শামস শামীম::
ঢাকার ছেলে সুমন পেশায় সাংবাদিক। পেশার তারে জড়ানো জীবন নিয়ে সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে। তাই বারবার চেষ্টা করেও আন্তর্জাতিক রামসার সাইট খ্যাত জীব-বৈচিত্র্যের অনন্য সুন্দর টাঙ্গুয়ার হাওরের নীলাভ জলে অবগাহন করা হয়নি তার। দেখা হয়নি বিশ্বের বিরলপ্রায় সোয়াম ফরেস্ট, দেশের বৃহত্তম হিজল করচের বাগ। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫০টি নৌকায় ভ্রমণোৎসবের সচিত্র প্রতিবেদন দেখে এবার তিনি বন্ধু-বান্ধবসহ দনয়কুড়ি কান্দার ছয় কুড়ি বিল’ খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সুমনের মতো অনেকেই সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওরের ভ্রমণ ও জোছনা উৎসের মেঘা আয়োজন দেখে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আয়োজকরা জানিয়েছেন প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরের এই ভ্রমণোৎসবে যোগ দিতে ফোনে কন্ট্রাক্ট করছেন ভ্রমণার্থীরা। নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক সহযোগিতায় এই ভ্রমণোৎসবের উদ্যোগ নেওয়ায় পর্যটকদের মধ্যে বিপুল সাড়া পড়েছে বলে আয়োজকরা জানান।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে আগামী ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গুয়ার হাওরে বিশাল নৌবহরে রাতে জোছনা উৎসব উদযাপন করা হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে তাহিরপুর উপজেলা সদরের পাটলাই নদী থেকে রওয়ানা দিবে নৌবহর। নৌকায় থাকবে নানা অনুষ্টান-পর্ব। দিনভর বৈচিত্র্যময় টাঙ্গুয়ার হাওরের সুন্দর স্পট গুলো ও লুকিয়ে থাকা রূপবৈচিত্র্যের সঙ্গে পরিচিত হবেন ভ্রমণার্থীরা। টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ে অবস্থিত হাওররাজ্যের রাজমহল খ্যাত জমিদার বাড়িগুলোও দেখতে পারবেন পর্যটকরা। নৌকায় অবস্থান করেই মেঘালয়ের নীল গহীনের সৌন্দর্য্যও উপভোগ করা যাবে। টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের পাহাড়ঘেঁষা টেকেরঘাট খনিজ প্রকল্পও দেখতে পারবেন পর্যটকরা। মেঘালয় পাহাড়ের নিচে অবস্থিত খনিজ প্রকল্পের স্বচ্চতোয়া জলের লেকটিতে পাহাড় ও আকাশের নীল ছায়া প্রতিবিম্বিত হয়। দীঘল হিজল-করচের বাগের সৌন্দর্য্যওে মাততে পারবেন পর্যটকরা। পাখির ডানা ঝাপটানোর গানওতো রয়েছেই!
আয়োজকরা জানিয়েছেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের মধ্যখানে ভাসমান মঞ্চ স্থাপন করে প্রথম রাতে জোছনাসুধায় মাতবেন ভ্রমণার্থীরা। উদযাপন করা হবে বিরল জোছনা উৎসব। স্থানীয় ও জাতীয় শিল্পিদের কণ্ঠে থাকবে গান। তারা মধ্যরাতে হাওরের বুকে মরমি সুরের তুফান তোলবেন। ভ্রমণে অংশ নিয়ে জলের উপর বিরল জোছাসুধায় ¯œাত হওয়াকে স্মরণীয় করে রাখতে চান পর্যটকরা। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় এসে মাত্র ২৫০০ টাকায় বুকিং দিয়ে যে কেউ এই উৎসবে শরিক হতে পারবেন বলে আয়োজকরা জানান।
ভ্রমণোৎসবের দ্বিতীয় দিন তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত রূপের নদী যাদুকাটাও ঘুরে দেখা হবে। রাতে ও দিনে ভিন্নরকম সৌন্দর্য্য নিয়ে পর্যটকদের চোখে প্রতিনিয়ত এই নদীটি ধরা দেয়। এই নদীর পশ্চিম পাড়েই ঘন সবুজের খাড়া ও ঢালু বড়গোপ টিলা (বারেকের টিলা)। এই টিলাটিও অনন্য সৌন্দর্য বহন করছে। রাতে এই টিলায় উৎসব হবে। তাছাড়া টিলার নিচে শত শত বছর ধরে অবস্থানকারী পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পর্বও রয়েছে। দেশের বৃহত্তম বারুণি উৎসবের স্থান ও অদ্বৈতধামও পরিদর্শনের সুযোগ থাকছে। লোকায়ত পীর শাহ আরেফিনের মাঝারও পরিদর্শননেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
সব মিলিয়ে নানা অনুষ্ঠানমালা, সাংস্কৃতিক ও আলোচনা পর্বে বর্ণাঢ্য আয়োজন রেখেছেন উৎসবের আয়োজকরা। আয়োজকরা জানিয়েছেন এই উৎসবের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে টাঙ্গুয়ার সৌন্দর্য ও পর্যটন সম্ভাবনা তুলে ধরা হবে। পর্যটকদের নিয়মিত ভ্রমণের জন্য আহ্বান জানানো হবে। তাছাড়া টাঙ্গুয়ার হাওরকে কেন্দ্র করে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য দাবি ও সুপারিশমালাও তৈরি করবেন আয়োজকরা।
জ্যো¯œা উৎসবের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও আয়োজক তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, আগামী ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গুয়ার হাওরের ভ্রমণোৎসবে অংশ নিতে প্রতিদিনই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ভ্রমণ পিয়াসীরা। টাঙ্গুয়ার হাওরকে ঘিরে পর্যটকদের এই টান ও স্বতস্ফুর্ত উচ্ছ্বাস আমাদের অভিভূত ও মুগ্ধ করেছে। আয়োজক হিসেবে আমরাও অংশগ্রহণকারীদের ভ্রমণ আনন্দদায়ক ও স্মরণীয় করে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আয়োজকদের পক্ষ থেকে তিনি আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিচের এই নম্বর গুলোতে ০১৭১৬-৯৩৭৯২৩, ০১৭১৪৭১১৯৫১,০১৯২৭৯৩৭৪১১ এ যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।