেয়ে সিনহা বই লিখেছে। এই সিনহা কামরুজ্জামানের রায়ের দিন আদালতে বলেছে সে শান্তি কমিটির সদস্য ছিল। এর পর থেকে আর কখনো তার সঙ্গে কথা বলিনি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে যোদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এবং দুর্নীতিবাজদের মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে রাজনৈতি দলগুলোতে অনুরোধ জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গেও দেখা করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দিয়েছি। জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেনা হাইকোর্টের রায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছি যোদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দিলে তাদের অযোগ্য করতে হবে। তাছাড়া একাত্তরের চেতনাবিরোধী, চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত, দুর্নীতিবাজদের মনোনয়ন অযোগ্য করার জন্যও আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি।
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক প্রায় এক ঘন্টা বক্তব্য দেন।