বিশেষ প্রতিনিধি::
ঘটনা-১। গত বছর অনার্স পড়–য়া এক ছাত্র প্রশাসনিক ভবনের সামনে পুরনো একাডেমিক ভবনের পিছনে দড়িয়ে ছিল এক ছাত্র। হঠাৎ পুরনো ডাল ভেঙ্গে পড়ে আহত হয় ওই শিক্ষার্থী। তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
ঘটনা-২। চলতি বছরের প্রথম দিকে ঝড় শুরু হলে বিজ্ঞান বিভাগের পিছনের বিশাল বৃক্ষের ডাল ছিড়ে পড়ে বিদ্যুতের তারে। সাথে সাথেই আগুন ধরে যায়। পরে বিদ্যুবিভাগকে জানানো হলে তারা লাইন বন্ধ করে দুর্ঘটনা এড়ায়।
ঘটনা-৩। চলতি বছরের মার্চ মাসের এক রাত। রাতে ঝড় শুরু হলে পুরনো টিনশেডের একাডেমিক ভবনের টিনের চালে ভেঙ্গে পড়ে বিশালাকৃতির বৃক্ষের ডাল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় একাডেমিক ভবন। সম্প্রতি এই ভবন সংস্কারে সরকার থেকে কিছু বরাদ্দও এসেছে।
এভাবে কলেজ ক্যাম্পাসের অর্ধশত বছরের পুরনো বৃক্ষগুলোর খসখসে ডাল যখন তখন ভেঙ্গে দুর্ঘনা ঘটছে। এসব ঘটনায় আতঙ্কিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অফিসের প্রশাসনিক সংশ্লিষ্টদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দ ক্যাম্পাসের বিপজ্জনক পুরনো বৃক্ষ গুলো কেটে ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন ও বিপদমুক্ত করার জন্য বনবিভাবগে লিখিত আবেদন করেছিলেন। কিন্তু উদাসীন বন বিভাগ লিখিত পত্রকে গুরুত্ব না দিয়ে নীরবে বসে থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তক্রমে গত রবিবার থেকে অর্ধশত বছরের প্রবীণ বৃক্ষের ডালপালা কেটে ফেলছে। এসব ডালপালা কলেজে স্বার্থে ব্যবহার করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের মতে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অর্ধ শত বছরের পুরনো বৃক্ষের ডালপালা বর্তমানে ক্যাম্পাসে বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে। বিপজ্জনক এই ডালপালাগুলো অপসারণে বনবিভাগকে চিঠি দিলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ ব্যাপারে উদাসীন বনবিভাগ। প্রায় দুই মাস আগে বনবিভাগকে লিখিত চিঠি দেওয়া হলেও গা করেনি তারা। তাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তক্রমে ডালপালা ছাটাইয়ের কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গত রবিবার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ ডালপালা ছাটাই করে ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নের কাজ শুরু করেছে। এর আগে গত বৃহষ্পতিবার লিখিত নোটিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
জানা গেছে গত ২৪ সেপ্টেম্বর উঁচু বৃক্ষের ডালপালা ছাটাইয়ের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ সুনামগঞ্জ জেলা বন কর্মকর্তাকে লিখিত পত্র দেন। সুসক/বিবিধ/২০১৮/৫৪৮ নং স্মারকের ওই পত্রটিতে তিনি উল্লেখ করেন পুরনো বৃক্ষের ডালপালাগুলো একাডেমিক ভবনসহ ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয় জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিভিন্ন সময়ে এ কারণে দুর্ঘটনাও ঘটছে। তাছাড়া ছায়াময় এই অপ্রয়োজনীয় ডালপালাগুলো ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয় জায়গাকেও বছরের সবসময় কর্দমাক্ত করে রাখে। এটি শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের সকলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর লিখিত আবেদন দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় কর্তৃপক্ষ ডালপালা ছাটাই করায় স্বস্থি প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
কলেজ ছাত্র পাবেল বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের বৃক্ষগুলো সৌন্দর্য্য বর্ধন করলেও এর পুরনো ডালপালা গুলো বিপজ্জনক। বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বিপজ্জনক ডালপালা কর্তন করায় আমরা খুশি।
জেলা বন কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দ বলেন, অর্ধশত বছরের পুরনো বৃক্ষের ডালপালা গুলো শুকিয়ে ভঙ্গুর হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনারও জন্ম দিয়েছে। বিপজ্জনক ডালপালাগুলো কর্তনের জন্য বনবিভাগকে লিখিত দিলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাই একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তক্রমে গত রবিবার থেকে অপ্রয়োজনীয় ও বিপজ্জনক ডালপালা কর্তন চলছে। কর্তনকৃত এই ডালপালা গুলো কলেজ বা সরকারি স্বার্থেই ব্যবহার করা হবে।