বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন জাতীয় পার্টির জেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্। সোমবার বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান এই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংগঠনের পার্লামেন্টারী বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ্ সোমবার বেলা আড়াই টায় তাঁকে জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ সদর আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ মতিউর রহমান ক্ষোভে বলেন, গাভী লালন করি আমরা, দুধ খায় জাতীয় পার্টি। আমাদের নেতা কর্মীরা হতাশ।
সুনামগঞ্জ সদরের এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির, সুনামগঞ্জ- মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছিলেন। ব্যারিস্টার ইমনের সহোদর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট খায়রুল কবির রুমেনও মনোনয়ন কিনে জমা দেন। সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৪ আসনকে মর্যাদাপূর্ণ বিবেচনা করে জেলা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা এক বছর আগে থেকেই এই আসন জাপাকে ছাড়া যাবে না বলে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এই দাবিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন সুনামগঞ্জের বালুর মাঠে সমাবেশ শেষে গণ-মিছিলও করেছিলেন। এই গণমিছিলের এক সপ্তাহ পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ গত ১৬ সেপ্টেম্বর একই স্থানে সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছেন এই আসন জাপার। অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্কে জাপার প্রার্থীও ঘোষণা করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ সদরের এই আসনে ১৯৭০ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরী, ১৯৭৩ সালে একই দলের আব্দুজ জহুর, ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র মেজর অব. ইকবাল হোসেন চৌধুরী, ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মেজর অব. ইকবাল হোসেন চৌধুরী, ১৯৯১ সালে আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুজ জহুর, ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী ফজলুল হক আসপিয়া এবং ২০০৮ সালে প্রয়াত মেজর অব. ইকবাল হোসেন চৌধুরী’র সহধর্মিনী জাতীয় পার্টির বেগম মমতাজ ইকবাল নির্বাচিত হন। ৬ মাসের মাথায় তিনি (মমতাজ ইকবাল) ইন্তেকাল করায় উপ-নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে জয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মতিউর রহমান। ২০১৪ ইংরেজির জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন। কিন্তু জাতীয়ভাবে জাপা-আওয়ামী লীগের জোটবদ্ধ নির্বাচন হওয়ায় আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন।
আসনটিতে বিএনপি, জাপা ও আওয়ামী লীগ তিন দলের প্রার্থীরাই বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
এজন্য এই আসনে কোন দলের প্রার্থী জয়ী হবেন তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন হয়।
তবে সুনামগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শেরেনুর আলী’র দাবি এই আসনে বিএনপি-ই জয়লাভ করবে। বিএনপি ইতিপূর্বে চারবার এই আসনে জয় পেয়েছে। এখন বিএনপি আরও সংগঠিত এবং শক্তিশালী। এবার আমরা আশা করছি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে এখানে বিএনপির প্রার্থীই মনোনয়ন দেওয়া হবে এবং জয়লাভও করবো আমরা।’
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী উজ্জ্বল বললেন, ‘এটি আওয়ামী লীগের আসন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী-ই এই আসনে ৪ বার নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান জেলা কমিটির নেতৃত্বে দল এই আসনে আরও বেশি সংগঠিত। সুতরাং আওয়ামী লীগের প্রার্থী-ই এখানে জয়লাভ করবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘১৯৭০’এর নির্বাচন থেকে দলের সক্রিয় কর্মী আমি, আব্দুস সামাদ আজাদ এবং সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের প্রত্যেকটি নির্বাচন করেছি। দুইজনকেই নির্বাচন ব্যয়ের জন্য অর্থও দিয়েছি। ত্যাগ করেছি। ত্যাগের মূল্যায়ন পাইনি। আমি শেখ হাসিনার সুস্থতা কামনা করি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। আমাকে আজ (সোমবার) বেলা আড়াইটায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, মনোনয়ন বোর্ডেরও সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ্ জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ সদরের আসন জাপাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি শুনে মনে হয়েছে গাভী লালন পালন করি আমরা, দুধ খায় অন্যরা। সঙ্গে সঙ্গেই দলের নেতা-কর্মীরা বলেছেন, আমি যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য আমার নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা চাপ সৃষ্টি করছেন। তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেব কিনা এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেব।’ তিনি বলেন, ‘আমার কর্মীরা কান্নাকাটি করছে। আমি নির্বাচনী এলাকায় একবার গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করবো।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন, ‘আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সদরের এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেবার চেষ্টা করবো। আজ (সোমবার) বিকালে পার্লামেন্টারী বোর্ডের কয়েকজন সদস্য এবং মাননীয় সভানেত্রী’র সঙ্গে দেখা করেছি, তাঁরা বলেছেন, এই আসনটি জাপাও চাইছে, আমাদের পক্ষ থেকেও রাখার চেষ্টা হচ্ছে, আমি আশাবাদী।’
সংসদ সদস্য ও জেলা জাপার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্ বলেন, ‘আজ জাপা’র মনোনয়ন যারা কিনেছেন তাঁদের সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার শেষে মনোনয়ন বোর্ড এবং পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।’
সৌজন্য: দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর।