বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে বিশেষ কোচিং এর মাধ্যমে কতিপয় কোচিংবাজ শিক্ষক আইনের ব্যত্যয় ঘটানোয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বরাবর চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। দুই স্কুলের কয়েকজন কোচিংবাজ শিক্ষক প্রতি বছর ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আবেগকে পুজি করে মোটা অংকের টাকা কামিয়ে নেন বলে অভিযোগ আছে। এবারও এই অভিযোগ ওঠায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতবছরও তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ পেয়েছিল প্রশাসন। পরে ওই কোচিংবাজ শিক্ষকরা প্রশাসনকে লিখিতভাবে আর কোচিং বাণিজ্য করবেনা বলে জানিয়েছিল। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই তারা আবার স্বরূপে ফিরেছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। সম্প্রতি আসন্ন ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে তারা একটি বিদ্যালয়ে আগাম পরীক্ষাও নিয়েছেন।
উল্লেখ্য মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরও গত বছর কোচিংবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে আবেদন করেছিলেন। ওই সময় তিনি জেলা প্রশাসকের দরোজায় অনশন করে জাতীয়ভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। পরে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন সারাদেশে কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছিল। এদিকে এই দুটি বিদ্যালয় ছাড়া অন্য স্কুল ও প্রতিষ্ঠানের কোচিংবাজদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন সচেতন মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে গত কয়েক বছর ধরে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ৩য় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং করানোর নামে বাণিজ্যে মেতে ওঠে। মওসুমি কোচিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী প্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন অভিযুক্ত শিক্ষকরা। জানা গেছে, প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় এ দুটি বিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। যার বেশিরভাগই দুটি প্রতিষ্ঠানের কোচিংবাজ শিক্ষকদের কাছে কোচিং করে থাকে।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের এই ভর্তি বাণিজ্য কোচিংয়ের বিষয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুটি বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে চিঠি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানিয়েছে প্রশাসন। তিনদিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে গত বছর তদন্ত কর্মকর্তা আক্তার জাহান সাথী দুটি বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। তদন্তে তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ থাকায় ওই বছর অভিযুক্ত শিক্ষকরা আর কোচিং বাণিজ্য করবেন না বলে প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। দুই বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন ও নিখিল দেবনাথ এবং সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন মো. আমিনুল ইসলাম ও ওবায়দুল কিবরিয়া। তবে তারা বরাবরই কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, গত বছর সারাদেশের কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আমি অনশন করেছিলাম। পরে দুদক এই ঘটনার পরে সারাদেশে মানবন্ধন করেছিল। এ নিয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগেও বৈঠক করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। আমি পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে লিখিত চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কোচিং বাণিজ্য চলছেই।
সুনামগঞ্জ সরকারি এসসি গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মোহাম্মদ মশহুদ চৌধুরী বলেন, প্রশাসন একটি চিঠি দিয়ে আমাদের দুটি স্কুলের শিক্ষকরা মওসুমি কোচিংয়ে জড়িত কি না জানতে চেয়েছেন। আমার এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইটি শফিউর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
(সৌজন্য: দৈনিক সুনামকণ্ঠ)