বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ জেলার অর্পিত সম্পত্তি দখলদারদের মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন দিন ধরে একটি চক্র জেলার ২৪২১৫.৫৮১ একর মূল্যবান ভূমি অবৈধ দখলে রেখেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের গত আমলে অর্পিত সম্পত্তি আইন সংশোধন করার ফলে এর প্রকৃত মালিকরা ভূমির মালিকানা চেয়ে আদালতে মামলা করেন। এসব মামলা এখন বিচারাধীন। সম্প্রতি সুনামগঞ্জ শহরের হাসপাতাল এলাকার ১ একর ৬০ শতক ভূমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করায় অন্যরাও এখন আতঙ্কে রয়েছে। জানা গেছে অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন পাশ হবার পর সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায় ৫ হাজার মামলা হয়েছিল। এসব মামলা এখন বিচারাধীন রয়েছে। মামলার রায় পেলে এভাবে প্রশাসন তাদেরও সম্পত্তি বুঝিয়ে দিবে বলে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে জেলায় মোট অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২৪২১৫.৫৮১ একর। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে ৯৮৪৪.৫৮৪৩ একর ভূমি। প্রায় ১৪ হাজার একর ভূমি বেদখল রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা শহরের কালিবাড়ি এলাকা, শহরের জামাইপাড়া, হাসপাতাল এলাকাসহ জেলা শহরেই প্রায় ১০ একর অর্পিত সম্পত্তি বন্দোবস্ত ছাড়াই প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলাতেই কমবেশি অর্পিত সম্পত্তি রয়েছে। বন্দোবস্ত ছাড়াও অনেক মূল্যবা ভূমি প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে আছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ পৌরসভায় ৬৫.১৩ একর অর্পিত সম্পত্তির মধ্যে ৪৩.৭১২ একর ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলায় ৬৬৯.২০ একরের মধ্যে ৫৩২.৬৬৮৩ একর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৬৬৯.১১ একরের মধ্যে ১৮২.৫৮ একর, ছাতকে ৩৯০৮.৩২১ একরের মধ্যে ১৩৪২.৪৮২৩ একর, জগন্নাথপুরে ৩৮৩.৮৬ একরের মধ্যে ১২৭৪.০৬ একর, দিরাইয়ে ১২৪৬.০৬ একরের মধ্যে ৩১৯.৫৩ একর, শাল্লায় ৭১০.১৫ একরের মধ্যে ৪৩০.৭১ একর, জামালগঞ্জে ২১০২. ০৩ একরের মধ্যে ৪৭২.০১ একর, ধরমাশায় ৩০৪৭একরের মধ্যে ৯৫০.৪৫২ একর, তাহিরপুরে ১৭৭৮.৭৬ একরের মধ্যে ১৯৪.০৯৬৫ একর, বিশ্বম্ভরপুরে ১৩১৬.৪৬ একরের মধ্যে ৬০৭.১৯ একর, দোয়ারাবাজারে ৫৯১৯.৫০ একরের মধ্যে ৩৪৯৪.৬০ একর ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তবে যেসব ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে সেসব ভূমি বন্দোবস্তের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
জানা গেছে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে হাসপাতাল এলাকায় দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের সাবেক চিত্তরঞ্জন রায় চৌধুরী আদালতের আদেশে তার বেদখল হওয়া ভূমি ফেরত পেয়েছেন। গত বুধবার প্রশাসন তার সম্পত্তি থেকে দখলদারদের স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে তাকে দখল বুঝিয়ে দিয়েছে। পৌর এলাকার ১১৫ নং জেএলস্থ ৯৯ নং খতিয়ানের ১১১, ১১২ দাগের ১ একর ৬০ শতক ভূমি প্রত্যর্পন মোকদ্দমার রায় বহাল রেখে গত বছরের জুলাই মাসে প্রশাসনকে প্রকৃত মালিককে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। গত বুধবার সুনামগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুন খন্দকার সুপ্রীম কোর্ট রীট পিটিশন ৯৪৫০/১৪, ৩০-০৪-১৫ আদেশ ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন মোকদ্দমা ৩/২০১২ এর আদেশ বলে দখলদারদের উচ্ছেদ করেন।
অন্যদিকে জেলা শহরের প্রায় ১০ কোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দেওয়ার পর অন্য দখলদার ও বন্দোবস্তকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। যারা প্রকৃত মালিক তারাও এখন নড়েচড়ে বসেছেন। নিজেদের সম্পত্তি উদ্ধারে তারাও তৎপরতা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জের সরকারি কৌসুলি অ্যাডভোকেট মর্তুজা আলী বলেন, অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন পাশের পর ২০১২ সনে সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায় ৫ হাজার মামলা হয়েছে। প্রকৃত মালিকরা তাদের সম্পত্তি বুঝে পেতে এই মামলা দায়ের করেন। মামলার রায় তাদের পক্ষে গেলে প্রশাসন তাদেরও সম্পত্তি দখল বুঝিয়ে দেবে।