স্টাফ রিপোর্টার:
শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যান্য জেলার চেয়ে পিছিয়ে পড়া সুনামগঞ্জের একমাত্র ইংরেজী মাধ্যম বিদ্যালয় বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে ইংরেজী মাধ্যম বন্ধ করে বাংলা মাধ্যমে চালু করায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিয়াম স্কুলে ইংরেজী মাধ্যম চালু রাখার দাবী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সচেতন মহলের। জানা যায়, সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান সাবেক সচিব,পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় শহরের কাজির পয়েন্টে সরকারী পরিত্যক্ত একটি বাড়ীতে জেলার একমাত্র ইংরেজী মাধ্যমের বিদ্যালয়টি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টির ভাগ্যের পরিবর্তনে জন্য বিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে হাটি হাটি পা পা করে ১০টি বছর পার করে ১১ বছরে পর্দাপন করে। ইতিমধ্যে এ বিদ্যালয় থেকে অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হয়ে ভাল রেজাল্ট করেছে। বিদ্যালয় পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা ও কিছু শিক্ষকের ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে বিদ্যালয়টি এখন ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে চয়ে গেছে। শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা করে অন্যত্র ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত ডিসেম্বর মাসে বিদ্যালয়ে ইংরেজী মাধ্যমের পাশাপাশি বাংলা মাধ্যম চালু করার জন্য অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জানানো হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার ৬ষ্ট,৭ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ইংরেজী মাধ্যমের বই বিতরণ না করে বাংলা মাধ্যমের বইশিক্ষার্থীদের হাতে বাধ্যতামুলকভাবে তুলে দেয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা বাংলা মাধ্যমের বই না নিয়ে স্ব স্ব অভিভাবকদের বিভিন্ন মোবাইল ফোনে অবহিত করেন এবং বিদ্যালয়ে আসতে বলে। অনেক অভিভাবক বিদ্যালয়ে এসে প্রিন্সিপাল জান্নাতুল ফেরদৌসের কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি বলে দেন, ৬ষ্ট ও ৭ম শ্রেনীতে ইংরেজী মাধ্যমে পড়ানো হবে না। তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় তারা বাংলা মাধ্যমে পড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন। কিন্তু কোন অভিভাবককে তা জানানো হয়নি বলে উপস্থিত অভিভাবকরা অভিযোগ করেন। কোন উপায় না দেখে জেলা প্রশাসক মো: আব্দুল আহাদ এর স্মরণাপন্ন হলে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও প্রযুক্তি) শরিফুল ইসলাম অভিভাবকদের আশ্বস্থ করেন এবং আগামী ২০ জানুয়ারী গণশুনাণীর মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
৭ম শ্রেনীতে পড়–য়া শিক্ষার্থী তাবাসুম এর অভিভাবক মমতাজ বেগম জানান, গত ৯ বছর যাবৎ আমার মেয়েকে ইংরেজী মাধ্যমে পড়াচ্ছি। হঠাৎ করে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ইংরেজী ভার্সন বন্ধ করে বাংলা মাধ্যম চালু করেছেন। এ নিয়ে কখনও আমাদের সাথে আলোচনা কিংবা পরামর্শ করেননি তিনি। গত ডিসেম্বর মাসে শহরের প্রত্যেকটি ভাল স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বর্তমানে আমরা কোথায় তাদেরকে নিয়ে যাব। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে একটি সুন্দর প্রতিষ্ঠান ধ্বংশ করে দিচ্ছে। আমরা চাই এ বিদ্যালয়ে ১০ শ্রেনী পর্যন্ত ইংরেজী ভার্সন চালু থাকুক এবং সুনামগঞ্জের শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখুক।
অভিভাবক সাইফুল ইসলাম জানান, শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া সুনামগঞ্জ জেলার একমাত্র ইংরেজী মাধ্যম বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলটি হঠাৎ করে ৬ষ্ট,৭ম শ্রেনীতে বাংলা মাধ্যম চালু করেছে। আর ইংরেজী মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যারা ইংরেজী মাধ্যমে ৫ম শ্রেনী পাশ করেছে তারা এখন বাংলা মাধ্যমে কিভাবে পড়াশুনা করবে? আগে থেকে জানানো হলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভাল কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারত। আমরা চাই বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে ইংরেজী মাধ্যমে চালু থাকুক। প্রয়োজেন ইংরেজী মাধ্যমের পাশাপাশি বাংলা মাধ্যমে চালু করা যেতে পারে।
অভিভাবক ও গণমাধ্যম কর্মী মাহতাব উদ্দিন তালুকদার জানান, সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান সাবেক সচিব বর্তমানে পিএসসি’র চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক সাহেবের প্রচেস্টায় সুনামগঞ্জের বিয়াম ফাউন্ডেশন কর্তৃক জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে বিদ্যালয়টি ২০০৮ সালে চালু হয়েছিল। অনেক শিক্ষার্থী ভাল ভাল প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে অধ্যায়ন চালিয়ে যাচ্ছে। আমার দুটি সন্তান একজন ক্লাস ফোরে আরেকজন ৭ম শ্রেনীতে পড়াশুনা করছে। ৭ম শ্রেনীতে হঠাৎ করে ইংরেজী মাধ্যম বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছি। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংশের জন্য বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক প্রিন্সিপালকে অসৎ পরামর্শ দিয়ে একাজটি করাচ্ছেন। আমরা চাই জেলার একমাত্র ইংরেজী মাধ্যম বিদ্যালয়টি ১০ শ্রেনী পর্যন্ত চালু থাকুক। বাংলা মাধ্যমে এত টাকা দিয়ে কোন অভিভাবকই এ বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদের পড়াবেন না। এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষে তালাবদ্ধ করে প্রাইভেট পড়িয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। এটা বন্ধ করা হউক। যারা প্রাইভেট পড়ানোর সাথে জড়িত তাদেরকে চাকুরীচ্যুত করে মেধাবী ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে বিদ্যালয়ের বেহাল দশা থাকবে না। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো: আব্দুল আহাদ জানান, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কল্যানে যা যা করা দরকার তাই করা হবে। প্রিন্সিপাল নিজের খেয়ালখুশিমত বিদ্যালয় চালাতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পিএসসি’র চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক জানান, বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের সাথে কথা হয়েছে, এটাতে ইংরেজী মাধ্যমেই শিক্ষা কর্যাক্রম চালু থাকবে। জেলা প্রশাসকের সাথেও বিষয়টি নিয়ে আমি আলোচনা করব। আপনারা জেলা প্রশাসক ও বিয়াম ফাউন্ডেশনের ডিজিকে লিখিতভাবে অভিযোগ করুন।