হাওর ডেস্ক::
২০১৯ সালে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। এ তালিকায় বাংলাদেশ গত এক বছরে দুই ধাপ এগিয়েছে।
আর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এই ধারাবাহিকতায় ২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৪তম স্থান দখল করে বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় প্রবেশ করবে। প্রায় একই সময়ের মধ্যে (২০৩২ সালে) যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ঠেলে দিয়ে চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। তখন প্রতিবেশী ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। লন্ডনে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লীগ টেবিল ২০১৯ প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, একুশ শতক হবে এশীয় শতক।
সিইবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি ২০১৯ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকার শীর্ষ পাঁচে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারত। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম, চীন দ্বিতীয়, জাপান তৃতীয়, জার্মানি চতুর্থ ও ভারত পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, এশিয়ার অন্য অনেক দেশের মতো আগামী ১৫ বছরে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে বাংলাদেশের। গত এক বছরে বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লীগ টেবিলের ৪৩তম স্থান থেকে ৪১তম স্থানে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, এই ১৫ বছরে বাংলাদেশ ১৯ ধাপ এগিয়ে যাবে। সে হিসাবে ২০২৩ সালে ৩৬তম, ২০২৮ সালে ২৭তম এবং ২০৩৩ সালে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
গত বছরের শেষ দিকে প্রকাশিত সিইবিআর প্রতিবেদনের দশম সংস্করণে বলা হয়, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, ২০১৮ থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার হবে ৭ শতাংশ। এর ফলে দেশটি ১৯ ধাপ এগিয়ে ২০৩৩ সালে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশের জায়গা নেবে। ’
প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষণে বলা হয়, তৈরি পোশাক রপ্তানি, শক্তিশালী রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, ভারতীয় বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় ও সরকারি ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ উপকৃত হচ্ছে। প্রায় ৪৩ শতাংশ বাংলাদেশি কৃষিকর্মের সঙ্গে যুক্ত, যাদের বেশির ভাগই ধান ও পাট উত্পাদন করে থাকে। এ ছাড়া দেশে ভুট্টা, শাকসবজি ও গমের উত্পাদনও দেশটির উন্নতিতে ভূমিকা রাখছে। তবে আমদানির হার বেশি থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের সফলতা নিয়ে ঝুঁকিও দেখছে সিইবিআর। অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন ও রাজস্ব বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সরকারকে নতুন নতুন খাতের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কেননা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট আরো গুরুতর আকার ধারণ করছে।
সিইবিআরের পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০৩৩ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে চীন প্রথম, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয়, জাপানকে পেছনে ফেলে ভারত তৃতীয়, জাপান চতুর্থ স্থানে এবং জার্মানি এক ধাপ পিছিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠে আসবে।
এই ১৫ বছরে এশিয়ার অন্যান্য দেশেরও অর্থনৈতিক উত্থান ঘটবে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় তখন দক্ষিণ কোরিয়া দশম, ইন্দোনেশিয়া ১২তম, থাইল্যান্ড ২১তম, ফিলিপাইন ২২তম এবং মালয়েশিয়া ২৫তম (বাংলাদেশ থেকে এক ধাপ পেছনে) স্থানে উঠে আসবে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তান এক বছরে দুই ধাপ পিছিয়ে এবার ৪৪তম স্থানে অবস্থান করছে। আগামী ১৫ বছরে পাকিস্তানেরও উন্নয়ন ঘটবে। দেশটি এ সময়ের মধ্যে ২৭তম স্থানে উঠে আসবে। তালিকায় ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা ৬৬তম, আফগানিস্তান ১১৫তম, ভুটান ১৬৬তম এবং নেপাল ১০১তম স্থানে রয়েছে।