বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি তার জন্ম এলাকা দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাগলাবাজারে শেষ নির্বাচনী জনসভা করেছেন। শেষ জনসভায় নির্বাচনী এলাকা থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে এসেছিলেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। বুধবার বিকেলে পাগলা সরকারি হাইস্কুল মাঠের এই সভায় ঢল নেমেছিল আপামর মানুষের। নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও উপস্থিত হয়েছিলেন উন্নয়নের এই বরপুত্রের মুখ থেকে আগামীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি শুনতে। তিনি উপস্থিত জনতাকে তার স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকারগুলোর বর্ণনা করেছেন একে একে। উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এমএ মান্নান দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার তার শেষ নির্বাচনী সমাবেশে প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য রাখেন। আগামীর স্বপ্নপূরণের উল্লেখ করে সরকারের সাফল্য ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় আবারো হাওরবাসীকে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান। ‘শেখ হাসিনাকে বাঘের বাচ্চা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দুর্নীতি করেনা। জনগণের আমানত খেয়ানত করেনা। তাই তিনি নির্বাচিত হলে এই এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে টাকার কোন সমস্যা হবেনা বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
আগামীতে এমএ মান্নান নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচনী এলাকার আর্ত সামাজিক উন্নয়নে কী কী স্বপ্নপূরণ করবেন তার অঙ্গীকার করেন তিনি। তার প্রতিটি স্বপ্নের বর্ণনার সময় মুহুর্মুহু হাততালি দিয়ে তাকে সমর্থন জানান উপস্থিত জনতা। তারা এমএ মান্নানের নামে স্লোগান দিয়ে তার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানান।
এমএ মান্নান তার গ্রামের বাড়িতে সাধারণ মানুষের অবাধ অগ্রাধিকারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমি সব সময়ই মানুষের সঙ্গে ছিলাম। তাই মন্ত্রী হিসেবেও স্থানীয়ভাবে সরকারি সুবিদা নেইনি। সার্বক্ষণিক গ্রামের বাড়িতেই অবস্থান করেছি। আমার বাড়ির প্রতিটি ঘর, দরোজা, জানালা, চেয়ার টেবিল আমি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দিয়েছিলাম। তাদের কথা শুনেছি মন দিয়ে। আমি তাদেরকে দেওয়া ওয়াদা রক্ষা করেছি।
শেখ হাসিনার একজন বিশ্বস্থ সহকর্মী হিসেবে এলাকার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারায় সরকার ও শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে এলাকার উন্নয়ন করার সকল সুযোগ-সুবিদা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আমি সততার সঙ্গে তার কার্যক্রম গুলো বাস্তবায়ন করেছি। তিনি বলেন, আমার নেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় আমাকে হাওরবাসীর জন্য কাজ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি আমাকে প্রায়ই বলতে আপনি হাওরে সন্তান। হাওরবাসীর সুখ দুখ বুঝেন। হাওরের মানুষ কষ্টে আছে। হাওরের মানুষের সার্বিক উপকার হয় এমন প্রকল্প নিয়ে আসেন। আমি আপনাকে সাহায্য করব। হাওরবাসীর উন্নয়নে আপনাকে সহযোগিতা করব। নেত্রীর কাছে যতবার হাওরের প্রকল্প নিয়ে গিয়েছি ততবারই তিনি সেগুলো অনুমোদন দিয়েছেন। আমাকে নিরাশ করেননি।
সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এমএ মান্নান বলেন, আগামীতে আমি নির্বাচিত হয়ে কি কি করব, আজ সেই অপূর্ণ স্বপ্নগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। আশা করি আপনাদের সন্তান হিসেবে আমাকে আবারো সমর্থন দিবেন।
তিনি বলেন, আমি প্রথমেই স্বপ্ন দেখি এই জেলায় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। এ বিষয়ে আমি আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাদের বলেছি আমার হাওরের ছেলেদের, বিজ্ঞানী, গবেষক এবং বড় শিক্ষক করতে চাই। বিজ্ঞান কাউন্সিলের সভাপতি ও আমার সিনিয়র শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ আমার এই স্বপ্নপূরণের অঙ্গিকার করেছেন। আগামীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের এই স্বপ্ন পূরণের কাজ শুরু করব। আমার বিশ্বাস প্রথম দিকেই আমাদের সরকার এই কাজ শুরু করবে।
