স্টাফ রিপোর্টার::
বাংলার জাগরণের কবি বাউল স¤্রাট শাহ আবদুল করিমের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সনের এই দিনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তী বাউল। মৃত্যুদিনে গানের এই মহাজনকে শ্রদ্ধায় স্মরণের উদ্যোগ নিয়েছেন ভক্ত-শীষ্যরা। দেশ বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভক্তকবৃন্দ আজ গানে গানে স্মরণ করবেন তাদের গানের গুরুকে। জাগরণের গানের জন্য তার ভক্ত-শীষ্যরা বাউল শাহ আবদুল করিমকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাউল মহাজন শাহ আবদুৃল করিমের সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বরাম হাওর ও কালনী নদী তীরবর্তী উজানধল গ্রামে ১৯১৬ সনের ফেব্রুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করেন। স্বশিক্ষিত এই শিল্পী হাজারেরও বেশি গণসঙ্গীত রচনা করেছেন। তাছাড়া, বাউল, মুর্শিদী, দেহতত্বসহ নানা ধরণের গান রচনা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওযয়ার্দী, মাওলানা ভাষানীসহ জাতীয় নেতাদের সমাবেশে জাগরণের গান গেয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার গান এই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। গানে গানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অভয় দিয়েছেন। তাছাড়াও বাঙালির বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। নব্বই দশকে তার জন্মভিটায় নিজের উদ্যোগে বাউল গানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য তার নিজ নামে ‘শাহ আবদুল করিম সঙ্গীতালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। একটি ভবন থাকলেও পৃষ্টপোষকতার অভাবে বিদ্যালয়টি চালু করা যায়নি। তবে তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে এই বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ভক্তশীষ্যরা জড়ো হয়ে তার রচিত গান পরিবেশন করেন। ভক্তবৃন্দ বাউলের একমাত্র স্বপ্নটি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।
দিরাই উপজেলার কলিকাপন গ্রামের বাউল মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ূম বলেন, শাহ আবদুল করিম মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য আমাকে উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন। আমার মতো অনেক যুবককে তিনি যুদ্ধে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশাতœবোধ নিয়ে তার বেশির ঘার গানই রচিত। আমি এই দেশপ্রেমিক ও জাগরণের মহাকবিকে রাস্ট্রীয় স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ তার গান একাত্তরে আমাদের পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রেরণা দিয়েছে।
শাহ আবদুল করিমের ভক্ত বাউল লাল শাহ বলেন, আমরা মুর্শিদ জ্ঞানে শাহ আবদুল করিমকে ভজন করেছি। দেশপ্রেমের পাঠ নিয়েছি তার কাছ থেকে। সব সময় তিনি দেশের স্বার্থকে আগে দেখেছেন। দেশকে ভালো বাসতেন বলেই বিলেতের হাতছানি উপেক্ষা করে অভাব-অবহেলায় নিজের গ্রামেই আমৃত্যু থেকেছেন। তার স্বপ্নের সঙ্গীতালয়টি চালু হলে নতুন প্রজন্মের বাউলরাও তার সৃষ্টি থেকে দেশপ্রেম রপ্ত করে দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে।
শাহ আবদুল করিমের পুত্র বাউল শাহ নূর জালাল বলেন, বাবার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার ভক্তবৃন্দ আসতে শুরু করেছেন। গানে গানে তাকে স্মরণ করবেন শীষ্যরা। এ উপলক্ষে পারিবারিক ও প্রশাসনিকভাবে বাউল স¤্রাটকে স্মরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।