বিশেষ প্রতিনিধি,জগন্নাথপু ::
জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনটি ভিআইপি আসন বলে খ্যাত। এ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে চান লন্ডন প্রবাসিরা। এই আসনে বিএনপির দুই লন্ডনপ্রবাসীও মমনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করে তিন লন্ডন প্রবাসি তাদের মনোনয়নপত্র আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে দাখিল করেছেন। এই তিন লন্ডন প্রবাসী জগন্নাথপুরের বাসিন্দা। তারা হলেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি উপেজলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের সৈয়দ আবুল কাশেম, একই এলাকার যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নের হাসানফাতেমাপুর গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হরমুজ আলী।
অপর দিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা জগন্নাথপুর পৌরশহরের ছিলিমপুর এলাকার বাসিন্দা এম কয়ছর আহমদ ও যুক্তরাজ্য বিএনপির অর্থ সম্পাদক উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের বাউধরণ গ্রামের এমএ সাত্তার ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের লন্ডনপ্রবাসী নূরুল ইসলাম সাজু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কয়ছর আহমদের আজ বুধবার হমা দেওয়ার কথা। মঙ্গলবার এমএ সাত্তারের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ বুধবার এম কয়ছর আহমদের পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করা হবে বলে তাঁর সমর্থকরা জানিয়েছেন। তবে ওই দুই সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমানে যুক্তরাজ্য অবস্থান করছেন। শিগরিই তারা দেশে ফিরবেন বলে সমর্থকরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লন্ডন প্রবাসী সৈয়দ আবুল কাশেম বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে প্রবাসে বসবাস করলেও বেশির ভাগ সময়ই দেশে অবস্থান করে দলীয় সকল কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করছি। জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রযাত্রায় শরিক হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাই।
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, আমি দেশে ও প্রবাসে দুই জায়গায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। দেশের সকল ক্রান্তিকালে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। আওয়ামী লীগের প্রাথী হয়ে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তাই মনোনয়ন জমা দিয়েছি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারন সম্পাদক এম কয়ছর বলেন, দেশে সুষ্ঠ নির্বাচনী পরিবেশ তৈরী হলে বিএনপির প্রাথী হিসেবে নির্বাচন করতে চাই। এজন্য আজ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা জানা, সুনামগঞ্জ -৩ আসন থেকে একাধিকবার জাতীয় সংবাদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ। এছাড়া এ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার মরহুম হুমায়ন রশীদ চৌধুরী, সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ফারুক রশীদ চৌধুরী, মরহুম এডভোকেট আব্দুর রহিছ সাংসদ নির্বাচিত হন।
২০০৫ সালে আব্দুস সামাদ আজাদ মৃত্যুবরণ করলে তাঁর এই শুন্য আসনে উপনির্বাচনে চার দলীয় জোট প্রার্থী জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সচিব (বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী) এমএ মান্নানকে সামান্য ভোটে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেনি। উপ-নির্বাচনের পর সাবেক যুগ্ম সচিব এমএ মান্নান আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী এমএ মান্নান নৌকা প্রতিক নিয়ে চার দলীয় জোট প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে আবারও এমএ মান্নান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতিককে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক আজিজুস সামাদ ডন কে হারিয়ে বিজয়ী হন এমএ মান্নান। এ নির্বাচনে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট অংশ নেয়নি।
আগামী সংসদ নির্বাচনেও এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি অর্থ ও পরিকল্পনা পরিমন্ত্রী ইতিমধ্যে মনোনয়ন ফরম জমা নিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশি আজিজুস সামাদ আজাদ ডন ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কামাল মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন।
এদিকে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশি সাবেক এমপি এডভোটেক মাওলানা শাহিনুর পাশা, জেলা বিএনপি নেতা কর্নেল (অব:) সৈয়দ আলী আহমদ, বিএনপি নেতা এমএ মালেক খান, রফিকুল ইসলাম খছরু জোটের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আজিজুস সামাদ ডন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছি। আমার বাবার আসনে এবার আমাকে মনোনয়ন দো হবে বলে আমি আশাবাদী।
প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন,আমি ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে গত ১০ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। নির্বাচনী এলাকার গণমানুষের সাথে আমার গভীর সর্ম্পক গড়ে উঠেছে। তাই অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ শেষ করতে শেষবারের মতো নির্বাচন করতে চাই।