বিশেষ প্রতিনিধি ::
গত ১৩ বছর ধরে টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি উঠেছে সুনামগঞ্জের সুধীজনের পক্ষ থেকে। ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা অনন্য এই প্রাকৃতিক জলাভূমি সংরক্ষণের নামে প্রকৃতি বিনাশ করার বিচারের দাবি উঠেছে। ক্ষুব্ধ সুধীজন জানান, ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতরা সরকারি ও দাতাদের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। এখন তারা হাওরকে বিরান করে সটকে পড়ার ফন্দি করছেন।
টাঙ্গুয়ার হাওরে হাজারো পর্যটকের উপস্থিতিতে জ্যোৎ¯œা উৎসব পালন শেষে গতকাল রোববার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজকরা মতবিনিময় সভা করেছেন। এই মতবিনিময় সভায় সুনামগঞ্জের অনেক ক্ষুব্ধ সাংবাদিক ব্যবস্থাপনার নামে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করায় দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দাবি জানান।
জানা গেছে, অনন্য প্রাকৃতিক জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর ১৯৯৯ সনে ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণার পর ২০০০ সনে রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়। এরপরই দেশ বিদেশের জীববৈচিত্র্য গবেষক ও পর্যটকদের দৃষ্টি পড়ে এই হাওরের দিকে। সরকারের ভূমি এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে হাওরের দেখভালের দায়িত্ব পায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। ২০০৩ সন থেকে সরকার ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠন আইইউসিএন হাওরের জীব-বৈচিত্র্য পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ‘টাঙ্গুয়ার হাওর কো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে প্রকল্প গ্রহণ করে। এ পর্যন্ত এই প্রকল্পে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারণা চালানো হলেও গত ১৩ বছরে এই হাওরে জীব-বৈচিত্র্য নির্বিচারে ধ্বংস হয়েছে। হাওরে পাখি, মাছ, গাছ কমেছে। রামসার নীতি ভঙ্গ করে স্থানীয় মানুষের জীবিকার উপর আঘাত করা হয়েছে। চলতি বছর ব্যবস্থাপনার তৃতীয় পর্যায় শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা তৃতীয় পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে কয়েক মাস আগে শিল্পকলা একাডেমিতে সুধী সমাবেশ করলে সুধীজন ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ও দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। প্রকৃতি সংরক্ষণের নামে হাওরের জীব-বৈচিত্র্য বিনাশ হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন। এভাবে বিভিন্ন ফোরামে হাওর সংরক্ষণে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার নাম রক্ষকরাই ভক্ষক সেজেছিলেন। তাই এই জেলার পরিবেশবাদী ও সুধীজনরা এই প্রকল্পের দুর্নীতি-অনিয়মের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে স্থানীয়ভাবে আন্দোলনের দাবি জানিয়েছেন।
আইইউসিএন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের নামে বরাদ্দ লোপাট করার পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র ধ্বংস করে হাওরকে বিরান করা হয়েছে বলে সুধীজন মনে করেন।
রোববার শহরের কাজীর পয়েন্টের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক মাছুম হেলাল বলেন, গত ১৩ বছর ধরে টাঙ্গুয়ার হাওরে ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতরা অবাধে লুটপাট করেছে। হাওরের পরিবেশ বিনাশ করায় তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদিক এমরানুল হক চৌধুরী বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর গত ১৩ বছরে বিরানে পরিণত করা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিরা নাখোশ হবেন এই ভয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে ছিলেন। এখন জোছনা উৎসব করায় তারা পরিবেশ ধ্বংসের নাম করে মাতম শুরু করেছেন।
সিনিয়র সাংবাদিক লতিফুর রহমান রাজু বলেন, গত ১৩ বছরে টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষণাবেক্ষণের নামে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। সময় এসেছে এই অনন্য জলাভূমির পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, রামসার নীতিমালা বাস্তবায়ন ও পরিবেশ রক্ষার সরকার ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলেও এটি অব্যস্থাপনায় পরিণত হয়। অব্যবস্থাপনার কারণে হাওরে মাছ, গাছ, পাখি কমেছে। স্থানীয় মানুষের জীবিকার উপর আঘাত করা হয়েছে।