তৌহিদ চৌধুরী::
অন্তর্জাতিক রামসার ভুক্ত জীববৈচিত্রের অনন্য জলাভুমি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া হাওরকে দেশ-বিদেশে পর্যটন এলাকা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ও হাওরে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলার দাবীতে শুক্রবার থেকে ২দিন ব্যাপী জল-জোছনা উৎসব সমাপ্ত হয়েছে। শনিবার তাহিরপুরের রূপের নদী যাদুকাটায় এসে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের শেষ হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, টাঙ্গুয়া হাওর ইকোট্যুরিজম ধারনা এসছে মুলত: টাঙ্গুয়া হাওর কে ঘিরে বিচিত্র সৌন্দর্য সমাবেশের জন্য। এ হাওর এশিয়ার সর্ব বৃহত জলাশয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার এলাকা। অতিথি পাখি-মাছ, সোয়াম ফরেস্ট এর জন্য বিখ্যাত। টাঙ্গুয়া হাওরের উত্তর সীমানা জুড়ে মেঘালয়ের পাহাড়, বাগলি, টেকের ঘাটের পরিত্রক্ত চুনাপাথর প্রকল্প, ৫ কিলো মিটার দুরে বড়গোপটিলা, যাদুকাটা নদী, পাহাড়ে শাহ আরেফিন (র:) মাজার, রাজার গাঁও এর অদৈত আশ্রম ও ইসকন মন্দির আস্থিত। বিলুপ্ত লাউড় রাজ্যের ধংসাবশেষ এবং ঐতিহ্য খুজে পাওয়া যায়। টাঙ্গুয়া হাওরের চারপাশে ইকোসিস্টেম অপূর্ব সৌন্দর্যের হাতছানি। রুপের রাণী যাদুকাটা নদীর অগভীর স্বচ্ছ শলিল চলন্ত প্রবাহমান সুইমিং পোল দেকতে খুবই আকর্ষনীয়। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে হাওরের নীলজলে প্রকৃতি প্রেমীরা ভর পূর্ণিমায় দুই দিন ব্যাপী জোছনা উৎসব পালন করেছেন। পাহাড়ের পাদদেশে বারেক টিলা, রুপের রানী যাদুকাট নদী দর্শন করে বিশাল নৌ-বিহার শেষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রকৃতি প্রেমীরা মিলিত হন টাঙ্গুয়া হাওরে রৌয়ার বিলের ভাসমান মঞ্চে। শেষ বিকেলে সুর্যাস্তের পর-পরই সন্ধ্যার আকাশে যখন চাঁদ উকি দেয়, তখন ভর জোছনার ¯িœগ্ধ আলোয় মরমী শিল্পী হাছন রাজা, রাধারমন আর বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিমের হ্ণদয় তোলপার করা গান-গানে আর আদি বাসী শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর নৃত্যে যেন আলোকিত হয়ে হয়ে উঠে টাঙ্গুয়া হাওরের রুপালী জল। বিলের মাঝ খানে কয়েকটি ভাল্কহেডকে (ষ্টীল বাডির নৌকা) মঞ্চ তৈরী করে ভিন্ন লাইটিংয়ে সুজজ্জিত করে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। স্থানীয় শিল্পী মো: আশিক, শাহানাজ বেলী, রাকিবা ইসলাম ঐশী আঞ্চলিক গান পরিবেশন করে শ্রোতাদের মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। আঞ্চলিক মরমী ও বাউল গানের মনোমুগ্ধকর সুরের ইন্দ্রজালে মঞ্চের চারি পাশ ঘিরে থাকা শতাধিক বড় নৌকায় হাজার হাজার পর্যটক-দর্শকদের আনন্দের তুফান ওঠে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শাহানা রব্বানী, সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন, পুলিশ সুপার মো: হারুন অর রশিদ, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল। এছাড়া ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, মংমনসিংহ, সিলেট’র পর্যটকবৃন্দসহ স্থানীয় সুধীজন বিভিন্ন এলাকার সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত হাওরের হিজল-করচ বাগ, মেঘালয়ের সীন্তে ঘেষা হাওর ভ্রমন, ঘন সবুজ টিলা, বড়গোপ টিলা প্রদর্শন করেন পর্যটকরা। হাজার বছর ধরে বসবাসকারী আধিবাসী জনগোষ্টি তাদের ঐতিয্যবাহি নানান পর্ব প্রদর্শন করেন পর্যটকদের সামনে। এই উৎসবকে ঘিরে পুরো উপজেলা ও আশপাশের উপজেলাগুলোতেও উসবের আমেজ ছিল। শনিবার তাহিরপুরের সীমান্ত নদী যাদুকাটার তীরে এসে উৎসবের শেষ হয়।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, টাঙ্গুয়া হাওরের বিশাল নৌ-বহরে রাতে জোছনা উৎসব উদয়াপনের পাশাপশি দিন ভর হারের বৈচিত্রময় সুন্দর ষ্পট গুলো ও লুকিয়ে থাক রুপময় বৈচিত্রের সঙ্গে পরিচিত হবেন ভ্রমনার্থীরা। টাঙ্গুয়া হাওর পাড়ে অবস্থিত হাওর রাজ্যের রাজমহল খ্যাত জমিদার বাড়িগুলো দেখতে পারবেন পর্যটকরা।