স্টাফ রিপোর্টার
দোয়ারাবাজার উপজেলায় পা-ারগাঁও ইউনয়িনে ৪৬ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত একটি বাজারের নাম বদল নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন বাজারের পাশ্বাবর্তী দুটি গ্রামের মানুষ। ‘পান্ডারগাঁও নতুন বাজার’ নামের বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হলেও স্থানীয় একটি মহল কৌশলে ‘শ্রীপুর নতুন বাজার’ নামে পরিচিত করার চেষ্টা করায় প্রতিবেশী দুটি গ্রামের মানুষের মাঝে যে চাঁপা উত্তেজনা রয়েছে সেটি যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
১৯৭২ সালে উপজেলার ডুমরোয়া মৌজায় পান্ডারগাঁও গ্রামের আমজাদ উল্যা, আব্দুল জলিল ও আব্দুর রহিম নামের তিন ব্যক্তি বাজার প্রতিাষ্ঠার জন্য এক একার ৩৫ শতক জমির (দলিল নম্বর ১০৭৬) দান করেন। স্থানীয় ১৪টি গ্রামের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য দান করা জমিতে এলাকাবাসীর ঐক্যমতের ভিত্তিতে ‘পা-ারগাঁও নতুন বাজার’ দিয়ে বাজারটি প্রষ্ঠিতা করা হয়।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে প্রসাশন বাজারটিকে প্রকৃত নামে সরকারি নথিতে যুক্ত করলে দুটি গ্রামের মানুষের মধ্যে শান্তিভঙ্গের যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সেটে প্রশমিত হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৮৭২ সালে পান্ডারগাঁও ইউনিয়নে কোন হাটবাজার না থাকায় স্থানীয়দের উদ্যোগে ‘পান্ডারগাঁও নতুন বাজার’ নামে নতুন একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকারি নথিতেও ওই নামেই অর্ন্তভূক্ত হয় এটি। ১৯৮৮ সালে হাটবাজার নিলামের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে কৌশলে বাজারের প্রকৃত নাম গোপন করে ‘শ্রীপুর নতুন বাজার’ লিপিবদ্ধ কারানো হয়। এর পর থেকে শ্রীপুর গ্রামের পক্ষ বাজারটিকে নতুন নামে পরিচয় করাতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন পান্ডারগাঁও গ্রামের মানুষ।
সূত্র আরও জানায়, স্থানীয়ভাবে একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১৯৮৪ সালে বাহাদুরপুর গ্রামের হাবিজ উল্যা নামের এক ব্যক্তি ৪৫ শতাংশ জমি দান করতে গিয়ে যে দলিল সম্পাদন করেন (নম্বর ১১২১৬) সেটিতে ঠিকানা হিসেবে ‘পান্ডারগাঁও নতুন বাজার’ উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের ১১ জুন বাজারে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে হাজি কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আফছরনগর গ্রামের হাজি শরিয়ত আলী তালুকদার সমাই এক একর ৪৯ শতাংশ জমি দান করেন। দানকৃত জমির দলিলে (নং ২৪৮৪/৯০) ‘পান্ডারগাঁও নতুন বাজার’ লেখা হয়। বিদ্যালয়ের সরকারি যাবতীয় নথিতেও একই ঠিকানা ব্যবহার হয়ে আসছে। একই বছর বাজারে টেলিফোনের টাওয়ার স্থাপনের জন্য অপর একজনের দান করা জমির দলিলে ‘পান্ডারগাঁও’ উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বাজারটির নাম ‘পান্ডারগাঁও নতুন বাজার’ থাকলে অপরপক্ষ নাম বদলের চেষ্টার করলে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তির একাধিক উদ্যোগ ব্যর্থ হলে ১৯৯৮ সালে জেলা প্রশসাকের নিকট দরখাস্ত আবেদন করেন পান্ডারগাঁও গ্রামের আমির উদ্দিন। প্রশাসন কোন উদ্যোগ না নিলে ২০১০ সালে একই ব্যক্তি উচ্চ আদালতে রীট (নং ৫০৩৭) করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আদালতে প্রতিবেদন পাঠাতে গড়িমশি করার দীর্ঘ সময়েও রীট আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়নি। এদিকে ডিসির কাছে আমির উদ্দিনের দেওয়া আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর নথিপত্র বিশ্লেষণ করে বাজারটির প্রকৃত নাম ‘পান্ডার নতুন বাজার’ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কংকন চাকমা। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম স্বাক্ষরিত ‘হাট বাজারের নিলাম বিজ্ঞপ্তি’র ৭ নম্বর ক্রমিকে ‘পান্ডারগাঁও নতুন বাজার’ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এছাড়া পা-ারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের দুই চেয়ারম্যান শফিকুল হক ও আব্দুল ওয়াহিদ স্বাক্ষরিত ট্রেড লাইসেন্সের ঠিকানায় একই নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ‘পান্ডারগাঁও নতুন বাজার’ এর পক্ষে বিস্তর অকাট্য তথ্য প্রমাণ ও দলিলপত্র থাকার পরও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল নিজেদের গ্রামের পরিচিতি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাজারটির প্রকৃত নাম আড়াল করে ‘শ্রীপুর নতুন বাজার’ করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। সরকারি নথিপত্রে বাজারের প্রকৃত নাম উপস্থাপন করতে একাধিকবার আবেদন করা হলেও রহস্যজনক কারণে বিষয়টি নিষ্পত্তি করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে এলাকার মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইতোপূর্বে এ নিয়ে কয়েক দফা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে দু’পক্ষের মানুষ।
পান্ডারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ বলেন, বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে সমন্বয় করার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘শ্রীপুর পান্ডারগাঁও নতুন বাজার’ উল্লেখ করে পরিষদের সকল কাগজপত্র সরবারহ করা হচ্ছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, আমি এক বছর হয় দায়িত্ব নিয়ে এখানে এসেছি। নাম পরিবর্তনের বিষয়টি আমার জানা নেই। কোন পক্ষ আমাকে অবগত করলে এ সংক্রান্ত আইনানুগ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।