স্টাফ রিপোর্টার::
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক তাহিরপুর উপজেলার হলহলিয়া প্রাচীন লাউড় রাজ্যের হলহলিয়া দুর্গ খননে বাঁধা দিচ্ছে দখলবাজ চক্র। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রাচীণ সভ্যতার নিদর্শনের খোঁজে চলা এই খননের সঙ্গে যুক্ত সরকারি লোকদের পরোক্ষভাবে হুমকি ধমকিসহ খননে নিয়োজিত শ্রমিকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের আটকে দিয়েছে। তাদের এই দেশদ্রোহী কাজে বাঁধা দেওয়ায় স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকেও মারধর করেছে। এ ঘটনায় দখলবাজ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন লাঞ্চিত জনপ্রতিনিধি।
জানা গেছে ঐতিহাসিক হলহলিয়া গ্রামটির প্রায় ৩০একর জায়গা জুড়েই সুপ্রাচীন কালে লাউড় রাজ্যের রাজধানী ও রাজবাড়ি ছিল। প্রাচীণ স্থাপত্যকীর্তির এই নিদর্শনের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান। প্রতœ অধিদপ্তরের ধারণা এখানে কয়েকটি সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। যা কয়েকটি যুগকে সমৃক্ত করেছে। এটির খননকাজ শেষ হলে ইতিহাসের নানা দিক উন্মোচিত হবে। লাউড় রাজ্য বা তার আগের রাজ্যের অনেক অজানা বিষয়ও উঠে আসবে। এতে দেশের ও স্থানীয় ইতিহাস সমৃদ্ধ হবে।
জানা গেছে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের এই কাজ গত ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান। প্রতœতত্ত্ব অধিপ্তরের গবেষক ড. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল খনন কাজ বাস্তবায়ন করছে। তারা টানা দুই মাস এখানে অবস্থান করে উৎখনন কাজ সম্পœন্ন করে প্রাথমিকভাবে চলে যাবে। পরবর্তীতে উৎখননে পাওয়া বিভিন্ন উপকরণ গবেষণা করে আরো কাজ করবে। ঐতিহাসিক এই স্থানটি সংরক্ষণের ব্যাপারেও উদ্যোগ নিবে তারা। জানা গেছে দীর্ঘ দিন ধরে একটি চক্র প্রাচীন সভ্যতার এই ধ্বংসাবশেষ নির্বিচারে ধ্বংস করছে। ঐতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শন চুরি করে পাচারও করেছে। এই চক্রই এখন খননের বিরোধিতা করছে।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওর্য়াড সদস্যসহ এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনুরাগীরা শুরু থেকেই খননে সহযোগিতা করে আসছেন বলে জানা গেছে। প্রতœ অধিদপ্তরের খননদলকে সহযোগিতা করায় কয়েক দিন আগে ইউপি সদস্য আব্দুর রউফকে গত ১৮ নভেম্বর একতা বাজারে লাঞ্চিত করে।
দুর্গ খননে বিরোধীতাকারী জুনাব আলী, ইদ্রিস আলী, নূর ইসলাম, ডা. মাসুক মিয়াসহ তাদের সহযোগি কিছু মানুষ তাকে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করে। এ ঘটনায় তিনি তাহিরপুর থানার একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে পুলিশ এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এই সুযোগে দখলবাজ চক্র খননের বিরোধিতা করে খননের বিরুদ্ধে নিজেদের লোক দিয়ে গতকাল বৃহষ্পতিবার মানববন্ধন করিয়ে হুমকি ধমকিও দিয়েছে।
হলহলিয়া গ্রামের আশরাফুল ইসলাম আকাশ স্থানীয় বনে, লাউড় রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন হাওলি প্রকৃতপক্ষে ছিলো রাজবাড়ি। এটি খনন করে জনসম্মুখে প্রকৃত ইতিহাস প্রকাশিত হলে এই এলাকার সুনাম বাড়বে। এই নির্দশন থেকে আমরা অনেক কিছুই জানতে ও শিখতে পারব। দেশের মানুষ আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে জানতে পারবে। এতে দেশের মানুষের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি বাড়বে। কিন্তু কিছু মানুষ না বুঝেই দখলবাজ চক্রের হয়ে খননের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা দিচ্ছে। যারা এই খনন কাজে বাঁধা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
নির্যাতিত ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, আমি সরকারি কাজে সহযোগিতা করায় দখলবাজরা আমাকে লাঞ্চিত করেছে। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বলেন, এই চক্র আমাদের ইতিহাস ও সভ্যতার শত্রু। এদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দন কান্তি ধর বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে লাউড় রাজ্যের হারানো ইতিহাস অনুসন্ধানে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর খননকাজ শুরু করেছে। এই কাজ সম্পন্ন হলে লাউড় সভ্যতার পাশাপাশি আরো পুরনো কোন সভ্যতার ইতিহাসও বেরিয়ে আসতে পারে। যা এই এলাকার অজানা ইতিহাসকে উন্মোচন করবে।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক ও খননদলের প্রধান ড. মুহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন দুর্গ খননের বিরোধিতা করছে কিছু লোক না বুঝেই। তিনি বলেন, এদের উচ্ছেদের কোন ইচ্ছেই সরকারের নেই। আমরা মূলত প্রাচীন যুগের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ইতিহাস উদঘাটনেই কাজ করছি। এই ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি রক্ষা করতে পারলে এলাকার মানুষই উপকৃত হবে। তিনি বলেন, বেশি বাধা দিলে অবশ্যই আমরা উর্ধ্বতন মহলকে অবগত করব।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুনামগঞ্জের এই ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ইতিহাস সংরক্ষণের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান। ২০১৭ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের দুজন শিক্ষক ও একদল শিক্ষার্থী গবেষক অধ্যাপক ড. অসিত বরণ পালের নেতৃত্বে হাওলি রাজবাড়ি সংরক্ষণ ও খননের লক্ষ্যে প্রাথমিক মাঠ জরিপ কার্য পরিচালনা