দ্বিতীয় স্বপ্নপূরণ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বঙ্গবন্ধু সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ অনুমোদনের স্বপ্ন ইতোমধ্যে বাস্তবায়নের পথে। ডাক্তার, নার্স, স্টাফসহ মেডিকেলের জায়গার হুকুম দখলের কাজ শেষ করেছি। আশা করি আগামী এক বছরে মধ্যেই শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করব। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা পাঠে যেতে পারবে আগামী বছরেই।
তিনি বলেন, আমার পরিকল্পনা ছিল একটি টেক্সটাইল কলেজের। আমরা এটার কাজ শুর করেছি। আগামীতে এটাকে পূর্ণাঙ্গ কলেজে রূপান্তর করতে চাই আমরা। সেই স্বপ্ন আমি দেখছি।
আমাদের সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক বড় করার কাজ শুরু করেছি। আশা করি আগামীতে এটিকে মহাসড়কে পরিণত করতে পারব। কুশিয়ারা নদীতে রাণীগঞ্জ সেতুর কাজ শেষ করে জগন্নাথপুর-আউশকান্দি সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে পরিণত করা হবে। যাতে আমাদের হাওর-ভাটির মানুষেরা ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারেন। তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সব পুরনো ও মান্দাতা আমলের সেতু ভেঙ্গে আধুনিক সেতু করা হবে। আগামীতেই এই কাজ শুরু করব আমরা।
রেললাইন সম্প্রসারণ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার পরিকল্পনা ছাতক থেকে সুনামগঞ্জে রেললাইন নিয়ে আসার। এই প্রকল্পে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গ্রীণ সিগনাল পেয়েছি। আশা করি আগামী বছরেই একনেকে এই প্রকল্পটি নিয়ে যেতে পারব। তিনি বলেন, এটা শেষ হলেই সুনামগঞ্জ মোহনগঞ্জ রেললাই সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেব। সুনামগঞ্জ ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকার সঙ্গে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেব। আমি বেঁচে থাকলে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে, সুনামগঞ্জ থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত সড়ক নিয়ে যাব। যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম সুনামগঞ্জ-ময়মনসিংহ হয়ে বিকল্প সড়কে ঢাকা যেতে পারে।
নারীশিক্ষা সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান আরো বলেন, আমার স্বপ্ন আগামীতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুরে মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করার। একই সঙ্গে এই দুটি কাজ করে আমি নারীশিক্ষার পথ সুগম করতে চাই। তিনি কৃষির উন্নয়নে আধুনিক একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণের স্বপ্নের কথা কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি জগন্নাথপুরে পূর্ণাঙ্গ কৃষি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার। যেখানে কৃষি নিয়ে গবেষণা হবে। জগন্নাথপুরে আধুনিক পৌর হাসপাতাল নির্মাণের স্বপ্ন দেখছি আমি। জগন্নাথপুরের সিলেট ও সুনামগঞ্জের সঙ্গে যত সড়ক আছে সবগুলো সড়ক আধুনিক ও প্রশস্থ করা হবে।
এসব স্বপ্নের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে শেখ হাসিনা সরকারের টাকার কোন সমস্যা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মানুষের সম্পদ সুরক্ষা করেন। আমি আপনার সন্তান হিসেবে গত ৫ বছর শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করেছি। সেটা কাছ থেকে দেখছি। আমার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে টাকা কোন সমস্যা নয়।
আগামীতে আ.লীগের সরকার গঠনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা হাওরের দুর্যোগে আমাদের পাশে ছিলেন। পুরো এক বছরেরও বেশি আমাদের খাইয়েছেন। তাই আমাদের দায়িত্ব আবারও তাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার। তিনি বলেন, সময় এখন বাংলাদেশের। সারা বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পক্ষে। তাই আগামীতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকেই দেশবাসী ও হাওরবাসী নির্বাচিত করবেন এটা আমার বিশ্বাস। তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তোমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছেন। তোমাদের উচিত তার সম্মান রক্ষা করা। তাই আগামী ৩০ ডিসেম্বর নৌকায় ভোট দিয়ে কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশের তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উপস্থিত সমাবেশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আপনাদের ছেলে। হাওরের ছেলে হিসেবে ওয়াদা করছি যতদিন বাঁচি আপনাদের সঙ্গেই থাকব। আপনাদেরই সেবা করে যাব।
নৌকায় ভোট দিন/উন্নয়ন বুঝে নিন বলে তিনি তার ৩০ মিনিটের বক্তব্য শেষ করেন।