বিশেষ প্রতিনিধি::
রাজনীতিতে চির বৈরিতা বলে কিছু নেই। আজ শত্রু, তো কাল মিত্র। রঙ ও চরিত্র বদলানোই যেন রাজনীতির ধর্ম। সম্প্রতি এমন চরিত্রই লক্ষ্য করা গেছে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপিতে। এক সময়ের চির বৈরি মেরুতে অবস্থান নেওয়া দুই নেতা নজির হোসেন ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এখন মিলনের মোহনায়! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গতকাল এই ছবি শোভা পাচ্ছে।
নজির হোসেন এক সময়ের ডাকসাইটে কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন। নব্বই দশকে আ.লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫দলীয় জোটে এমপি নির্বাচিত হন। ক্ষমতার মোহে তিনি সমাজ বদলের স্বপ্ন রণভঙ্গ দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির আশ্রয় শিবির বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সনে এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জেলা বিএনপির সভাপতির পদ পান। বিএনপিতে নিজের বলয় মজবুত করেন। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে সাবেক হুইফ ফজলুল হক আছপিয়ার নেতৃত্বে আলাদা বলয় তৈরি হয়। ২০০৪ সনে বিএনপির কমিটিতে নজির হোসেন সভাপতি নির্বাচিত হলে আছপিয়া গ্রুপ প্রতিদিনই বিরোধী কর্মসূচি পালন করে। কমিটি বাতিলের দাবিতে এই সময় মিছিল মিটিং হয়। এসব মিছিলে নেতৃত্ব দেন বর্তমান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রদল সভাপতি নূরুল ইসলাম নূরুল। ফজলুল হক আছপিয়ার মাঠের শক্তি হিসেবে পরিচিত নূরুল ইসলাম নূরুল তখন নজির হোসেন ও তার বলয়ের নেতাদের কাছে আতঙ্কের এক নাম ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এই বৈরিতা চলছিল।
সম্প্রতি সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ও স্থানীয় কমিটিতে নেতৃত্ব নিয়ে নূরুল ইসলাম নূরুলের রাজনৈতিক গুরু ফজলুল হক আছপিয়ার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধ সম্প্রতি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। দুই পক্ষ আলাদাভাবে কমিটি সংক্রান্ত বিষয়ে বিবৃতি দিচ্ছে। ¯œায়ুযুদ্ধ রূপ নিয়েছে উত্তেজনায়। এমন সময়ে নজির হোসেন ও নূরুল ইসলাম নূরুলের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দুই নেতাকে কর্মী-সমর্থক নিয়ে ছবি দিতে দেখা গেছে। এই ছবিটিতে দুই বলয়ের নেতাকর্মীরা শেয়ার-কমেন্ট করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে রাজনৈতিক মাঠেও। এই দুই নেতা জেলা বিএনপির রাজনীতিতে একই সঙ্গে মাঠে নামার চেষ্টা শুরু হয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। ওই দুই নেতা ঢাকায় একসঙ্গে নাস্তাও করেছেন। দীর্ঘক্ষণ আড্ডাসহ দলীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথাও বলেছেন।
নামপ্রকাশে জেলা বিএনপির আসপিয়াপন্থী এক নেতা বলেন, ফজলুল হক আছপিয়া সুনামগঞ্জ বিএনপির এক প্রতিষ্ঠান। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন। তাকে চাপে রাখতে এখনো অনেকে চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেউ সফল হবেন না। এই দুই নেতার হঠাৎ মিলনকে তিনি স্বার্থের মিলন বলে মন্তব্য করেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুলের সমর্থক এক ছাত্র নেতা বলেন, নজির হোসেন একজন বড় রাজনীতিবিদ। তাছাড়া আমাদের দলের অন্যতম শ্রদ্ধাভাজন নেতা। শ্রদ্ধাভাজনদের সঙ্গে আমরা মিশলে রাজনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকে। তাছাড়া আমাদের নেতা নূরুল ইসলাম নূরুল চাচ্ছেন সুনামগঞ্জে বিএনপি শক্তিশালী হোক। এজন্য প্রবীণ রাজনীতিবিদের পরামর্শও নিচ্ছেন তিনি। একসঙ্গে দুই প্রজন্মের দুই নেতার দেখা সাক্ষাৎ দলের জন্য ভালই।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। জেলা বিএনপি নতো নজির হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।